যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় হেপাটাইটিস এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘দূষিত অর্গানিক স্ট্রবেরি’ থেকে এ রোগ ছড়িয়ে থাকতে পারে।
স্থানীয় সময় শনিবার (২৮ মে) গভীর রাতে মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) এক বিবৃতিতে জানায়, যেসব স্ট্রবেরি থেকে হেপাটাইটিস এ ছড়িয়ে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, সেগুলো গত ৫ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে ফ্রেশক্যাম্পো বা এইচইবি ব্র্যান্ড নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হয়। খবর আল-জাজিরার।
যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত ১৭ জনের দেহে হেপাটাইটিস এ শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ১২ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আক্রান্তদের ১৫ জনই ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা। এ ছাড়া কানাডায় ১০ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে চারজন আলবার্টা এবং ছয়জন সাসকাচুয়ানের বাসিন্দা।
এফডিএ বলছে, ট্রেডার জো এবং ওয়ালমার্টসহ যুক্তরাষ্ট্রের কমপক্ষে নয়টি সুপারশপে ফলটি বিক্রি হয়েছিল। অন্যদিকে কানাডার পাবলিক হেলথ এজেন্সি (পিএইচএসি) জানায়, স্ট্রবেরিগুলো সাসকাচুয়ান ও আলবার্টার দোকানগুলোতে ৫ থেকে ৯ মার্চের মধ্যে বিক্রি হয়।
এফডিএ’র এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যারা তাজা স্ট্রবেরি কিনেছেন এবং পরে খাওয়ার জন্য ফ্রিজে রেখেছেন, তাদের উচিত সেগুলো ছুড়ে ফেলা দেয়া।’
এদিকে করোনা মহামারি পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠার আগেই সম্প্রতি নতুন করে আতঙ্ক ছড়াতে শুরু করেছে মাঙ্কিপক্স। এর মধ্যেই সম্প্রতি বিশ্বের ৩৩টি দেশে শনাক্ত হয় ‘অজানা’ হেপাটাইটিস। এ পর্যন্ত ৬৩০ শিশুর দেহে এ রোগটি ধরা পড়েছে বলে সম্প্রতি জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তবে রোগটি আসলেই হেপাটাইটিস কিনা, তা নিশ্চিতে গবেষণা চলছে বলেও জানায় সংস্থাটি।
গুরুতর ও তীব্র এই ভাইরাসকে কখনো ‘অ্যাকিউট হেপাটাইটিস’, আবার কখনো ‘অজানা হেপাটাইটিস’ বলে ডাকা হচ্ছে। এটি মূলত লিভারের প্রদাহ, যা ধীরে ধীরে লিভারকে অচল করে দিতে পারে। গত ২৩ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রথম ‘অজানা হেপাটাইটিস’ রোগের কথা জানায়।
ডব্লিউএইচও বলছে, গত ৫ এপ্রিল থেকে ২৬ মে পর্যন্ত ৩৩টি দেশে অজানা এই হেপাটাইটিসে আক্রান্ত ৬৫০ রোগী শনাক্ত হয়েছে। রোগটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে ইউরোপীয় অঞ্চলে। এ পর্যন্ত ইউরোপের ২২টি দেশে ৩৭৪ জনের শরীরে এ রোগ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু যুক্তরাজ্যেই শনাক্ত হয়েছে ২২২ জন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে অজানা হেপাটাইটিস রোগীর সংখ্যা রহস্যজনকভাবে বাড়ছে। এ পর্যন্ত এ রোগে অন্তত ৯ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
অন্যদিকে মার্কিন স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের দাবি, সাম্প্রতিক এই হেপাটাইটিসের উৎস হতে পারে ‘অ্যাডেনো ভাইরাস’। এটি খুব সাধারণ একটি ভাইরাস, যা শিশুদের মধ্যে প্রায়ই দেখা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) জানায়, নতুন এ রোগ ছড়ানোর পেছনে করোনা সংক্রমণের কোনো ভূমিকা আছে কিনা, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।