সিলেট: পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টিতে সিলেটের ছয় উপজেলার পাশাপাশি নগরের বন্যা পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছে। আরো নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। সরকারি-বেসরকারি অফিসের পাশাপাশি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও জলমগ্ন অবস্থায় দেখা গেছে। পানিবন্দি মানুষ শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছেন। এতে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন মানুষ। দিন দিন ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি।
এ অবস্থায় আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, ২৩ জুন পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। তবে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে।
জেলা প্রশাসন কার্যলয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যাকবলিতদের জন্য দ্বিতীয় দফায় ১০০ মেট্রিক টন চাল এবং তিন হাজার প্যাকেট শুকানো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর আগে ১২৯ মেট্রিক টন চাল ও এক হাজার প্যাকেট শুকানো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মা. মজিবর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, কিছু সরকারি স্থাপনায় পানি উঠলেও সেবা ব্যাহত হচ্ছে না। সব প্রতিষ্ঠানেরই স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
বন্যায় জেলাজুড়ে ১৯৯টি আশ্রয়েকেন্দ্র খোলা হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, এসব আশ্রয়কেন্দ্রে খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এছাড়া ইউএনওদের সার্বক্ষণিক নজরদারি করার নির্দেশনা দেয়া আছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণকেন্দ্রের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটের প্রধান নদী সুরমা কানাইঘাট (সিলেট) পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে, তবে এখনো তা বিপদসীমার ১২৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে সুনমাগঞ্জ পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া কুশিয়ারা নদীর পানি অমলসিদ (সিলেট) পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার বেড়ে এখন বিপদসীমার ১৫৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শেওলা (সিলেট) পয়েন্টে নদীটির পানি বেড়েছে ৮ সেন্টিমিটার, এখন তা বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট ও সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের কতিপয় স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
বুধবার নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সুরমার তীরঘেঁষা নগরের শাহজালাল উপশহর, সোবহানীঘাট, ছড়ারপাড়, কালিঘাট, তালতলা, কাজিরবাজার, শেখঘাট, ঘাসিটুলা, লালাদিঘীর পার এলাকাসহ মহানগরীর অন্তত ১৫টি ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বন্যার পানিতে শত শত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাসা-বাড়ির জিনিসপত্র ভিজে নষ্ট হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে সিলেট ফায়ার সার্ভিস অফিস, সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, উপমহাপুলিশ পরিদর্শকের কার্যালয়, কোতোয়ালী থানা, বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়, তোপখানা সড়ক ও জনপথের কার্যালয়, সোবহানীঘাট পুলিশ ফাঁড়ি, বিদ্যুতের আঞ্চলিক কার্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এছাড়া নগর ও উপজেলাগুলোর বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও পানি ঢুকে গেছে। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে সবখানে।
এদিকে, বন্যা পরিস্থিতির অবনতিতে সিলেট নগরীর ৭টি ওয়ার্ডে ১৭টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করেছে সিটি করপোরেশন। সেগুলো হচ্ছে, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে কিশোরী মোহন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মিরাবাজার, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে চালিবন্দর রামকৃষ্ণ উচ্চ বিদ্যালয়, চালিবন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে আব্দুল হামিদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাছিমপুর, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে বোরহান উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উমরশাহ তেরোরতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে মির্জাজাঙ্গাল স্কুল, মনিপুরী রাজবাড়ি আশ্রয় কেন্দ্র ও মাছুদিঘীর পার, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ঘাসিটুলা স্কুল, ইউসেফ স্কুল, কানিশাইল স্কুল, জালালাবাদ স্কুল, বেতের বাজার কাউন্সিলর কার্যালয়ের পাশের ৪তলা ভবন, ২৬ নং ওয়ার্ডে রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে হবিনন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সিলেট।
এ ব্যাপারে সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ চৌধুরী নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, আগামী কয়েকদিন এই বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। এছাড়াও ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বৃষ্টিও কমছে না। তাই পাহাড়ি ঢল নামছে এবং আমাদের দেশেও পানি বাড়ছে।