প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য আবাসন নিশ্চিত করার সরকারের লক্ষ্যমাত্রার অংশ হিসেবে ঈদুল ফিতরের আগে আজ মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ৩২ হাজার ৯০৪টি বাড়ি হস্তান্তর করবেন।
মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে একটি ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাড়ি হস্তান্তর অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন।
এর আগে রোববার (২৪ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব (পিএমও) মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া পিএমওতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, সরকার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ৩২ হাজার ৯০৪টি বাড়ি হস্তান্তর করবে।
তিনি উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার পোড়াদিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প, বরগুনা জেলার বরগুনা সদর উপজেলার খেজুরতলা আশ্রয়ণ প্রকল্প, সিরাজগঞ্জ জেলার সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার খোকশাবাড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলার হাজীগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প হস্তান্তর অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত হবেন।
এদিন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকী এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান প্রমুখ।
তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া জানান, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তৃতীয় ধাপে আরও ৬৫ হাজার ৬৭৪টি একক ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আশ্রয়ণ-২-এর তৃতীয় ধাপে বাড়িগুলোকে আরও টেকসই ও জলবায়ু-সহনশীল করতে সরকার খরচ বাড়িয়েছে এবং নকশায় পরিবর্তন এনেছে। এখন ভূমিহীন ও গৃহহীনরা দুই দশমিক দুই শতাংশ জমিসহ উন্নত মানের আবাস পাবেন।
তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া জানান, বাড়িগুলোকে আরও টেকসই ও দর্শনীয় করতে বাড়ি প্রতি খরচ ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাড়িগুলোকে আরও টেকসই করার জন্য সরকার শক্তিশালী গ্রেট-বিম, লিন্টেল এবং রিইনফোর্সড কংক্রিট কলাম (আরসিসি) পিলার বিশিষ্ট বাড়ি নির্মাণ করছে।
তিনি আরও জানান, প্রকল্পের প্রথম এবং দ্বিতীয় ধাপে মোট ১,১৭,৩২৯টি একক বাড়ি তৈরি করা হয়েছে এবং চলতি অর্থবছর ২০২১-২০২২ পর্যন্ত ১ লাখ ৮৩ হাজার তিনটি বাড়ি বরাদ্দ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, চলতি অর্থবছর পর্যন্ত একক বাড়ি নির্মাণের জন্য ৩ হাজার ৯৭২ কোটি ৭ লাখ ৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া তৃতীয় ধাপের আওতায় চরাঞ্চলের জন্য বিশেষভাবে তৈরি প্রায় ১২৪২টি বাড়ি বরাদ্দ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় বা বন্যার মতো যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিবেচনায় রেখে ঘরগুলো যাতে অন্য জায়গয় স্থানান্তর করা যায় সে জন্য বিশেষ নকশা করা হয়েছে। আর খাস জমি ছাড়াও সরকার গৃহহীন ও ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের জন্য ১৫৫ একর জমি কিনেছে। সরকার কর্তৃক জমি ক্রয় বিশ্বের একটি অনন্য উদাহরণ।
তিনি আরও বলেন, জমি ক্রয়ের জন্য ১০৮ কোটি ৯১ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। মোট ৬৮৯১টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ক্রয়কৃত জমিতে গৃহ নির্মাণ করে পুনর্বাসন করা হবে।
তিনি বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকার এসব প্রকল্পের জন্য বাড়ি নির্মাণের জন্য সারা দেশে অবৈধ দখল থেকে ৫৫১২.০৪ একর খাস জমি উদ্ধার করেছে। উদ্ধারকৃত খাস জমির আনুমানিক বাজারমূল্য ২৯৬৭ কোটি ৯ লাখ টাকা।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে, ১৯৯৭ সাল থেকে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত মোট ৭ লাখ ৮ হাজার তিনটি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পুনর্বাসিত মানুষের সংখ্যা ৩৫ লাখ ৪০ হাজার ১৫ জন (আনুমানিক একটি পরিবারে পাঁচজন ব্যক্তি হিসাবে)।
প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধারণা অনুযায়ী আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) সঙ্গে আবাসন কার্যক্রমের একটি বিশেষ সংযোগ রয়েছে।
বিভিন্ন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একক বাড়ি নির্মাণ প্রধান ভূমিকা রাখতে পারে।
আবাসন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, ক্ষমতায়ন, নারীর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত।