তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি শুধু মিথ্যাবাদীই নয়, একটি জালিয়াত রাজনৈতিক দল। মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের স্বাক্ষর জাল করা, ভারতের মন্ত্রী অমিত শাহের ফোন নিয়ে মিথ্যাচার, জার্মান রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য বিকৃত করা-এসব ঘটনাই তার প্রমাণ।
সোমবার (২৫ এপ্রিল) সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
বিএনপির বক্তব্যে জার্মান রাষ্ট্রদূতের ক্ষোভ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, জার্মানির মতো একটি দেশের রাষ্ট্রদূত একটি রাজনৈতিক দলের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে এরকম প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করা আমাদের দেশে নিকট অতীতে কখনো ঘটেনি। বিএনপি যে বিভিন্ন সময়ে বিদেশিদের সঙ্গে দেখা করে বিদেশিদের উদ্ধৃতি দিয়ে নানা কথাবার্তা বলে, তার অনেকগুলো যে বানোয়াট, সেটিরই প্রমাণ হচ্ছে জার্মান রাষ্ট্রদূতের ক্ষোভ প্রকাশ।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান বলেন, বিএনপি কয়েক বছর আগে ছয়জন কংগ্রেসম্যানের সই জাল করে তাদের পক্ষে বিবৃতি গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছিল। সে প্রেক্ষিতে তৎকালীন মার্কিন কংগ্রেসের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান এড রয়েস এবং একই কমিটির সদস্য এনজেল বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন, এই ধরনের জালিয়াতি অগ্রহণযোগ্য, এটি কখনো হওয়া উচিত নয়। শুধু তাই নয়, খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব সম্ভবত মারুফ কামাল একবার সাংবাদিকদের ডেকে বলেছিলেন যে, অমিত শাহ বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ফোন করেছেন। পরবর্তীতে অমিত শাহের অফিস থেকে বলা হয় যে, অমিত শাহ কোনো ফোন করেননি। এসব ঘটনাই প্রমাণ করে, বিএনপি একটি জালিয়াত রাজনৈতিক দল।
প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইন নিয়ে সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াবের বিবৃতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, নোয়াব তো বলেছে এ আইনের প্রয়োজন নেই। তাদের বিবৃতিতে এটিও বলা আছে যে, যেহেতু প্রেস কাউন্সিল, ডিএফপি আছে সুতরাং এ আইনের কোনো প্রয়োজন নেই। আপনারা জানেন, প্রকৃতপক্ষে প্রেস কাউন্সিল এবং ডিএফপি কিন্তু সংবাদপত্র, টেলিভিশন, রেডিও, অনলাইন গণমাধ্যমকর্মীদের চাকুরি সুরক্ষা নিয়ে কাজ করে না। টেলিভিশন, রেডিও বা অনলাইনের সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্যও কোনো আইন নেই।
সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য এ আইন হলে যখন তখন গণমাধ্যম থেকে যে ছাঁটাই হয় বা নিয়োগপত্র দেয় না সেটি করা সম্ভবপর হবে না, তখন বেতন, ভাতা, গ্র্যাচুইটি নিয়ম অনুযায়ী দিতে হবে, ছাঁটাই করলেও সাংবাদিকরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘মালিকদের একটি পক্ষ সবসময় চায় সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য এ ধরনের আইন না হোক এবং তাদের একটি পক্ষ এই আইন চায় না, সেটির বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে নোয়াবের এই বিবৃতি।’
মন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে আইন করার দাবিটা এসেছিল এবং সে কারণেই গণমাধ্যমকর্মী আইন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। মন্ত্রিসভার অনুমোদন, আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং, সংসদে উত্থাপনের পর এখন সংসদীয় কমিটির পরীক্ষাধীন প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইনটি পরিবর্তন-পরিমার্জন করে যাতে সাংবাদিকদের স্বার্থ পুরোপুরি সংরক্ষিত হয় সে জন্য আমরা একমত। এ সত্ত্বেও বিভিন্ন মহল থেকে বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে। কেউ বুঝে বিবৃতি দিচ্ছে, কেউ অন্যরা বিবৃতি দিয়েছে সে জন্য বিবৃতি দিচ্ছে আবার কেউ কেউ এ আইন চায় না সে জন্য বিবৃতি দিচ্ছে।
আমরা যেখানে আইনটি পরিমার্জন-পরিবর্তনের জন্য একমত সেখানে কি এসব বিবৃতি আসলে প্রয়োজন আছে প্রশ্ন রেখে হাছান মাহমুদ বলেন, বরং বিভিন্ন মহল থেকে বিবৃতি দিয়ে এই যে সৌহার্দ্যপূর্ণ অনুকূল পরিবেশ আছে, সেটিকে আসলে নষ্ট করা হচ্ছে।
এ সময় আইনের খসড়া নিয়ে চলমান কাজ সম্পর্কে ড. হাছান মাহমুদ জানান, প্রথমত সাংবাদিক ইউনিয়নগুলো প্রস্তাবিত আইনের যে ধারাগুলো পরিমার্জন-পরিবর্তন প্রয়োজন, তা নিয়ে একটি লিখিত প্রস্তাব দেবে বলে আমাকে জানিয়েছে। এরপর আমরা মালিক পক্ষের সঙ্গেও আলোচনা করব, কারণ মালিকরা এটি বাস্তবায়ন করবেন। এরপরে সেটি সংসদীয় কমিটি বিবেচনা করবে, খুব বেশি পরিবর্তন হলে তাদের আইনগত পরামর্শ নিতে হতে পারে। সেটি সংসদীয় কমিটি ভালো বলতে পারবে।