শ্রীলঙ্কায় চলছে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট। তেল-গ্যাস, ওষুধের মতো জরুরি পণ্যের আমদানি ব্যয় মেটাতে পারছে না দেশটি। দিতে পারছে না বিদেশি ঋণের কিস্তিও। এরই মধ্যে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্রটি। এ অবস্থায় প্রতিবেশী ভারতের চিত্রও অনেকটাই শ্রীলঙ্কার মতো সংকটাপন্ন বলে দাবি করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। খবর এনডিটিভি।
ভারতের অবস্থাও শ্রীলঙ্কার মতো হবে: রাহুল গান্ধী
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
নিজের দাবি প্রমাণ করতে গিয়ে দু’দেশের মধ্যে বেশ কিছু মিল তুলে ধরেছেন তিনি। বুধবার (১৮ মে) ভারত ও শ্রীলঙ্কায় বেকারত্ব, পেট্রোলের দাম ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে এমন দাবি করেছেন রাহুল গান্ধী।
কংগ্রেস নেতার শেয়ার করা একটি চিত্রে দেখা যায়, ২০১৭ সাল থেকে ভারত-শ্রীলঙ্কায় বেকারত্বের হার ক্রমশ বাড়ছে। ২০২০ সালে করোনা আঘাত হানার পর লকডাউনের মধ্যে উভয় দেশেই বেকারত্ব সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল, যা পরের বছর থেকে কিছুটা নিম্নমুখী। দ্বিতীয় চিত্রে দেখা যায়, ২০১৭ সাল থেকে উভয় দেশে পেট্রোলের দাম বাড়ছে এবং ২০২১ সালে তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেছে। তৃতীয় আরেক চিত্রে দেখা যায়, শ্রীলঙ্কায় ২০১৭ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক সহিংসতা কমলেও ২০২০ সালে তা ব্যাপক হারে বেড়েছে। আর ভারতের ক্ষেত্রে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ক্রমাগত বাড়ার পর ২০২০ সালে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা কিছুটা কমেছিল। তবে এর পরের বছরই তা অনেক বেশি বেড়ে গেছে।
ভারতীয় কংগ্রেসের নেতারা এর আগেও জ্বালানির মূল্য, মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্ব বৃদ্ধি নিয়ে মোদি সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন। তাদের দাবি, ভারতও শ্রীলঙ্কার পথেই হাঁটছে। রাহুল গান্ধীর ভাষ্যমতে, মানুষকে বিভ্রান্ত করে সত্য লুকানো যায় না।
সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক সংকট বিরাজ করছে। যার মূলে রয়েছে চরম অর্থনৈতিক সংকট। প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রী তো বটেই, জনরোষ থেকে ছাড় পাচ্ছেন না লঙ্কান মন্ত্রী, এমপি, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারাও। সম্প্রতি পথ আটকে তাদের ওপর যেমন শারীরিক আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে, তেমনি আগুন লাগানো হয়েছে অর্ধশতাধিক নেতার বাড়ি-গাড়িতে।
গত সপ্তাহে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ-সহিংসতায় শ্রীলঙ্কায় প্রাণ হারিয়েছেন এক এমপিসহ নয়জন, আহত হয়েছেন তিনশ’ জনেরও বেশি। বিতর্কের মুখে শেষপর্যন্ত পদত্যাগ করেন লঙ্কান প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। তিনিসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে শ্রীলঙ্কার আদালত।
কয়েক মাস ধরে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক পতন প্রত্যক্ষ করছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা, যা দেশটির সরকারকে গভীর সংকটে ফেলেছে। প্রশ্ন হতে পারে, ভারত মহাসাগরীয় প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ দ্বীপদেশটি কীভাবে এই সংকটে পড়ল। মূলত অর্থনৈতিক সংকটই দেশটিকে মারাত্মক সহিংসতায় নিপতিত করেছে। সবশেষ গত সোমবার (৯ মে) সকাল থেকে শুরু হওয়া সহিংসতায় ক্ষমতাসীন সরকারের এক সংসদ সদস্যসহ অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ।
কিছুদিন আগেও শ্রীলঙ্কা ছিল দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে উন্নত অর্থনীতির দেশ। মাথাপিছু জিডিপি ছিল ৪ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি। শ্রীলঙ্কার ৯৫ শতাংশ মানুষ শিক্ষিত। শিক্ষাব্যবস্থা দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের মধ্যে ছিল সবচেয়ে এগিয়ে। ভারতের কেরালার পর দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থাও দক্ষিণ এশিয়ায় সেরা। কিন্তু শ্রীলঙ্কা এখন ৭৪ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মুখোমুখি।