ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদের অষ্টাদশ অধিবেশন (বাজেট অধিবেশন) শুরু হবে আগামী ৫ জুন। অধিবেশনে ২০২২–২৩ অর্থবছরের বাজেট পেশ করা হবে ৯ জুন।
বাজেটে সিগারেট বা তামাকজাত দ্রব্যের দাম বাড়বে কি বাড়বে না তা পরিষ্কার নয়। কিন্তু তার আগেই বাজারে বেড়ে গেছে সিগারেটের দাম।
ডিলার থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা সব সিগারেটের বাড়তি দাম রাখতে শুরু করেছেন। প্রান্তিক ব্যবসায়ীরাও ধূমপায়ীদের কাছে বাড়তি মূল্যে সিগারেট বিক্রি করছেন। আগামী বাজেটে তামাকজাত দ্রব্যের দাম বাড়ার কথা শোনা যাচ্ছে বলেই সিগারেটের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে ক্রেতা-বিক্রেতারা।
রোববার (২২ মে) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা, মার্কেটের আশপাশ, এলাকার গলিতে থাকা চা-সিগারেট, মুদির দোকান ঘুরে জানা গেছে, প্রতি শলাকা বেনসন এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬ টাকায়, আগে ১৫ টাকা বিক্রি হতো। গোল্ডলিফ ১ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকায়, মার্লবোরো বিক্রি হচ্ছে ১৬-১৭ টাকায়। প্রায় প্রতিটি ব্র্যান্ডের সিগারেটেই এক-দুই টাকা শলাকা প্রতি বেড়েছে।
খুচরা দোকানিরা বলছেন, বাজারে সব ধরণের সিগারেট কোম্পানির নির্ধারিত মূল্য থেকে বাড়তি দামে বিক্রি করছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এতে প্রতি প্যাকেটে ১০-১২ টাকার করে বাড়তি গুনতে হচ্ছে। বেনসন সিগারেট প্রতি প্যাকেট ২৭০ টাকা ছিল, এখন কিনতে হচ্ছে ২৮০ টাকায়। ২০৩ টাকার গোল্ডলিফ এখন ২১২ টাকা প্যাকেট হয়েছে। নেভি সিগারেটের প্যাকেট ১২৫ টাকা থেকে ১২৮-১৩০ টাকা, হলিউড ও ডারবি সিগারেট ৭৮ টাকা ছিল, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৮৩ টাকায়। রয়েল সিগারেট ৮৪ টাকার প্যাকেট কিনতে হচ্ছে ৯৩ টাকায় এবং স্টার সিগারেট ১২৭ টাকার প্যাকেট কিনতে হচ্ছে ১৩৪ টাকায়।
উত্তরা আজমপুরে খুচরা দোকানি মো. নজরুল বাংলানিউজকে বলেন, সিগারেট বিক্রি করে যাও কিছু লাভ থাকত, এখন থাকে না। বাধ্য হয়ে আমরা বাড়তি দামে সিগারেট কিনছি, খুচরা ক্রেতাদের কাছেও বাড়তি দামে বিক্রি করছি। এতে প্রতিনিয়ত ক্রেতাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হচ্ছে।
উত্তরা হাউজবিল্ডিংয়ের এক ধূমপায়ী জানান, দোকানে প্রতি পিস মার্লবোরো সিগারেট ১৫ টাকায় বিক্রি হতো, এখন কোনো দোকানে ১৬ টাকা আবার কোনো দোকানে ১৭ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেট কিনতে গেলে ৩২০ টাকা দাম চাইছে। বাজেটে প্রতি বছরই সিগারেটের দাম বাড়ে, এটা নতুন কিছু না। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেট হওয়ার আগেই দোকানিরা সিগারেটের দাম বাড়িয়ে দেয়। অনেক দোকানি বাজেটের আগে থেকেই সিগারেট বিক্রিতে অতিরিক্ত লাভের আশায় মজুদ করে রাখছে। বাধ্য হয়ে সবাই সিগারেট বেশি দামে কিনছেন।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোম্পানিগুলোর ডিলারদের কাছে সিগারেট সরবরাহ করছে না। তারা বাজেটের পর নতুন দামে সিগারেট মার্কেটে সরবরাহ করবে। তাই ডিলাররাও পর্যাপ্ত পরিমাণে সিগারেট সরবরাহ করছে না। ফলে তাদের কাছ থেকে বাড়তি দামে সিগারেট কিনতে হচ্ছে। তাই আমরাও বাড়তি দামেই বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।
রাজধানীর একাধিক পাইকারি সিগারেট ব্যবসায়ীর অভিযোগ, প্রতিবার বাজেটের আগে কোম্পানিগুলো মার্কেটে সংকট তৈরি করে আগে থেকেই দাম বাড়িয়ে দেয়। কোম্পানি, ডিলারসহ যারা সিগারেট মজুদ করে, তাদের লাভ হচ্ছে বেশি। তাদের মধ্যেই পাইকারদের অবস্থান, এতে লাভও খুব অল্প হয়।
অভিযোগের পরও বাজারে সিগারেটের সরবরাহ নিয়মিত বলে দাবি করেছে কোম্পানিগুলো।
আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য প্রাথমিকভাবে ছয় লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাবনা তৈরি হয়েছে। নতুন এ বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এতে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী ৯ জুন (বৃহস্পতিবার) জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।