আক্রান্ত হওয়ার দুই সপ্তাহ পর প্রকাশ পায় মাঙ্কিপক্সের লক্ষণ। এ সময়েই রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি বেশি। আর র্যাশ ওঠার তিন থেকে চার সপ্তাহ রোগী বহন করে এ ভাইরাস। আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
মাঙ্কিপক্স বিশ্বজুড়ে নতুন আতঙ্ক। ১৯৭০ সালে আফ্রিকা এরপর ২০০৩ সালে একবার যুক্তরাষ্ট্রে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেও তা ছিল নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধ। তবে এবার এরইমধ্যে ১২ থেকে ১৫টি দেশে ছড়িয়েছে এ পক্স। ভয়টা সেখানেই।
ভাইরোলজিস্টরা বলছেন, মাঙ্কিপক্স বানর ছাড়াও ইঁদুর কাঠবিড়াল থেকেও ছড়াতে পারে এ ভাইরাস। এসব প্রাণীর মাংস খেলে এ ভাইরাস প্রথমে শরীরে প্রবেশ করে। পরে গ্লান্ড থেকে রক্তনালী দিয়ে চামড়ায় র্যাশ তৈরি করে। আর এ লক্ষণ প্রকাশ পেতে সময় লাগে দুই সপ্তাহ। আবার গুটি ওঠার পর তা সারিয়ে উঠতেও তিন থেকে চার সপ্তাহ সময় লেগে যেতে পারে। এ পুরো সময়টা রোগীর হাঁচি, কাশি থেকে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। তবে এ ভাইরাস সংক্রমিত হতে তা নাক, মুখ, চোখ দিয়ে শরীরের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে।
সময় সংবাদকে ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, মানুষের যদি পক্স হয় তখন সে মানুষটার হাঁচি কাশি দিয়ে ছড়াবে, আরেকটি মানুষের মধ্যে যাবে নাক দিয়ে, ঢুকবে নাক দিয়ে। নাক দিয়ে ঢোকার পরে ফুসফুসে যাবে এবং আক্রান্ত করবে এরপর রক্তে যাবে। রক্তের মাধ্যমে সারা দেহে ছড়িয়ে যাবে তারপর আবার রক্তে ফিরে আসবে।
এ রোগে মৃত্যুর হার ১০ শতাংশ হলেও এখনই আতঙ্কের কিছু নেই বলে জানিয়েছেন বিশেজ্ঞরা।
এমিরেটস অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, করোনার মধ্যে আমরা যেমন স্বাস্থবিধি মানতে বলেছিলাম মাস্ক পরা, হাতধোয়া, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, এখানেও তো আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে বেঁচে যাব।
তবে এখনই ভয়ের কিছু নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সতর্ক হতে হবে।
মাঙ্কিপক্স ঠেকাতে এরই মধ্যে বিমানবন্দর, নৌবন্দর ও স্থলবন্দরে সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ অধিদফতর।
আজ স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম এক চিঠিতে জানান, মহামারি করোনার মধ্যেই বিশ্বে নতুন আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে মাঙ্কিপক্স। বিরল এ রোগটি দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে দেশে দেশে। আগাম প্রস্তুতি হিসেবে রোগটি প্রতিরোধে সতর্কতার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। মাঙ্কিপক্স সন্দেহজনক ও রোগটির লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিদের ঢাকায় আইসোলেশনের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) তাদের বিষয়ে তথ্য পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন দেশে মাঙ্কিপক্স রোগী শনাক্ত হয়েছে। মাঙ্কিপক্স নতুন রোগ নয়। এ রোগকে পশ্চিম আফ্রিকা বা মধ্য আফ্রিকান দেশগুলোতে অ্যান্ডেমিক হিসেবে ধরা হয়। আগে শুধু পশ্চিম আফ্রিকা বা মধ্য আফ্রিকান দেশগুলোতে ভ্রমণকারীদের বা বাসিন্দাদের মধ্যে শনাক্ত করা হলেও সম্প্রতি ভ্রমণের ইতিহাস নেই, ইউরোপ ও আমেরিকায় বসবাসকারী এমন ব্যক্তিদের মাঝে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে।
রোগীদের মধ্যে ফুসকুড়ি দেখা গেলে এবং সম্প্রতি মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে এমন দেশগুলোতে ভ্রমণ করলে অথবা এমন কোনো ব্যক্তি বা লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে যাদের একই রকম ফুসকুড়ি দেখা গেছে বা নিশ্চিত বা সন্দেহজনক মাঙ্কিপক্স রোগী হিসেবে শনাক্ত হয়েছে, তাদের মাঙ্কিপক্সের জন্য সন্দেহজনক রোগীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে বলেও চিঠিতে জানানো হয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, সন্দেহজনক ও লক্ষণযুক্ত রোগীকে কাছাকাছি সরকারি হাসপাতালে বা সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, ঢাকায় আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে আইইডিসিআরে তাদের সম্পর্কে তথ্য পাঠাতে হবে।
মাঙ্কিপক্স একটি বিরল ভাইরাস সংক্রমণজনিত রোগ, যা পশু থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। সাধারণত আফ্রিকার দেশগুলোতে এ রোগটি দেখা গেলেও ওই অঞ্চলের বাইরে রোগটি ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা বিরল। সে কারণেই দেশে দেশে মাঙ্কিপক্সের বিস্তার উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মাঙ্কিপক্স খুব একটা গুরুতর নয়। সংক্রমণের সক্ষমতাও তুলনামূলক কম।
রোগটির প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর, মাথাব্যথা, পেশিতে ব্যথা ও অবসাদ। পরে মুখ ও শরীরে চিকেনপক্সের মতো র্যাশ বা ফুসকুড়ি দেখা যায়। তবে এ রোগ নিজে থেকেই কেটে যায়। ১৪-২১ দিনের মধ্যে সেরে ওঠেন রোগীরা।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত শনিবার (২১ মে) রাতে ভাইরাসটির সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশের প্রতিটি বন্দরে সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। একই সঙ্গে মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরসমূহে আক্রান্ত দেশ থেকে আসা যাত্রীদের ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখা ও হেলথ স্ক্রিনিং জোরদার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।