দেশের বেসরকারি ২৩ বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে না গেলে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধসহ আইনি পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কমিশনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের এক সমন্বয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী ১২ বছর পূর্ণ হলেও এখনও দেশের ২৩টি বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরিভাবে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হয়নি। কেউ আংশিকভাবে কেউবা নির্মাণাধীন কাজ দেখিয়ে বছরের পর বছর আউটার ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বিগত সময়ে নানাভাবে আলটিমেটাম দিলেও এখনো তারা প্রধান ক্যাম্পাসে যায়নি।
সে কারণে ইউজিসি থেকে এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে শোকজ করা হয়েছে। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই শোকজের জবাবে নতুন করে আরও সময় বাড়ানোর অনুরোধ জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের পর ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে স্থায়ী ক্যাম্পাস ছাড়া অস্থায়ী সব ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম অবৈধ করে বিবেচিত হবে। সেখানে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ নির্দেশনা অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২৩ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা, রাজধানী বনানীর সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, মোহাম্মদপুরে দি পিপল’স ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গুলশানের মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, মোহাম্মদপুরে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, মোহাম্মদপুর সাতমসজিদ রোডে ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ, ধানমন্ডিতে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ধানমন্ডির কলাবাগানে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, শান্ত মরিয়ম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির লালমাটিয়া ও উত্তরায় অস্থায়ী ক্যাম্পাস, রাজারবাগে দি মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, গুলশানে প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, বনানীতে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, উত্তরা মডেল টাউনে উত্তরা ইউনিভার্সিটি, পান্থপথে ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, বনানীতে প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, একই এলাকায় রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, ধানমন্ডিতে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ ও শ্যামলীর আশা ইউনিভার্সিটি রয়েছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির বলেন, আইন সবার জন্য সমান, সবাইকে তা মানতে হবে। ইউজিসির আলটিমেটাম অনুযায়ী যারা সক্ষম হবে তারা স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হবে। তবে করোনায় অনেকে বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটিও বিবেচনা করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, যাদের সক্ষমতা আছে তাদের দ্রুত সময়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে চলে যাওয়া উচিত। একটি স্থায়ী ক্যাম্পাস থাকবে আর ঢাকায় একটি অস্থায়ী থাকবে সেটি হতে পারে না। এ বিষয়ে আমরা ইউজিসির চিঠি পেলে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেবো।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, আইন অনুযায়ী এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আর অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই। তাই কমিশনের পক্ষ থেকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের জন্য নির্দেশনা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অন্যথায় আগামী বছরের শুরু থেকে তাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসের বাইরে অন্য সব ক্যাম্পাস বা ভবন অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখতে হবে। পাশাপাশি আইন অনুযায়ী পরবর্তী সব পদক্ষেপ নেবে কমিশন।
এর আগে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তরের জন্য ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়কে সময় বেঁধে দিয়েছিল কমিশন। এর ব্যত্যয় ঘটলে ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ থাকবে বলে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। যদিও ওই সময়ের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই পূর্ণাঙ্গভাবে স্থানান্তরে ব্যর্থ হয়। তবে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের মতো কঠোর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা কমিশনকে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, আগে কী হয়েছে সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। এখন আমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেটি আইনের আলোকেই বাস্তবায়ন করা হবে।