ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঋণ খেলাপি হলো শ্রীলঙ্কা। দেশটি নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটে ডুবে আছে। জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া, সঙ্গে তীব্র হচ্ছে খাদ্য সংকট। চারদিকে তেল এবং ওষুধের জন্য হাহাকার। দিনের সামান্য সময়ই বিদ্যুৎ পাচ্ছে দেশটির বাসিন্দারা। এরইমধ্যে ঋণ খেলাপি হলো শ্রীলঙ্কা। দ্য গার্ডিয়ানের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তারই দাম চুকাতে হচ্ছে শ্রীলঙ্কাকে।
ঋণের ৭৮ মিলিয়ন ডলারের সুদ প্রদানের জন্য এক মাস অতিরিক্ত সময় পেয়েছিল দেশটি। তবে এর মধ্যেও সেই অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় বুধবার দেশটিকে ঋণখেলাপি ঘোষণা করা হয়। এর আগে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেছিলেন, শ্রীলঙ্কা এখন প্রাক-ঋণ খেলাপি অবস্থায় রয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার বিশ্বের দু’টি বৃহত্তম ক্রেডিট রেটিং সংস্থা মুডি ইনভেস্টর সার্ভিস ও ফিচ রেটিংস জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা ঋণ খেলাপি হয়েছে
কোনো সরকার তাদের ঋণের কিছু অংশ বা পুরো ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষম হলে খেলাপি হয়। ঋণ খেলাপ হলে বিনিয়োগকারীদের কাছে একটি দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হয় এবং আন্তর্জাতিক বাজার থেকে নতুন করে ঋণগ্রহণের পথ কঠিন হয়। এর ফলে দেশটির মুদ্রা এবং অর্থনীতিতে অনাস্থা সৃষ্টি হবে।
শ্রীলঙ্কা ঋণ খেলাপি কিনা জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পি নন্দলাল ওয়েরাসিংহে বলেন, আমাদের অবস্থান খুবই পরিষ্কার। ঋণ পুনর্গঠন না হওয়া পর্যন্ত আমরা শোধ করতে পারবো না। গত মাসেই শ্রীলঙ্কা জানিয়ে দিয়েছিল যে, তারা আন্তর্জাতিক ঋণ পরিশোধ স্থগিত রাখবে। ফরেন কারেন্সির রিজার্ভ ধরে রাখতে এই সিদ্ধান্ত নেয় দেশটি। এমনিতেই রিজার্ভে যথেষ্ট ফরেন কারেন্সি না থাকায় আমদানি বন্ধ হওয়ার পথে। এই বছর ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধের কথা ছিল দেশটির। তবে তা তারা স্থগিত করেছে। শ্রীলঙ্কার মোট বৈদেশিক ঋণ প্রায় ৫১ বিলিয়ন ডলারের। এদিকে তাদের রিজার্ভে আছে মাত্র ২৫ মিলিয়ন ডলার।
এমন অবস্থায় খাদ্য ঘাটতির কথা জানালেন শ্রীলঙ্কার নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমাসিংহে। তিনি বলেন, আমাদের না খেয়ে মরতে হবে। এ নিয়ে একটি টুইট করেছেন তিনি। এতে হুঁশিয়ারির পাশাপাশি সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। টুইটে প্রধানমন্ত্রী রণিল বলেন, চলতি মে-অগাস্ট মৌসুমের জন্য সার সংগ্রহের পর্যাপ্ত সময় না থাকলেও, সেপ্টেম্বর-মার্চ মৌসুমের জন্য পর্যাপ্ত সারের মজুত নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আমি আন্তরিকভাবে প্রত্যেককে এই পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করার আহ্বান জানাচ্ছি। উল্লেখ্য, গত বছর এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে সব রাসায়নিক সারের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে শ্রীলঙ্কায় খাদ্যশস্যের ফলন দারুণভাবে কমে যায়। সরকার ভুল বুঝতে পেরে সিদ্ধান্ত বদলালেও যথেষ্ট পরিমাণে সার আমদানি করা যায়নি ডলারের অভাবে।
এখনও শ্রীলঙ্কায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। তাতে যোগ দিচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। টিয়ার গ্যাস ও গরম পানি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসের মতো তার ছোট ভাই প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়ারও পদত্যাগ দাবি করছে। আর্থিক সংকট বেড়ে চলায় গত সপ্তাহে সহিংস বিক্ষোভের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন মাহিন্দা রাজাপাকসে। সেদিনের সহিংসতায় ৯ জন নিহত এবং ৩০০ জনের বেশি আহত হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে রণিল বিক্রমাসিংহেকে প্রধানমন্ত্রীর পদে আনেন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া।
ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে অর্থনীতিতে সংকট দেখা যাচ্ছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর অবস্থা সবথেকে বেশি নাজেহাল। অর্থনীতিবিদরা ভয় পাচ্ছেন, শ্রীলঙ্কা থেকেই এই সংকট শুরু হচ্ছে। এরইমধ্যে মিশর ও তিউনিশিয়া আইএমএফের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেছে। আগে থেকেই ধুঁকছে পাকিস্তানের অর্থনীতি। যুদ্ধ শুরুর পর ধসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে দেশটি। জ্বালানীর দাম বাড়ায় বিদ্যুৎ বন্ধ রাখছে পাকিস্তান। তুরস্কে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে ৭০ শতাংশ।