নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা শুরু

Slider জাতীয়


বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রকাশ্যে বিভিন্ন ফোরামে নিজেদের মতামত তুলে ধরছেন ঢাকায় কর্মরত কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা। নির্বাচন যেন অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক হয়, তা নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আগ্রহের কথা জানাচ্ছেন তারা। কিন্তু নির্বাচন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়, এতে বাইরের কোনো হস্তক্ষেপ বা মন্তব্য আসুক সেটিও চাইছে না সরকার। অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে কূটনীতিকরা সীমালঙ্ঘন করলে সতর্ক করার সিদ্ধান্ত রয়েছে ঢাকার।

অতীতেও বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন ও অভ্যন্তরীণ নানা ইস্যুতে বিদেশিদের উৎসাহ দেখা গেছে। নির্বাচনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বললেও তারা বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন, সহযোগিতার প্রস্তাবও রাখছেন। ইতিমধ্যে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সরকার সহায়তা চাইলে তা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা জানতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে সফরে যাওয়া পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্যদের কাছে মার্কিন প্রশাসন এবং সংশ্লিংষ্ট অংশীজনদের জিজ্ঞাসা ছিল নির্বাচন নির্বিঘ্নে ও অংশগ্রহণমূলক করতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে?

জবাবে সংসদীয় দলের সদস্যরা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য সবকিছুই করছে সরকার। কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল যেখানেই সুযোগ পেয়েছে সেখানেই আসন্ন নির্বাচন প্রশ্নে সংসদীয় দলের সদস্যরা গণতান্ত্রিক দেশগুলো বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ নিরসনের চেষ্টা করেছেন। এছাড়া আগামী নির্বাচনে মার্কিন পর্যবেক্ষকদের আগাম আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে যে কোন গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানানো হয়। নির্বাচন নিয়ে গণতান্ত্রিক দেশগুলোর উদ্বেগ নাচক করে বলা হয়, ভোটে ক্ষমতাসীন দল বা জোটের কোনো ধরনের প্রভাব খাটানোর চিন্তা নেই; বরং ভোটাররা যে রায় দেবে তা আওয়ামী লীগ মাথা পেতে নেবে। ২০২৪ সালের প্রথম দিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে এমনটা জানিয়ে সংসদীয় কমিটির সদস্যরা আরও বলেন, নির্বাচনকে অবাধ করতে সরকারের প্রচেষ্টার প্রতি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা, সমর্থন ও সহযোগিতা একান্তভাবে আবশ্যক। কারণ ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর নিশ্চিতে গণতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা থাকা উচিত।

গত মঙ্গলবার ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের এক আয়োজনে বলেছেন, বাংলাদেশের আসন্ন সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি হচ্ছে জনগণ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের পছন্দ অনুযায়ী সরকার গঠন করবে। নির্বাচনটি হতে হবে আন্তর্জাতিক মানদ-ে উত্তীর্ণ।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসবে বিদেশিদের চাপ ও আগ্রহ ততই বাড়বে। এরই মধ্যে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের পরবর্তী সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের তাগিদ দিচ্ছে তারা। গত ২৭ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেন, নির্বাচন সবসময় আগ্রহের একটা জায়গা। বাংলাদেশ সরকার ও অন্যদের সঙ্গে ইইউর গভীর সম্পর্ক রয়েছে। পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনসহ এ প্রক্রিয়ার সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের পদক্ষেপ আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। সারাবিশ্বে ইইউ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে। আমরা বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারব বলে মনে করি।

গত ১৮ এবং ১৯ মে বাংলাদেশ-ইইউ যৌথ কমিশনের বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নয়ন-অগ্রগতি পর্যালোচনা হয়েছে। সেখানেও বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আগামী ২৮ জুন ঢাকায় ইইউর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম রাজনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

এছাড়া যুক্তরাজ্যসহ আন্তর্জাতিক মহলের আগ্রহ বাড়ছে। ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন ফেব্রুয়ারিতে এক অনুষ্ঠানে বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতো যুক্তরাজ্যও বাংলাদেশে অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনী প্রক্রিয়াসহ বহুপক্ষীয় ও স্বচ্ছ গণতন্ত্র দেখতে চায়। প্রথমত সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনের আগে সভা-সমাবেশের সুযোগ দিতে হবে। যাতে দলগুলো দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে সত্যিকার অর্থেই বিতর্কে অবতীর্ণ হতে পারে। দ্বিতীয়ত সবাই যেন ভোট দিতে পারে অবাধে। তৃতীয়ত বিশ্বাসযোগ্য এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ভোট গণনা করতে হবে। চূড়ান্ত বিষয়টি হচ্ছে, নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্য ফলাফল পরাজিত পক্ষসহ সবাইকে মেনে নিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *