কামাল হোসেন, ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল): দুর্ভোগের অপর নাম ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক। ছোটখাটো দুর্ঘটনাতেই লেগে যায় মাইলের পর মাইল যানজট। সারা বছর একই চিত্র দেখা যায় সড়কটিতে। আর ঈদ আসলেতো কথাই নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয় যানজটে। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় ঘরমুখো মানুষদের। যানবাহনেই ঈদ করতে দেখা গেছে বিগত বছরগুলোতে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলোমিটার সড়কে ৬ লেনে চলাচল করে যানবাহন। এর মধ্যে আবার কয়েকটি আন্ডারপাসও চলমান রয়েছে।
তবে বিপত্তি ঘটে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়কে। সেখানে দুই লেনের সড়কে চলাচল করে ৬ লেনের গাড়ি। এছাড়াও এলেঙ্গা থােকে সেতু পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানে উঁচু নিচু থাকায় স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চালাতে পারেন না চালকরা। ফলে ধীরগতির কারণে সৃষ্টি হয় গাড়ির দীর্ঘ সারি। আর ঈদ আসলেই গাড়ির চাপও কয়েক গুন বেড়ে যায়।
ঈদের সময় লক্কর ঝক্কর ফিটনেসবিহীন যানবাহন সড়কে নামায় মালিকরা। অন্যান্য গাড়ির সাথে পাল্লা দিয়ে চালাতে গিয়ে প্রায় সময়ই এসব যানবাহন সড়কে নষ্ট হয়ে যায়। আর নষ্ট হওয়া ওইসব যানবাহন সরাতে গিয়ে কিছুটা সময় লেগে যায়। সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের।
এদিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ সড়কের সিরাজগঞ্জ অংশে নলকা সেতু ও সড়কের সংস্কার কাজ চলমান থাকায় স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলাচল করতে পারে না। যার প্রভাব পড়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পাড়ে। অতিরিক্ত গাড়ির চাপ সামাল দেয়া সম্ভব হয় না। ঘন্টার পর ঘন্টা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে যানবাহন।
এ মহাসড়কে নিয়মিত যাতায়াত করা যাত্রীরা জানান, চালকরা ট্রাফিক আইন ঠিকমত মেনে চলে না। ফলে সড়কে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। যানজটের অন্যতম কারণ এটা। আর বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত দুই লেন হওয়ায় ৬ লেনের চাপ সামলাতে না পারায় গাড়ির দীর্ঘ সারির সৃষ্টি হয়। সেতুর বুথ সংখ্যা বাড়ানো ও এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত ৬ লেন করা হলে যানজট নিরসন হবে।
চালকরা জানিয়েছেন, চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ভালোভাবেই আসা যায়। এলেঙ্গার পর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু রোডে ঢুকলেই যানজটের কবলে পড়তে হয়। এছাড়া অনেক চালক পাল্লাপাল্লি গাড়ি চালায়। আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে অন্য লেনে চলে যায়। ফলে সড়কে শৃঙ্খলা নষ্ট হয়। আর ঈদে লক্কর ঝক্কর যানবাহন সড়কে নামায় স্বাভাবিক গতি থাকেনা। ফলে গাড়ির দীর্ঘ সারির সৃষ্টি হয়। সেই থেকেই যানজট শুরু হয়।
এদিকে ঈদে যাতে যানজট না হয় সে লক্ষ্যে মহাসড়কটিতে জেলা ও জেলার বাইরে থেকে প্রায় ৭শ’ পুলিশ মোতায়েত থাকবে। যারা সড়কে শৃঙ্খলাসহ যানজট নিরসনে কাজ করবে। এছাড়াও সড়কের বঙ্গবন্ধু সেতুর উভয়ের পাড়ের টোলপ্লাজায় ১২টি লেন দিয়ে যানবাহন যাতায়াত করতো। এবার ঈদে নির্বিঘ্নে যাতে যান চলাচল করতে পারে সে লক্ষ্যে দুই পাড়ের টোল প্লাজায় তিনটি করে মোট ৬ টি লেন বাড়ানো হবে। মোট ১৮ লেনে চলাচল করবে যানবাহন।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান মাসুদ বাপ্পী বলেন, ঈদের সময় টোল প্লাজার পয়েন্ট বাড়ানো হবে। মোটরসাইকেলের জন্য দুই পাড়ে দুটি করে চারটি। এছাড়াও অতিরিক্ত আরো দু’টি লেন থাকবে। মোট ১৮টি লেন দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, ‘ঈদে যে কোনো মূল্যে সড়কে যানজটমুক্ত রাখার চেষ্টা করা হবে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলভাবে গাড়ি চালাতে দেওয়া হবে না।