গরিবরা সহায়তা না পেলে দেশে দেশে শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতি—আইএমএফ প্রধান

Slider টপ নিউজ


আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দরিদ্রদের সহায়তা করতে বিভিন্ন দেশের সরকার ব্যর্থ হলে, শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি দেখা দিতে পারে দেশে দেশে। এমন সতর্কতা উচ্চারণ করে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল আইএমএফের প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেছেন, সমাজের অতি দরিদ্রদের খাদ্যে এবং জ্বালানিতে ভর্তুকি দেয়া প্রয়োজন সরকারগুলোর। এক্ষেত্রে সরকার যদি যথাযথ সাপোর্ট না দেয়, তাহলে শ্রীলঙ্কায় যে পরিস্থিতি দেখা গেছে, তার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে অনেক দেশে। কিছু কিছু সরকার কিছুটা সাহায্য করছে। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, তা যথেষ্ট নয়। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, বিশ্বজুড়ে মানুষ ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার খরচ বৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াই করছে।

তিনি বলেন, এই সাপোর্ট দিতে হবে অত্যন্ত ‘টার্গেটেড’ উপায়ে এবং মানুষকে সরাসরি ভর্তুকি দিতে হবে। জীবনধারণের ব্যয় বৃদ্ধির মতো সংকটের ইস্যুতে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে দুটি অগ্রাধিকার আছে। একটি হলো অত্যন্ত গরিব মানুষ। সমাজের এই শ্রেণিটি এখন উচ্চ খাদ্যমূল্য এবং জ্বালানি মূল্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। দ্বিতীয়টি হলো, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যেসব ব্যবসা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাতে সাপোর্ট দেয়া

আইএমএফের ভূমিকা হলো সরকারগুলোর সঙ্গে কাজ করে বৈশ্বিক অর্থনীতি ও সমৃদ্ধিকে উন্নত করা। কিন্তু এই কাজ চ্যালেঞ্জিং। কারণ, এ বছর খাদ্যের দাম রেকর্ড উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। তেল এবং গ্যাসের দাম দ্রুততার সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ঘটনা ঘটেছে মূলত দুটি বড় রকমের হতাশাজনক পরিস্থিতিতে। একটি হলো করোনাভাইরাস মহামারি। অন্যটি ইউক্রেন যুদ্ধ। রাশিয়া এবং ইউক্রেন হলো শস্য ও হাইড্রোকার্বনের বড় রপ্তানিকারক। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এসব পণ্যের গুরুত্ব কয়েক দশকের মধ্যে অনেক দেশে মুদ্রাস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে। বৃটেনে এই হার শতকরা ৯ ভাগ, যুক্তরাষ্ট্রে শতকরা ৮.৩ ভাগ এবং ইউরোজোনে শতকরা ৭.৪ ভাগ। এমন অবস্থায় কোনো কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। পণ্যমূল্য বৃদ্ধি ধীরগতি করার চেষ্টা করছে তারা। গোল্ডম্যান স্যাচে লয়েড ব্লাঙ্কফেইন মন্দার আশঙ্কা করছে।

শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকটকে আরও তীব্র করেছে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি। এ থেকেই ভয়াবহ দাঙ্গা দেখা দিয়েছে। ফলে সেখানে দীর্ঘদিন ক্ষমতার মসনদে আসীন পরিবারের প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসে পদত্যাগে বাধ্য হন। তারপরও জনরোষ থেকে রেহাই পাননি তিনি। তার বাসভবন উত্তেজিত জনতা ঘিরে ফেলে। হামলা চালায়। হ্যান্ড গ্রেনেড মারে তার বাড়িতে। তখনো সেই বাড়িতে তিনি। তারা তার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। যে জনতার জন্য তিনি রাজনীতি করেন বলে দাবি করেন, তাদের সামনে দাঁড়ানোর সেদিন সাহস দেখাননি। তাকে পেছনের দরজা দিয়ে উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। মাহিন্দ রাজাপাকসে ক্ষমতায় থাকতেই শ্রীলঙ্কা আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের কাছে নিজেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেউলিয়া ঘোষণা করে।

আইএমএফ বস জর্জিয়েভা বলেন, করোনা মহামারির আগে ফ্রান্স থেকে চিলি পর্যন্ত এমন অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল অসমতা বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে। সেখানে জনগণের সমর্থন নেই এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। এসব কারণে ওই অস্থিরতা দেখা দেয়। যদি আমরা ২০১৯ থেকে কোনো শিক্ষা নিতে চাই, তাহলে আমাদের পলিসিগত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে আরও নম্র হতে হবে। জনগণের সঙ্গে বহুবিধ উপায়ে যুক্ত হতে হবে। কারণ, পলিসি হতে হবে জনগণের জন্য।

বিদেশিদের কাছ থেকে ঋণ প্রসঙ্গেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন জর্জিয়েভা। যেসব দেশ বিদেশিদের কাছ থেকে অর্থ ঋণ নিয়েছেন, তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন- কি পরিমাণ অর্থ খরচ করা হয়েছে এবং কোন খাতে তা খরচ হয়েছে এ বিষয়ে খুব বেশি সতর্ক হতে হবে সরকারগুলোকে। বিশ্বজুড়ে খাদ্য অনিরাপত্তার মোকাবিলা এবং তা নিরাপদ করতে এ সপ্তাহে একটি বড় রকমের পরিকল্পনা চালু করেছে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের একটি গ্রুপ। এই ধারণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন। তিনি বলেছেন, বিশ্বজুড়ে খাদ্য ও সারের মূল্য বৃদ্ধির ফলে বড় একটি বাস্তবসম্মত ঝুঁকি আছে। তা হলো এর ফলে আরও অধিক পরিমাণে মানুষ অনাহারে থাকবে।

অন্যদিকে আইএমএফ প্রধান জর্জিয়েভা বলেন, পর্যাপ্ত খাবার থাকলেও তা সমানভাবে বিতরণ করা হয় না। তিনি বলেন, সমাধান হলো যেখানে সম্ভব সেখানে অধিক পরিমাণ শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা। একই সঙ্গে কৃষি উৎপাদনশীলতার দিকে জোর দৃষ্টি দিতে হবে। বাণিজ্যকে উন্মুক্ত রাখতে হবে। আমাদের এমন অবস্থা সৃষ্টি করা উচিত হবে না, যেখানে একটি দেশের চাহিদার চেয়ে বেশি খাদ্য মজুত করে রাখা হয়। এই খাদ্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরে কোনো রকম বাধা সৃষ্টি করা উচিত নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *