জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিকের সাথে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়ার একটি হোয়াটসঅ্যাপ আলাপ ফাঁস হয়েছে। এই আলাপন নিয়ে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে তোলপাড় চলছে। জাতীয় পার্টি চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া এ নিয়ে রাজধানীর রমনা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। গতকাল শনিবার বিকেলে তিনি দাবি করেন, এটি ষড়যন্ত্রমূলক। থানায় জিডি করেছি। মামলাও করব। আশা করছি যারা এর সাথে জড়িত তারা শনাক্ত হবে।
বিদিশা সিদ্দিক ২০০৫ সালে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ কর্তৃক তালাক প্রাপ্ত হন। তবে এরশাদের মৃত্যুর পর মাতৃত্বের দাবি নিয়ে তিনি রাজধানীর বারিধারাস্থ প্রেসিডেন্ট পার্কে ছেলে এরিক এরশাদের সাথেই থাকছেন। এরশাদের মৃত্যুর পর তার ছোট ভাই জি এম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে তার নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করে প্রায় এক বছর হলো জাতীয় পার্টি পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার নেত্রী হিসেবে রাজনীতির মাঠে আছেন। তিনি বরাবরই জি এম কাদেরকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলে আসছেন তার নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিতে চমক আসছে সামনে। এই অবস্থায় বিদিশার সাথে জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়ার ‘কথিত’ হোয়াটসঅ্যাপ আলাপের স্ক্রিন শট নেতাকর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ফাঁস হওয়া এই আলাপে জাতীয় পার্টি এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে দু’জনের বিভিন্ন মন্তব্য রয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া দাবি করেছেন এটি সম্পূর্ণ ফেক। বের করার চেষ্টা করছি কে এটা করেছেন।
তিনি বলেন, আমার নিজস্ব হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দিয়ে জিডি করেছি। আপনার মোবাইল থেকে যদি আমার বা কারো সাথে চ্যাট করেন, আপনার বা আমার মোবাইল ছাড়া আর কারো থেকে স্ক্রিন শট নেয়া যাবে না। এটা ফেক। আমি এটার সাথে কোনোভাবেই জড়িত না। কেন এই মুহূর্তে বিষয়টি সামনে এলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলের মধ্যে গ্রুপিং লবিং আছে, হতে পারে।
জানা যায়, হোয়াটসঅ্যাপ আলাপচারিতার বিষয়টি নিয়ে জাপার সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী মহল পর্যন্ত আলোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে জাপা মহাসচিব মো: মুজিবুল হক চুন্নু অবশ্য বলেছেন, তিনি এটা এখনো জানেন না। তবে দলের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা স্ক্রিন শটের বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, এটা রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। এর আগে আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের ষড়যন্ত্র হয়েছিল। যেহেতু তিনি জিডি করেছেন, সব বেরিয়ে আসবে আশা করি।
গত ১৫ মে অ্যাডভোকেট মো: রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া রমনা থানায় জিডি করেছেন। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমি বর্তমানে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। ১৫-৫-২০২২ তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ৬টায় রমনা মডেল থানাধীন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এলে উপস্থিত নেতাকর্মীরা আমার ছবি সংবলিত ‘জধলধঁষ ঠঁরধ’ নাম ব্যবহার করা হোয়াটসঅ্যাপ আইডি থেকে ‘ইবফরংযধ গধফধ’ নামে হোয়াটসঅ্যাপ আইডির ৯ পাতার মেসেজের স্ক্রিন শট আমাকে দেখালে উক্ত ‘জধলধঁষ ঠঁরধ’ হোয়াটসঅ্যাপ আইডিটি আমার নয় বলে আমি উপস্থিত সব নেতাকর্মীকে জানাই এবং ‘ইবফরংযধ গধফধ’ নামে হোয়াটসঅ্যাপ আইডির সাথে আমার কখনো কোনো ফোন বা মেসেজ আদান-প্রদান হয়নি। উক্ত আইডির সাথে আমি ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত নই। অজ্ঞাত কোনো ব্যক্তি আমার ছবি ব্যবহার করে ভুয়া হোয়াটসঅ্যাপ আইডি খুলে আমাকে রাজনৈতিক ও পারিবারিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা, বিব্রত, অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে উক্ত হোয়াটসঅ্যাপ আইডি ব্যবহার করছে এবং হোয়াটসঅ্যাপ আইডিটি আমার বলে বিভিন্ন মাধ্যমে অপপ্রচার করছে।
নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে করা হোয়াটসঅ্যাপ আইডি এবং ফেসবুক আইডি জিডিতে উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির এই নেতা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অনুরোধ জানান। এ বিষয়ে বিদিশা সিদ্দিকের প্রতিক্রিয়া জানতে কয়েকবার ফোন দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি