খুলনায় মৌসুমের শুরুতেই চিংড়িতে মড়ক

Slider অর্থ ও বাণিজ্য


পাইকগাছা (খুলনা): খুলনার দক্ষিণাঞ্চলে মৌসুমের শুরুতেই ভাইরাসজনিত কারণে মরে যাচ্ছে ঘেরের বাগদা চিংড়ি। এতে দিশেহারা মৎস্যচাষিরা। এই ক্ষতি কিভাবে পুষিয়ে উঠবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।

মৎস্য বিভাগ বলছে, জলবায়ু পরিবর্তন, অনাবৃষ্টি, ঘেরে পানিস্বল্পতা, অতিরিক্ত পোনা মজুদ, তাপমাত্রা ও পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় চিংড়ি মরে যেতে পারে। এসব নানা কারণকেই চাষিরা ভাইরাস সংক্রমণ হচ্ছে বলে ধারণা করছেন। আবার অনেকে মনে করছেন, চিংড়ির ব্যাপক মড়কের জন্য পানি ও খাদ্যই দায়ী। এ অবস্থা চলতে থাকলে এ উপজেলায় চিংড়ি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হবে।

উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবন উপকূলীয় পাইকগাছা উপজেলায় মোট কৃষিজমির পরিমাণ ৩০ হাজার হেক্টর, যার মধ্যে বর্তমানে প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে হয়েছে লোনাপানির চিংড়ি চাষ। এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৮ হাজার চিংড়িঘের রয়েছে। এ বছর উপজেলায় চিংড়ি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার মেট্রিকটন। তবে যেভাবে চিংড়ি মারা যাচ্ছে, তাতে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

এ বিষয়ে সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, এ উপজেলায় আশির দশক থেকে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয় লোনাপানির চিংড়ি চাষ। সনাতন পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষের ফলে মাটির উর্বরাশক্তি নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণেও চিংড়ি মরে যেতে পারে।

দেলুটি ইউনিয়নের চিংড়িচাষি কার্তিক চন্দ্র মণ্ডল বলেন, আমার ২০ বিঘার একটি মৎস্যঘের রয়েছে। বছরের শুরুতে ঘের প্রস্তুত করে বাগদা পোনা ছেড়েছি। কিন্তু ৪২ দিনের মাথায় চিংড়ি মরতে শুরু করছে। উপজেলা মৎস্য অফিসের পরামর্শ নিয়েও মড়ক বন্ধ করা যাচ্ছে না। এই ঘেরের মাছ বিক্রি করেই সংসার চালাতে হয় আমার।

লতা ইউনিয়নের অসিত বরণ বলেন, আমার ৪০ বিঘার একটি চিংড়িঘের রয়েছে। সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে এ বছর ঘের করেছি। কিন্তু বছরের প্রথম থেকেই মাছ মরতে শুরু করছে। একদিকে সমিতির কিস্তির টাকা, অন্যদিকে সংসার- দিশেহারা আমি। চিংড়িচাষি রেজাউল করিম জানান, মৌসুমের শুরুতেই দেখা দিচ্ছে মড়ক।

ঘোষাল গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোজাম্মেল হক জানান, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের অনেকেই লাভের আশায় ধারদেনা করে চিংড়ি চাষ করেন। সফলতা না এলে তারা বিপদে পড়বেন। তিনি জানান, আমার জানা অনেকেই আছেন ঋণের চাপ সইতে না পেরে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। কেউ কেউ সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছেন।

দুই-এক বছর চিংড়ির ফলন কিছুটা ভালো হওয়ায় এবার অনেকেই কোমর বেঁধে নেমেছেন চিংড়িচাষে। কিন্তু মৌসুমের শুরুতে চিংড়ি ঘেরে মড়ক লাগায় সম্ভাবনাময় এ শিল্পটি এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার দাশ জানান, বাগদা চাষের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর লবণসহিষ্ণু মাত্রা হলো সর্বোচ্চ ২৫ পার্টস পার থাউজেন্ড (পিপিটি)। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে পরিবেশের তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। চিংড়ি চাষের জন্য যে পরিমাণ পানি প্রয়োজন, তাও নেই ঘেরগুলোতে। অন্যদিকে বাগদা চিংড়ি পোনার দাম কম হওয়ায় চাষিরা পরিমাণের চেয়ে বেশি পোনা ছেড়েছেন। সে কারণে খাদ্যঘাটতি ও মাছের ঘেরের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ায় মাছ মরে যাচ্ছে।

প্রতি বিঘা জমিতে ৫০০ মাছ ছাড়ার কথা থাকলেও চাষিরা বিঘাপ্রতি পাঁচ হাজার মাছ ছেড়েছেন। এ সমস্যা সমাধানে ঘেরে পানি বৃদ্ধি, বেশি খাদ্য সরবরাহের জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। চিংড়িচাষ ছেড়ে আধুনিক পদ্ধতির আশ্রয় নেয়ারও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *