রমজান আলী রুবেল, শ্রীপুর’ গাজীপুর: গাজীপুরের শ্রীপুরে ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কার্যালয় দখল করেছে বলে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. নূরুল আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। পাঁচ বছর ধরে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত কার্যালয়টি হঠাৎ করে দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে কাপড়ের দোকান। এ বিষয়ে গতকাল শনিবার সকালে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার কার্যালয়টি দখল করা হয়।
অভিযুক্ত নূরুল আলম মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে। তিনি গাজীপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য।
জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কার্যালয় দখল করে নেওয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের নির্দিষ্ট কোনো বসার জায়গা নেই। এরই মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কার্যালয় দখল মুক্ত করতে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কার্যালয়ের সামনে টিন দিয়ে তৈরি করা হয়েছে নতুন একটি বারান্দা। ওই বারান্দায় বসানো হয়েছে একটি কাপড়ের দোকান। ফলে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কার্যালয় পুরোপুরি বন্ধ করে দখলে নিয়েছেন ইউপি সদস্য।
গাজীপুর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আলা উদ্দিন বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের একমাত্র ঠিকানা ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কার্যালয় দখল করে নিয়েছেন ইউপি সদস্য। এতে বাধা দিতে গেলে আমাদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিচ্ছেন তিনি। এ বিষয়ে প্রতিকার পেতে গাজীপুর জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। এরপরও প্রতিকার না পেলে সংবাদ সম্মেলন মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি পালন করব। প্রয়োজনে সারা দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের কার্যালয় দখলমুক্ত করব।
শ্রীপুর উপজেলা মুক্তিযুদ্ধ কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার মো. সিরাজুল হক বলেন, এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা কি পদক্ষেপ নেয় এটা দেখার পর পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মো. নূরুল আলম বলেন, যে স্থানে মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয় গড়ে উঠেছে সেই জমির মালিক আমার বাবা। আমি আমার জমিতে নতুন ঘর নির্মাণ করছি।
এত বছর চলে গেল, হঠাৎ করে আজ কেন জমি দখলে নিচ্ছেন?-এমন প্রশ্নের জবাবে ইউপি সদস্য বলেন, আগেও নিষেধ করেছি। কিন্তু তাঁরা নিষেধ মানেননি।
তাহলে তখন কেন পারেনি, এখন মেম্বার হয়েছেন বলে ক্ষমতা হয়েছে? তাই দখল নিলেন?-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবকিছুতেই একটু ক্ষমতা লাগে। তাই এখন একটু ক্ষমতা প্রয়োগ করলাম। আমি অপরাধ করলে আমার শাস্তি হবে।
গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ওই জমি দীর্ঘ সাত বছর আগে মাপজোখ করে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কার্যালয়ের সংশ্লিষ্টদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই সময় কারও কোনো ধরনের আপত্তি ছিল না। কিন্তু হঠাৎ করে তিন দিন আগে ইউপি সদস্য জোরপূর্বক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কার্যালয়ের সামনে নতুন ঘর নির্মাণ করে দখলে নিয়েছেন। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল হক মাতবর বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছে। আমি একটু অসুস্থ। সুস্থ হয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করব। তবে কোনো ইউপি সদস্য মুক্তিযোদ্ধাদের অফিস দখল নিলে তা মেনে নেওয়া হবে না।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ইউএনওকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে বিষয়টির সঠিক সমাধান করা হবে।