এবার পেঁয়াজের বাজারে উত্তাপ ২ সপ্তাহের ব্যবধানে দাম দ্বিগুণ

Slider অর্থ ও বাণিজ্য


ভোজ্যতেল বিশেষ করে সয়াবিনের বাজার নিয়ে অস্থিরতা চলছে গত বেশ কিছু দিন ধরে। প্রতি লিটারে ৩৮-৪০ টাকা দাম বাড়িয়েও ভোক্তারা কয়েক দিন তা পাননি। অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামও চড়া। গৃহিণীর রান্নায় অন্যতম (মসলা) অনুষঙ্গ পেঁয়াজের দাম এতদিন মোটামুটি ভোক্তার হাতের মুঠোয় থাকলেও গত কিছুদিনের ব্যবধানে বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

কৃষি বিপণন অধিদফতরের গতকালের তথ্যানুযায়ী, দেশী পেঁয়াজের খুচরা মূল্য ৪০-৪৫ টাকা কেজি, যা ১৫ দিন আগে ছিল ২৫-৩০ টাকা। একইভাবে ভারত থেকে আমদানির পেঁয়াজের দাম ছিল ২৬-৩২ টাকা কেজি। এখন তা ৪০-৪৫ টাকা। সরকারি এই হিসাবের চেয়েও কিছুটা বেশি দামে রাজধানীর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।
আমদানি এবং দেশী উভয় ধরনের ভালো মানের পেঁয়াজের দাম ৫০ টাকা কেজিতে ঠেকেছে, যা আগে ছিল ২৫-৩০ টাকা।

দক্ষিণ বনশ্রীর বাসিন্দা রাবেয়া খাতুন বলেন, হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে আমরা যারা ভোক্তা, বিপাকে পড়েছি। এমনিতেই সয়াবিনের উচ্চমূল্য দিয়ে কিনতে হয়েছে। শাকসবজি, মাছ গোশতের বাজার চড়া আগে থেকেই। পেঁয়াজের দাম একটু কম থাকলেও তা এখন অন্যান্য পণ্যের মতোই, আকাশচুম্বী।
জানা যায়, রাজধানীর কাওরানবাজারসহ বিভিন্ন বাজারে খুচরা দোকানে দেশী মুড়িকাটা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, মেহেরপুরের সুখসাগর জাতের পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৪০-৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কৃষকের স্বার্থ বিবেচনায় সরকার আপাতত পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছে। যাতে কৃষকরা পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য পায়। কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক গত বুধবার এক অনুষ্ঠানে এই বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ক’দিন আগেই পেঁয়াজের ভরা মৌসুমেও কৃষকরা দাম পাচ্ছিল না। এখন একটু দাম বৃদ্ধির কারণে কৃষকরা কিছুটা লাভবান হচ্ছে। তাদের দিকটাও কিন্তু আমাদের ভাবতে হবে।
তবে সংশ্লিষ্ট অনেকে বলছেন, সরকার কৃষকের কথা বিবেচনা করে নতুন করে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন বন্ধ রেখেছে। কিন্তু কৃষক আদৌ পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে কি না- তা দেখা দরকার। কারণ, প্রান্তিক কৃষকরা ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ ওঠানোর সাথে সাথেই তা বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে পেঁয়াজের লাভও মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে চলে যাচ্ছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, গত ২৯ মার্চ পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদনের মেয়াদ শেষ হয়। সে সময় রমজানে দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে চলতি মাসের ৫ মে পর্যন্ত আমদানির সময় বাড়ানো হয়। এরপর নতুন করে আমদানির অনুমোদন না দেয়ায় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। হিলি স্থলবন্দর সূত্র জানায়, সর্বশেষ গত ৩০ এপ্রিল এই বন্দর দিয়ে এক হাজার ৯০২ টন পেঁয়াজ দেশে এসেছে। ঈদের জন্য ১ মে থেকে ৬ মে পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বন্ধ ছিল। কিন্তু ছুটি শেষে বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি শুরু হলেও আর কোনো পেঁয়াজ আসেনি।

বগুড়ায় কেজিতে ১০ টাকা বৃদ্ধি : বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ার বাজারে সয়াবিন তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে গিয়ে যখন ক্রেতারা নাকানি চুবানি খাচ্ছেন ঠিক সেই মুহূর্তে পেঁয়াজের দাম এক লাফে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে গেছে। ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় দেশীয় পেঁয়াজের ওপর চাপ বেড়ে যাওয়ায় এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দীর্ঘদিন আমদানি বন্ধ থাকলে দাম আরো বাড়বে । তবে দেশে এ মুহূর্তে পর্যাপ্ত দেশীয় পেঁয়াজ মজুদ থাকার পরও দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না ক্রেতারা।

বগুড়ার রাজাবাজার, ফতেহ আলী বাজার, বকশিবাজার ঘুরে দেখা গেছে, এসব বাজারে ভারতীয় ও দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ রয়েছে। এরপরও দাম ঊর্ধ্বমুখী। এক সপ্তাহ আগে এই বাজারে দেশী পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হয়েছিল ২৫ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে যা খুচরা বিক্রি হয়েছিল ২৭ থেকে ৩২ টাকা দরে। গত তিন দিনের ব্যবধানে সেই পেঁয়াজ বুধবার খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা দরে।
বকশিবাজারের পেঁয়াজ ক্রেতা বাদল বলেন, হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। আমরা দুই দিন আগে ৩২ থেকে ৩৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ কিনেছি। কিন্তু আজকে ৪০ টাকা কেজি কিনতে হচ্ছে ।
রাজাবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী হান্নান বলেন, হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। দেশী পেঁয়াজের সরবরাহের পাশাপাশি ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি কমে গেছে। তাই দামও বেড়ে গেছে। তাই আবারো আমদানি বাড়লে দাম কমে যাবে ।

রাজাবাজার আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল প্রসাদ রাজ বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় বাজারে দাম বেড়েছে। আমদানি চালু না হলে পেঁয়াজের দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *