মান্নাকে নির্যাতনের অভিযোগ পরিবারের

Slider টপ নিউজ

68474_f3

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন তার পরিবারের সদস্যরা। গতকাল দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচার তোপখানা রোডে নাগরিক ঐক্যের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন মান্নার স্ত্রী মেহের নিগার। তিনি বলেন, মান্না একজন অসুস্থ মানুষ। তার উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ রয়েছে। তার বুকে তিনটার অধিক ব্লক ধরা পড়েছে। সম্প্রতি গ্রেপ্তার ও মানসিক নির্যাতনের কারণে তার হার্টের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেছে। তার জীবন এখন হুমকির সম্মুখীন।
মেহের নিগার বলেন, মিথ্যা অভিযোগে দুটি মামলা দিয়ে তাকে ২০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। প্রথম ১০ দিনের রিমান্ডের সময় মান্নার প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রও তাকে দিতে দেয়া হয়নি। এমনকি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করারও সুযোগ দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্নার মুক্তি দাবি করে স্ত্রী বলেন, হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি হওয়া থেকেই বোঝা যায় একজন অসুস্থ মানুষের সঙ্গে রিমান্ডের নামে কি ধরনের আচরণ করা হয়েছে। আমরা তার প্রাণহানির আশঙ্কায় আছি। এজন্য তাকে জামিনে মুক্তি দেয়ারও আবেদন জানাচ্ছি। আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মান্নার স্ত্রী মেহের নিগার সরকারের কাছে আবেদন করে বলেন, আমরা সরকারের কাছে মান্নার শরীরের যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সুচিকিৎসার জন্য বিনীত আবেদন জানাচ্ছি। আমরা কারাগারে তার ডিভিশনের আবেদন জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, মাহমুদুর রহমান মান্না আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি যে কোন ধরনের আইনানুগ বিচারের সম্মুখীন হতে রাজি আছেন। প্রয়োজনে তাকে জেলগেটে ডাক্তারের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে। সংবাদ সম্মেলনের একপর্যায়ে আসন্ন ঢাকা সিটি নির্বাচনে মাহমুদুর রহমান মান্নার অংশগ্রহণ সম্পর্কে জানতে চাইলে মেহের নিগার বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন মাহমুদুর রহমান মান্নার কন্যা নিলম মান্নাসহ নাগরিক ঐক্যের নেতারা।
মান্নাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর: মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল সকালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ছাড়পত্র দেন। দ্বিতীয় দফা ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতে থাকাকালে বুকে ব্যথা অনুভব করায় গত ১০ই মার্চ রাতে তাকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি ওই হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। গতকাল দুপুর পৌনে ১টায় ঢামেক হাসপাতালে কেন্দ্রীয় কারাগারের আটজন কারারক্ষী একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে আবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যান। এ সময় মান্নাকে উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছিল। এ বিষয়ে মান্নার চিকিৎসায় গঠিত ছয় সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবদুল ওয়াদুদ সাংবাদিকদের বলেন, মাহমুদুর রহমান মান্নার অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল। তাকে উন্নত চিকিৎসা দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। তার হৃৎপিণ্ডে সমস্যা ছিল। ওই সমস্য এখন আর নেই। তবে তার ঘাড় ও কোমরে ব্যথা রয়েছে। হৃদরোগের পাশাপাশি তার কিডনির রোগও রয়েছে। এজন্য তার শরীর কিছুটা দুর্বল। তাকে নিউরোলজি বিভাগের চিকিৎসার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া যখন তার হৃদরোগের সমস্যা আবার দেখা দেবে তখন তাকে দ্রুত হাসপাতালের নিয়ে আসার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। মান্নাকে নিয়ে যাওয়ার সময় নাগরিক ঐক্যের কয়েকজন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে বনানী থেকে সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আটক করে বলে অভিযোগ করে তার পরিবার। দীর্ঘ ২১ ঘণ্টা পর ২৪শে ফেব্রুয়ারি ধানমন্ডি থেকে মান্নাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানায় র‌্যাব। পরে মাহমুদুর রহমান মান্নার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে দুটি মামলা করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *