জলবায়ু পরিবর্তনের চলমান প্রবণতার কারণে দাবদাহের নতুন রেকর্ড গড়তে পারে ভারত-পাকিস্তান। এ রকম শতভাগ শঙ্কা রয়েছে বলে বুধবার (১৮ মে) ব্রিটিশ আবহাওয়া সংস্থার এক প্রতিবেদন বলছে।
বিবিসি উর্দু জানিয়েছে, ২০১০ সালের উষ্ণতর আবহাওয়ার চেয়েও এই অঞ্চল উত্তপ্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রতি তিন বছর পর পর এ অঞ্চলের মানুষকে এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।-খবর এক্সপ্রেস ট্রিবিউন ও সিএনবিসির
ব্রিটিশ আবহাওয়া সংস্থা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়াই ৩১২ বছরে অন্তত একবার এমন আবহাওয়া আসে। জলবায়ু পরিবর্তনের চারটি বড় উপসর্গ গ্রিনহাউস গ্যাসের ঘনত্ব, সাগরের তাপমাত্রা, সমুদ্রের উচ্চতা ও অম্লতা বেড়ে রেকর্ড স্থাপন করেছে।
ব্রিটিশ প্রতিবেদনকে ‘হতাশাজনক সংবাদ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্থনিও গুতেরেস। জলবায়ু পরিবর্তন জয়ে মানবতা ব্যর্থ হওয়ায় তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
পরিস্থিতি যেভাবে বদলাচ্ছে, তাতে চলতি সপ্তাহান্তে দবদাহের তীব্রতা ভয়াবহ রূপ নেবে। মার্চ থেকে শুরু হওয়া প্রখর তাপমাত্রা দুই প্রতিবেশী দেশে ইতিমধ্যে করুণ রেকর্ড গড়েছে। এতে লাখ লাখ মানুষ তাদের নিত্যদিনের কর্মকাণ্ডে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছে।
গেল ১২২ বছরের মধ্যে মার্চ ছিল ভারতের উষ্ণতম মাস, আর এপ্রিল তৃতীয়-উষ্ণতম। আর পাকিস্তান এপ্রিলে উষ্ণতম আবহাওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়েছে। প্রতিবেদনের লেখক নিকোস ক্রিসটিডিস বলেন, এপ্রিল ও মে মাসে প্রাকবর্ষা জলবায়ুর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো উষ্ণতার ব্যাপ্তি। আমাদের গবেষণা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপের মাত্রা নতুন রেকর্ড স্পর্শ করবে।
এপ্রিলে ভারতের গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১০ সালে যেটা ছিল ৩৫ দশমিক ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৬ সালে এই তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গার্ডিয়ানের খবর বলছে, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়িাস কিংবা স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত সাড়ে চার ডিগ্রি বেশি হলেই দাবদাহ ঘোষণা করা হয়। সম্প্রতি পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের তুরবাতে কয়েক দফায় তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে।
সোমবার (১৬ মে) ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির বিভিন্ন অংশে তাপমাত্রা ছিল ৪৯ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস। গেল মার্চ থেকে শহরটিতে পঞ্চমবারের মতো তাপপ্রবাহ বইছে। এতে নাগরিক জীবন অচল হয়ে পড়েছে। মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির পাশাপাশি মারাত্মক পানি সংকটের শঙ্কা প্রকাশ করেন কর্মকর্তারা।
গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। ফ্রান্স টোয়েন্টিফোরের খবর বলছে, পাকিস্তানের বিশাল অঞ্চল ও প্রতিবেশী ভারতে এপ্রিল থেকেই আবহাওয়া চরম রূপ নিতে শুরু করেছে।
পাকিস্তানের আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, শুক্রবার (১৩ মে) সিন্ধ প্রদেশের জ্যাকোবাবাদ শহরে তাপমাত্রা ছিল ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্থানীয় শ্রমিক শফি মোহাম্মদ বলেন, মনে হচ্ছে, চারপাশে আগুন জ্বলছে।
নাটকীয়ভাবে বিশ্বে দাবদাহ, প্রাণঘাতী বন্যা ও দাবানল বাড়ছে। বিবিসির খবর বলছে, সপ্তাহান্তে পাকিস্তানের কিছু অংশ ও ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তাপমাত্রা পঞ্চাশ ডিগ্রি সেলসিয়িাস ছাড়িয়ে যেতে পারে।
ভারতের আবহাওয়া অফিস বলছে, গত কয়েক দিন ধরেই হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ড, পাঞ্জাব ও বিহারের মতো রাজ্যগুলোতে তাপপ্রবাহ ক্রমাগত বাড়ছে। বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রা দুই থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস পড়ে গেলেও প্রচণ্ড গরম থেকে রেহাই মিলছে না।
চলতি গ্রীষ্মে উত্তর ভারতে লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকিতে পড়েছে। তাপের তীব্রতা থেকে আপাতত রেহাই মেলার সম্ভাবনা নেই। স্বাভাবিকের চেয়ে তাপমাত্রা বাড়ছে দ্রুতগতিতে। প্রচণ্ড তাপের ক্ষতিকর প্রভাব লাঘবে পরিকল্পনা আঁটতে মুখ্যমন্ত্রীদের নির্দেশ দিয়েছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
দাবদাহ ভারতে সচরাচর ঘটনা, বিশেষ করে মে ও জুন মাসে। এ বছরে আগেভাগেই গ্রীষ্ম এসেছে। তাপমাত্রা বাড়তে থাকে মার্চের শুরু থেকেই। আর তখনই দাবদাহের প্রভাব শুরু হয়।