রাতের ইবাদতের ফজিলত

লাইফস্টাইল


রাতের ইবাদত আল্লাহর কাছে অনেক প্রিয়। মানুষ যখন গভীর ঘুমে থাকে তখন আল্লাহর প্রিয় বান্দারা নামাজে দাঁড়িয়ে যায়। রাতের নামাজের মাধ্যমেই তারা আল্লাহর একান্ত প্রিয়জনে পরিণত হয়। রাতের নামাজের অনেক ফজিলত ও উপকারিতা রয়েছে। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় রাতের নামাজের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। তাহলো-

১. রাতে ইবাদাতে চেহারা উজ্জ্বল হয়

হজরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে অধিক পরিমাণে নামাজ পড়ে, দিনে তার চেহারা উজ্জ্বল হয়।’ (ইবনে মাজাহ)

২ রাতের ইবাদত কেয়ামতে মুক্তির উপায়

হজরত জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, হজরত সুলায়মান আলাইহিস সালাম-এর মা তাঁকে বললেন, হে বৎস! তুমি রাতে অধিক ঘুমিও না। কেননা রাতের বেশি ঘুম মানুষকে কেয়ামতের দিন নিঃস্ব অবস্থায় ত্যাগ করে।’ (ইবনে মাজাহ)

৩. রাতের ইবাদত নিয়মিত করা

হজরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তুমি অমুক ব্যক্তির মত হয়ো না, যে রাতে উঠতো (নফল ইবাদাত করতো), পরে তা ছেড়ে দিয়েছে।’ (বুখারি, মুসলিম, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)

৪. রাতের ইবাদত না করার ক্ষতি

হজরত আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এক ব্যক্তি সম্পর্কে আলোচনা হলো যে, সে এক ঘুমে রাত কাটিয়ে ভোরে উপনীত হয়। নবিজী বলেন, ‘এ ব্যক্তির দুইকানে শয়তান পেশাব করে দিয়েছে।’ (বুখারি, মুসলিম, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ)

৫. রাতের ইবাদতের উপকারিতা

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রাতে শয়তান তোমাদের প্রত্যেকের মাথায় একটি দড়ি দিয়ে তিনটি গিরা দেয়। সে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করলে একটি গিরা খুলে যায়। সে উঠে অজু করলে আরেকটি গিরা খুলে যায়। এরপর সে যখন নামাজে দাঁড়ায়, তখন সব গিরা খুলে যায়। ফলে সে প্রশান্ত মনে হৃষ্টচিত্তে ভোরে উপনীত হয় এবং কল্যাণপ্রাপ্ত হয়। আর সে যদি এরূপ না করে, তবে তার ভোর হয় অলসতা ও অপবিত্র মন নিয়ে। ফলে সে কল্যাণ লাভ করতে পারে না।’ (বুখারি, মুসলিম, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ, মুয়াত্তা মালেক)

৬. নিরাপদে জান্নাত যাওয়ার উপায়

হজরত আবদুল্লাহ ইবনু সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় গিয়ে পৌঁছলে লোকেরা তাঁকে দেখার জন্য ভীড় জমায় এবং বলাবলি করতে থাকে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় এসেছেন। আমিও লোকেদের সাথে তাঁকে দেখতে গেলাম। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চেহারার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম যে, এ চেহারা কোনো মিথ্যাবাদীর চেহারা নয়।

তখন তিনি সর্বপ্রথম যেকথা বলেন তাহলো- হে লোকসকল! তোমরা পরস্পর সালাম বিনিময় করো, অভুক্তকে আহার করাও এবং রাতের বেলা মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামাজ পড়ো। তাহলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।’ (ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, দারেমি)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, নিজে রাতের ইবাতদ করা পাশাপাশি রাতে নিজের পরিবার-পরিজনকে (ইবাদাতের জন্য) ঘুম থেকে জাগানো। হাদিসের দিকনির্দেশনাও এমনই।

হজরত আবু সাঈদ ও আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে ঘুম থেকে জেগে উঠে নিজ স্ত্রীকেও ঘুম থেকে জাগায় এবং উভয়ে দুই রাকাত (নফল) নামাজ পড়ে; তাদের উভয়কে আল্লাহর পর্যাপ্ত জিকিরকারী পুরুষ ও পর্যাপ্ত জিকিরকারী নারীদের তালিকাভুক্ত করা হয়।’ (ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রাতে ইবাদত করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত ফজিলত ও উপকারিতা পেতে যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *