কৃষি বিভাগ বলছে, দেশে এবার রেকর্ড প্রায় ১৬ লাখ টন তরমুজ উৎপাদিত হয়েছে এবং দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোসহ দেশের প্রায় সর্বত্রই তরমুজ উৎপাদনে দারুণভাবে সফল হয়েছে চাষিরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মদ মেহেদি মাসুদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, দেশের নানা জায়গায় শিক্ষিত তরুণরা তরমুজ উৎপাদনে সাফল্য পেয়েছেন এবং এটিই এবারের রেকর্ড উৎপাদনের মূল কারণ।
উল্লেখ্য, তরমুজ মূলত গ্রীষ্মকালীন ফল। যদিও এখন বারমাসি জাতের তরমুজ ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। তবে বাজারে সাধারণত সবুজ রঙয়ের ডোরাকাটা এবং মসৃণ তরমুজ দেখা যায়, যার ভেতরটা লাল।
এর বাইরে গত কয়েক বছর ধরে উৎপাদন বাড়ছে হলুদ তরমুজের, যার ভেতরটা টকটকে লাল এবং খেতে দারুণ সুস্বাদু।
কৃষি বিভাগ বলছে, সঠিকভাবে চাষ করা গেলে ভালো জাতের তরমুজ থেকে হেক্টরপ্রতি ৫০-৬০ টন ফলন পাওয়া সম্ভব।
হাইব্রিডে সয়লাব, জনপ্রিয়তায় বাংলালিংক
ড. মেহেদি মাসুদ বিবিসি বাংলাকে বলছেন যে, দেশে হাইব্রিড জাতের তরমুজের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। কারণ ফলটি আকারে অনেক বড় হয় এবং উৎপাদনও হয় অনেক বেশি।
বরিশালের একজন তরমুজ চাষি আবদুস সামাদ বলছেন, বারোমাসি আর নানা জাতের তরমুজের চাষ করছেন তারা এবং রেকর্ড ফলন পেয়েছেন তারা।
ড. মাসুদ বলছেন, হাইব্রিডের মধ্যে হানিডিউ, ব্লাককুইন এবং বাংলালিংক সহ কয়েকটি জাতের চাষই এখন বেশি হচ্ছে।
‘মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ কিছু এলাকায় শিক্ষিত তরুণরা এগিয়ে এসেছে তরমুজ চাষে। এছাড়া খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশালসহ বিভিন্ন দক্ষিণের বিস্তীর্ণ এলাকা আর কিছু চর এলাকায় বারোমাসি আর হাইব্রিড জাতগুলোর ব্যাপক চাষ হয়েছে,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
তিনি জানান, ডোরাকাটা ধরণের দেখতে তরমুজই বাংলালিংক তরমুজ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে দেশে।
সবুজের পাশাপাশি হলুদ আর কালো তরমুজের জনপ্রিয়তা বাড়ছে
বাজারে এই তিন রঙয়ের তরমুজ হরদম দেখা মেলে। মূলত আধুনিক নানা জাত এখন কৃষকদের নাগালে থাকায় সহজে নানা রঙয়ের তরমুজের ফলন বাড়ছে।
সরকারি পোর্টাল কৃষি বাতায়নে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্পনা রহমান লিখেছেন যে, তরমুজের আধুনিক জাতগুলোর মধ্যে আছে টপইল্ড, গ্লোরি, সুগার বেবি, বেবি তরমুজ (বারমাসি), ভিক্টর সুপার এফওয়ান, ব্লাক জায়ান্ট এফওয়ান ও গ্রিন ড্রাগন।
এছাড়া সুপার এম্পেরর, ট্রপিক্যাল ড্রাগন, আনারকলি, চ্যাম্পিয়ন, ব্ল্যাক ডায়মন্ড ও ব্ল্যাক সান জাতেরও জনপ্রিয়তা আছে।
আছে বাহারি নানা বিদেশি জাত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে খুলনায় নিজেকে কৃষিকাজে সম্পৃক্ত করেছেন তরিকুল ইসলাম। তিনি বলছেন, তারা বেশ কিছু বিদেশি জাতের তরমুজের চাষ করেছেন এবং এগুলো মানুষ দারুণভাবে গ্রহণও করেছে।
তরিকুল ইসলাম বলছেন, হলদু রঙয়ের তরমুজের মধ্যে সেরা জাতটির নাম হলো গোল্ডেন ক্রাউন। এছাড়া গোল্ডেন গ্লামার জাতের তরমুজটিও বাইরে হলুদ রঙয়ের কিন্তু ভেতরে লাল।
এছাড়া ভারতের মহারাষ্ট্রের ৭০৭ জাতের তরমুজটির গায়ের রঙ কালো। ভারতের আরেকটি জাত বাংলাদেশে জনপ্রিয় হচ্ছে সেটি হলো সাগর কিং।
এর বাইরে তাইওয়ানের বিসুলা জাতের তরমুজটির খোসা পাতলা হয়। এটি বাইরে হলদু আর ভেতরে লাল হয়।
তাইওয়ানেরই আরেকটি জাত বেশ সুস্বাদু যার নাম আনমল। এটি ভেতরে চিকচিকে হলুদ আর বাইরে সবুজ রঙয়ের হয়।
এসবের বাইরেও আরো অনেক জাতের তরমুজ আছে বিশ্বের নানা জায়গায়।
মৌসুমি ফলের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় ফল তরমুজ
ময়মনসিংহের গৃহিনী শাহানা জাহান বলছেন, তার দৃষ্টিতে তরমুজ সবচেয়ে রসালো আর সুস্বাদু।
‘আমার ভীষণ প্রিয় এই তরমুজ। এবার রোজার প্রতিদিন ইফতারে এ ফলটি আমরা পরিবারের সবাই খেয়েছি। গরমের মধ্যে এটার তুলনা হয় না,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
ঢাকার শরিফা আক্তার বলছেন, তরমুজের মৌসুমে তার পরিবারের নিয়মিতই খাওয়া হয় তরমুজ।
‘ছোট বড় সবাই তো পছন্দ করে। দারুণ মজার ফল। বড় একটা তরমুজ পরিবারের সবাই মিলে খাওয়া যায়,’ বলছিলেন তিনি।
বাংলাদেশে সাধারণত এপ্রিল মে মাসে তরমুজ বাজারে আসে। তবে এখন অন্য সময়েও তরমুজের দেখা মেলে বাজারে যার নাম দেয়া হয়েছে বারোমাসি তরমুজ।
ছোট আকারের বারোমাসি তরমুজের মধ্যে ব্লাক বেবি, ব্লাক প্রিন্স, জেসমিনসহ কয়েকটি জাত বেশ প্রচলিত হয়ে উঠেছে কারণ এগুলো বছরের যে কোনো সময় চাষ করা যায়।
তরমুজের নানা গুণ ও সমস্যা
তরমুজের সবচেয়ে বড় গুণ হলো, এটি শরীরে পানির ঘাটতি কমায় আর মানুষের ক্লান্তি কমিয়ে দেয়। তবে সমস্যা হলো এটি বেশি মাত্রায় একবারে খেয়ে ফেললে হজমের সমস্যা হতে পারে। এ কারণেই পুষ্টিবিদরা ভারী খাবার গ্রহণের পর তরমুজ না খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
আর সুগার বেশি থাকায় যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের এ ফলটি না খাওয়াই ভালো।
সূত্র : বিবিসি