মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় বন্ধ হয়ে গেছে নেপালে বাংলাদেশি মোবাইল হ্যান্ডসেট রপ্তানি। নীতিনির্ধারনী জটিলতায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। মেইড ইন বাংলাদেশের ট্যাগ লাগিয়ে প্রথমবারের মতো নেপালে মোবাইল হ্যান্ডসেট রপ্তানি শুরু করে সিম্ফনি। গতবছরের অক্টোবরে নেপালে তিনটি মডেলের প্রায় ১৫ হাজার মোবাইল সরাসরি এ্যাপেক্স গ্রুপের কাছে পাঠায় সিম্ফনি। ২২শে জানুয়ারি আরও ১০ হাজার সেট পাঠানো হয়। টার্গেট ছিলো মাসে অন্তত ১০ হাজার সেট নেপালের বাজারে বাজারজাত করা। কিন্তু সরকারি প্রণোদনার অভাবে সেই পরিকল্পনা আর বাস্তবায়ন করা হয়নি। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে এরইমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। শিগগিরই হয়তো সমাধান হবে। তখন আবার বিদেশের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি মোবাইল হ্যান্ডসেট বাজারজাত করা সম্ভব হবে
এদিকে বাংলাদেশের তৈরি মোবাইল হ্যান্ডসেট এরইমধ্যে নেপালের বাজারে ব্যপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে বলে দাবি করেন সিম্ফনি কর্তৃপক্ষ। তারা বলেন, গুনগতমানের কারণে আমাদের তৈরি হ্যান্ডসেট নেপালের বাজারে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এরইমধ্যে একটা চাহিদা তৈরি হয়েছে। এমন একটা পরিস্থিতিতে আমাদের হ্যান্ডসেট রপ্তানি বন্ধ করতে হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সিম্ফনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকারিয়া শহীদ বলেন, মার্চ মাস থেকে নেপালে মোবাইল হ্যান্ডসেট রপ্তানি বন্ধ করতে হয়েছে। আমরা সরকারের প্রণোদনার অপেক্ষায় রয়েছি। এটা ছাড়া হ্যান্ডসেট রপ্তানি করতে গেলে অনেক লস হয়। সবকিছু ঠিক হলে আবার মোবাইল হ্যান্ডসেট রপ্তানি করা হবে। নেপালের পাশাপাশি খুব শিগগিরই বাংলাদেশ থেকে উৎপাদিত সিম্ফনির মোবাইল হ্যান্ডসেট রপ্তানি করার পরিকল্পনা করা হয় নাইজেরিয়া, সুদান, ভিয়েতনাম ও শ্রীলংকায়। আপাতত সেই পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে। এদিকে স্থানীয় উৎপাদনশীল খাতে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেবেলের পণ্য তৈরি করে এমন খাতে আগামী অর্থবছরেও নীতি সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআরের বাজেট সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যমান ভ্যাট আইনকে আরো আরো ব্যবসাবান্ধব করতে বেশকিছু ধারায় সংশোধন আনার বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে রাজস্ব আদায়কারী এ সংস্থাটির। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর কাছ থেকে পাওয়া বাজেট প্রস্তাব তারা পর্যালোচনা করছেন। তবে যে প্রস্তাবই তৈরি হোক, তা অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর চূড়ান্ত হবে। স্থানীয় শিল্পের প্রসারে এনবিআরের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি বিস্তৃত করার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহাম্মদ রুমাতুল মুনীম। সংশ্লিষ্টরা জানান,স্থানীয় শিল্পের জন্য গত কয়েক বছর ধরেই আয়কর ও ভ্যাটসহ বিভিন্ন ধরণের ছাড় দিয়ে আসছে সরকার। সব ক্ষেত্রে না হলেও কিছু ক্ষেত্রে এর সুফল মিলছে। এক সময় ফ্রিজ, টেলিভিশন ও এসি আমদানি নির্ভর হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্থানীয় শিল্প গড়ে উঠায় এখন আমদানি নির্ভরতা অনেক কমেছে। গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় মোবাইল ফোন শিল্পের প্রসারের সরকার কর অব্যাহতির পাশাপাশি ভ্যাটও অব্যাহতি দিয়ে আসছে। স্থানীয় উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, এর ফলে স্থানীয় চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ স্মার্ট ফোন ও ৫০ শতাংশ ফিচার ফোনের চাহিদা এখানকার কোম্পানিগুলো পূরণ করছে। রপ্তানি প্রসঙ্গে সিম্ফনি জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে সিম্ফনি মোবাইলই প্রথম সরাসরি ব্র্যান্ড নেইম নিয়েই ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত স্মার্টফোন রপ্তানি শুরু করে। এটাকে তারা দেশের রপ্তানি খাতে নতুন এক মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করছে। জাকারিয়া শহীদ বলেন, সিম্ফনি মোবাইল বাংলাদেশের ব্র্যান্ড। বাংলাদেশ থেকে আমরা প্রতি মাসেই ১০ হাজার প্রডাক্ট নেপালের মার্কেটে রপ্তানি করবো-এমন টার্গেট ছিলো। আমাদের ফ্যাক্টরিতে প্রতি মাসে ১০ লাখ প্রডাক্ট আমরা উৎপাদন করতে পারি। এই ফ্যাক্টরিতে ১৩ শ মানুষ কাজ করছে। তারা সবাই বাংলাদেশি। এর পাশাপাশি প্রায় আরো কয়েক লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই উৎপাদন কার্যক্রম এর সাথে জড়িত আছে। তিনি বলেন, মানের দিক দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় কোন অংশে কম নয় আমাদের তৈরি হ্যান্ডসেটগুলো। একেকটি হ্যান্ডসেটের গুণগত মান ঠিক রাখতে ৮টি স্তর পার করানো হয়। এখন যেসব হ্যান্ডসেট রপ্তানি করা হচ্ছে তার সবগুলোই ফোর জি প্রযুক্তি সাপোর্টেড। খুব শিগগিরই আমরা ফাইভ জি সাপোর্ট নির্ভর হ্যান্ডসেট উৎপাদনে যাবো। ২০১৮ সালে সিম্ফনি মোবাইল প্রায় ৫৫ হাজার স্কয়ারফিট জায়গায় তাদের যাত্রা শুরু করে আশুলিয়ার জিরাবোতে। এখন আশুলিয়ার আউকপাড়া ডেইরি ফার্মে নিজস্ব জমিতে সিম্ফনি মোবাইল এর ফ্যাক্টরিটি প্রায় ২ লাখ স্কয়ারফিট জায়গার ওপর নির্মিত যেখানে প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মোবাইলফোন উৎপাদিত হচ্ছে। স্মার্টফোনের পাশাপাশি মোবাইল ফোনের নানা যন্ত্রাংশ এবং এক্সেসরিজও তৈরি করছে সিম্ফনি। সিম্ফনির কারখানায় প্রতি মাসে ৮ লাখ চার্জার, ৮ লাখ ব্যাটারি এবং ৮ লাখ ইয়ারফোন উৎপাদিত হচ্ছে, সামনে তা আরো বাড়বে বলে জানিয়েছে সিম্ফনি কতৃপক্ষ। এছাড়াও মেইড ইন বাংলাদেশ ট্যাবলেট এর ঘোষণাও দিয়েছেন জাকারিয়া শাহীদ।