বাংলাদেশে রেলভ্রমণ জনপ্রিয় হলেও, দীর্ঘদিন ধরে রেলের অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার অভিযোগও রয়েছে।
বাংলাদেশে রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিনা টিকেটে রেল ভ্রমণ করা এবং তাদেরকে জরিমানা করার কারণে রেলের একজন কর্মীকে শাস্তি দেয়ার একটি খবর দেশটির গণমাধ্যমে প্রকাশ হবার পর রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ওই তিনজন তার আত্মীয় কিনা, তা তিনি জানেন না।
বাংলাদেশের পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বুধবার রাতে আন্তঃনগর ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ ট্রেনে তিনজন যাত্রী বিনা টিকেটে এসি কেবিনে ভ্রমণ করছিলেন। বিনা টিকেটে ভ্রমণের জন্য ওই তিনজন যাত্রীকে জরিমানা করেন কর্তব্যরত টিটিই। পরদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা চলছে।
রেলমন্ত্রী বলছেন, যাত্রীদের কাছ থেকে ‘অসাদাচরণের’ লিখিত অভিযোগ পেয়ে ওই রেলকর্মীকে বরখাস্ত করা হয়।
দেখা যাচ্ছে, ঈদের সরকারি ছুটির মধ্যে যে রাতে ‘অসদাচরণের’ ঘটনা ঘটেছে, তার পরদিনই লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে, এবং ওই অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ওই রেলকর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশে সাধারণ কোন নাগরিকের কোন একটি অভিযোগের জেরে একজন সরকারি কর্মচারীকে এত দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাস্তির আওতায় আনার ঘটনা একেবারেই বিরল।
একাধিক গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয় যে, টিকেট পরীক্ষার সময় বিনা টিকেটে ভ্রমণকারী ওই তিনজন ব্যক্তি নিজেদের ‘রেলপথ মন্ত্রীর আত্মীয়’ বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। তারা বিনা টিকেটে এসি কেবিনে ভ্রমণ করছিলেন। ‘রেলপথ মন্ত্রীর আত্মীয়’ জানা সত্বেও টিকেট পরীক্ষক তাদের জরিমানা করে শোভন শ্রেণির টিকেট দেন এবং সেখানে যেতে বলেন, খবর স্থানীয় গণমাধ্যমের।
পরদিনই সাময়িক বরখাস্ত করা হয় টিটিই (রেল টিকেট পরীক্ষক) শফিকুল ইসলামকে।
পরে স্থানীয় সাংবাদিকদের শফিকুল ইসলাম বলেছেন, জরিমানা করার কারণেই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে তিনি মনে করেন।
সড়ক পথের তুলনায় রেলপথে যোগাযোগ তুলনামূলক কম ব্যয়বহুল ও আরামদায়ক বলে অনেকেই রেলে চলাচল পছন্দ করেন।
সড়ক পথের তুলনায় রেলপথে যোগাযোগ তুলনামূলক কম ব্যয়বহুল ও আরামদায়ক বলে অনেকেই রেলে চলাচল পছন্দ করেন।
অবশ্য মি. ইসলামের সাথে বিবিসির পক্ষ থেকে এ নিয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
যদিও রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলছেন, একজন টিটিই’র বরখাস্ত হওয়ার সাথে তার আত্মীয় পরিচয়দানের কোন সম্পর্ক নেই।
তবে তিনি বলেন, “আমি জানি না, আমি এখন পর্যন্ত জানি না এরা কারা। আমার কাছে কোন ইনফরমেশন নাই এরা কারা। ফলে কেউ পরিচয় দিয়েছে কী দেয়নি সেটা আমি জানি না।”
তিনি বিবিসিকে বলেছেন, বাংলাদেশ রেলওয়েতে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন বরখাস্ত হওয়া টিটিইর বিরুদ্ধে যাত্রীর সঙ্গে ‘অসদাচরণ’ করা হয়েছে এমন লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষাপটে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিয়েছে। এক্ষেত্রে মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে বিনা টিকেটে ভ্রমণ করা কাউকে জরিমানা করার অপরাধে কাউকে ‘সাসপেন্ড’ করা হয়েছে, বিষয়টি তেমন নয় বলে মন্তব্য করেছেন মি. ইসলাম।
তিনি বলেছেন, “আমি রেলওয়েতে খবর নিয়ে জেনেছি, তা হলে ওই টিটিই’র বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন যাত্রী যে তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে, এবং ইয়ে করেছে..। লিখিত কমপ্লেইনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিয়েছে রেলওয়ে। এখন হতে পারে টিটিইর যে অপরাধ সেটা থেকে সে নিজেকে সেভ করার জন্য এটা বলতেছে।”
লিখিত অভিযোগ দেওয়ামাত্রই ব্যবস্থা
বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বিবিসিকে একটি লিখিত অভিযোগের কপি পাঠিয়েছেন।
সেখানে ইমরুল কায়েস নামে এক ব্যক্তি হাতে লেখা চিঠিতে ওই টিটিইর বিরুদ্ধে, অতিরিক্ত টাকা দাবির এবং হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন।
এমনকি লিখিত অভিযোগে ওই টিটিইকে ‘মাদকাসক্ত’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠিটি ৫ই মে বৃহস্পতিবার তারিখে সাক্ষর করা হয়েছে।
অর্থাৎ মি. কায়েস ট্রেনে চড়ে ঢাকায় পৌঁছেই অভিযোগটি দায়ের করেছেন। আর অভিযোগ দেয়ার সাথে সাথেই টিটিই শফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম অবশ্য বিবিসিকে বলছেন, বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে।
টিটিইর কোন গাফিলতি আছে কি-না সেটাও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
“যদি প্রমাণিত হয় যে তার (টিটিই) দোষ ছিল না, তাহলে তার শাস্তি হবে না।”
কী হয়েছিল
খবরে বেরিয়েছে, চৌঠা মে রাতে আন্তঃনগর ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ ট্রেনে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশন থেকে তিনজন যাত্রী বিনা টিকেটে এসি কেবিনে ভ্রমণ করছিলেন।
ট্রেনটি খুলনা থেকে ঈশ্বরদী হয়ে ঢাকা আসছিল।
একাধিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ওই তিনজন যাত্রী রেলের একটি এয়ারকন্ডিশনড কামরায় ভ্রমণ করছিলেন।
কিন্তু তাদের কোন টিকেট ছিল না। তারা নিজেদের ‘রেলমন্ত্রীর আত্মীয়’ পরিচয় দিয়ে শোভন টিকেট কেটে দিয়ে এসি কামরায় ভ্রমণ করতে দেয়ার অনুরোধ করেন।
বিনা টিকেটে ভ্রমণের জন্য ওই তিনজন যাত্রীকে জরিমানা করেন কর্তব্যরত টিটিই।
পরদিন বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট টিটিইকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জানানো হয়।
বরখাস্ত হওয়া টিটিই রেলওয়ে জংশন ঈশ্বরদীর টিটিই হেডকোয়ার্টারের সঙ্গে সংযুক্ত।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা চলছে।
বাংলাদেশে রেলভ্রমণ জনপ্রিয় হলেও, দীর্ঘদিন ধরে রেলের অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার অভিযোগও রয়েছে।