ভারতের আসামে ব্যাপক ভূমিধসের কারণে রেল নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে আসাম থেকে ত্রিপুরায় জ্বালানি পরিবহনের পরিকল্পনা করছে ভারত। রোববার (২৯ মে) এ পরিকল্পনার কথা জানায় দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনকারী কোম্পানি ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন (আইওসি)।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে জানায়, চলতি মাসের শুরুতে ভয়াবহ বন্যায় আসামের ডিমা হাসাও জেলা ও বরাক উপত্যকা, মিজোরাম, মণিপুর এবং ত্রিপুরার সঙ্গে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের সংযোগকারী একমাত্র রেলপথটি ভেসে যায়। এরপর বিকল্প হিসেবে মেঘালয় হয়ে সড়কপথে নিজেদের সরবরাহ কার্যক্রম শুরু করে আইওসি। কিন্তু এতে সংস্থাটির খরচ বেড়েছে আগের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।
আইওসির নির্বাহী পরিচালক (ইন্ডিয়ানঅয়েল-এওডি) জি রমেশ ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেন, ‘ডিমা হাসাওয়ে ভূমিধসের পর মনিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা এবং আসামের দক্ষিণাঞ্চলে পৌঁছানোর একমাত্র বিকল্প মেঘালয় হয়ে সড়ক পথে যোগাযোগ। কিন্তু এই পথটিও ভূমিধসপ্রবণ।’
এমন পরিস্থিতির কারণেই উত্তরপূর্ব ভারতের দক্ষিণের এলাকাগুলোতে জ্বালানি সরবরাহের জন্য সরকার এবং কেন্দ্র বিকল্প উপায় খুঁজতে বাধ্য হয়েছে উল্লেখ করে জি রমেশ জানান, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ হয়ে ত্রিপুরায় কয়েকটি চালান পাঠিয়েছি এওডির উত্তর-পূর্ব বিভাগ। সেসময় আসামের বরাক উপত্যকায় রাস্তার করুণ অবস্থার কারণে সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
আইওসির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আমরা বিকল্প পথ হিসেবে ছয় বছরের পুরনো নেটওয়ার্কটি (বাংলাদেশ রুট) সচল করার চেষ্টা করছি। বর্তমানে আমরা কেন্দ্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছি। শিগগিরই ইতিবাচক খবর আসবে বলে আমরা আশাবাদী।’
মেঘালয়ের ডাউকি হয়ে জ্বালানি কনভয় বাংলাদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন। এরপর আবার বাংলাদেশ হয়ে ভারতের ত্রিপুরার কৈলাশহরে প্রবেশ করবে এই কনভয়।
এনডিটিভি বলছে, আলোচনা চূড়ান্ত হয়ে গেলে এবং একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর ইন্ডিয়ান অয়েল-এওডি তার জ্বালানি প্রাথমিকভাবে গুয়াহাটির বেতকুচি ডিপো থেকে বাঙলাদেশের মাধ্যমে ত্রিপুরার ধর্মনগর ডিপোতে নিয়ে যাবে।
জি রমেশ বলেন, ‘প্রথমেই আমরা একটি পূর্ণ কনভয় না-ও পাঠাতে পারি। পেট্রোল, ডিজেল এবং এলপিজি বহনকারী একটি পাইলট কনভয় পাঠাতে চাই। আর এই পাইলট চালান ৮০ থেকে ১২০ কিলোলিটার জ্বালানি পরিবহন করতে পারে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইওসির একজন সিনিয়র কর্মকর্তা পিটিআইকে বলেন, ‘আইওসি প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে রেলপথে এক হাজার ৪০০ কিলোলিটার জ্বালানি পরিবহনের পরিকল্পনা করছে।’
বাংলাদেশের ভেতরে ১৩৭ কিলোমিটারসহ আইওসির বেতকুচি ডিপো থেকে ধর্মনগর ডিপোর মোট দূরত্ব ৩৭৬ কিলোমিটার। কিন্তু এই সড়কপথে মেঘালয়-বরাক উপত্যকা হয়ে ধর্মনগর ডিপো পর্যন্ত স্বাভাবিক দূরত্ব ৫৭৯ কিলোমিটার।