উজানের বৃষ্টিপাতের খবরে কাঁচা ধান কাটছেন কৃষক

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি


(সুনামগঞ্জ): সুনামগঞ্জের শাল্লার হাওরের কৃষকেরা ত্রিমুখী সংকটে পড়েছেন। একদিকে ফসল রক্ষা বাঁধ পাহাড়ি ঢল থেকে রক্ষা করা, অন্যদিকে আধাপাকা ধান কিভাবে কাটা, না কাটলে গরুর ঘাস নিয়ে বিপদে পড়া।
এরকম পরিস্থিতিতে দিশেহারা প্রায় ৩০ হাজার কৃষক পরিবার।

এদিকে বোরবার নতুন করে আবহাওয়ার বার্তা এসেছে। সে বার্তায় কৃষকের জন্য ভালো কিছু অপেক্ষা করছে না। বলা হয়েছে, ১০ই এপ্রিল থেকে ১৭ই এপ্রিল পর্যন্ত উজানের মেঘালয় ও চেরাপূঞ্জিতে বৃষ্টিপাতের আশংকা রয়েছে। এরমধ্যে ১৩ই এপ্রিল থেকে ১৭ই এপ্রিল পর্যন্ত ভারি বৃষ্টিপাত হবে। এখন পর্যন্ত দাড়াইন নদীর পানি বিপদসীমার নিচে থাকলেও এ কয়েকদিনে বিপদসীমা অতিক্রম করবে বলে ধারণা। জমিতে আধাপাকা ধান অপরদিকে ধান কেটে ফেলার আহ্বান। এমন খবরে দিশেহারা কৃষক।

পাহাড়ি ঢলে আকাল বন্যায় শাল্লার সুনামগঞ্জ জেলার মানুষের ফসল রক্ষা বাঁধ রক্ষায় লড়াই করছেন কৃষকরা।
ফাটল, ধসের কবলে পড়া অনেক বাঁধের ভাঙন ঠেকানো গেলেও কিছু কিছু বাঁধ ভেঙে কৃষকদের কাঁচা ধান ডুবে গেছে। বেড়িবাঁধের বাহিরে কৈইয়া বন,গোবুড়ি বন, দামপুরের পাশে বাঘা বন সহ সব মিলিয়ে শাল্লার প্রায় ৫শত পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন । ফাটল ও ধসে পড়া অনেক বাঁধে কৃষকরা স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন।

আনন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা রুবেল দাস বললেন, ছায়ার হাওরে ১৪ কেদার জমি করতে গিয়ে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা ঋণ করেছি। ঋণের অর্ধেক টাকা ধানের উপর মহাজনের কাছ থেকে নিয়েছি। আর অর্ধেক সুদের উপর। বৈশাখে ধান বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমার ৭ জন সদস্য রয়েছে । জমির ফসল থেকে সারা বছর খরচের টাকা জোগাড় হয়। আজ থেকে ১ সপ্তাহ বৃষ্টিপাত হবে খবর পেয়েছি। এমনিতেই আমাদের বাঁধ নড়েবড়ে। গত কয়েকদিন যাবৎ মানুষকে নিয়ে বাঁধে কাজ করছি। এখন ঈশ্বর ভরসা।

তলিয়ে যাওয়া কৈইয়ারবন হাওরের ডুমড়া গ্রামের কৃষক প্রভাংশু তালুকদার বলেন, ভাই আমি ৬ কেদার জমি করেছিলাম, কাঁচা ধান তলিয়ে গেছে। এখন কি করে যে কি করি চিন্তায় আছি।
আমার পরিবারে ৭ জন সদস্যের বাঁচার একমাত্র অবলম্বন। শ্রম-ঘাম দিয়ে বছরের একমাত্র অবলম্বন বোরো ধান চাষ করেছিলাম। তিনি বলেন, হাওর তলিয়ে বিপর্যয় হওয়ার পর গরুর দামও কমে যায়। তাই গরু-বাছুরও বিক্রি করতে পারবো না।

উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা অজয় দাস বললেন, গত কয়েকদিন ধরে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধে কাজ করছি। এখন যে রকম খবর আসছে, তাতে আমাদের ভয় হচ্ছে। এরকম যদি হয় তাহলে সামনে দুঃখের দিন শেষ হবে না । এলাকায় কোনো কাজ পাবো না। বাড়ি-ঘর ছেড়ে পরিবার নিয়ে ঢাকায় কাজ খুঁজতে হবে।

এদিকে ১৩ তারিখ থেকে ১৭ তারিখ মেঘালয়ে ভারি বৃষ্টিপাতের খবরে অনেকে আধাপাকা ধান কাটা শুরু করেছেন। সোমবার ভান্ডাবিল হাওরে অনেক কৃষককে শ্রমিক লাগিয়ে ধান কাটতে দেখা গেছে।

তারা ভয় আর শঙ্কার কথা জানিয়ে বলেছেন, এখনও নদীর পানি ভরপুর। যদি মেঘালয়ে ভারি বৃষ্টিপাত হয়, তাহলে নড়বড়ে হয়ে যাওয়া বাঁধ আর রক্ষা করা যাবে না। এর থেকে আধাপাকা ধান কাটা ভালো।
জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক কালিপদ রায় বলেন, লোক দিয়ে তলিয়ে যাওয়া কৈইয়া বনে ৫ কেয়ার জমি করেছিলাম, কাঁচা ধান তলিয়ে গেছে। এখন আবার বন্যার আশঙ্কা শুনে মন খারাপ হয়ে যায়। আমার তলিয়েছে, আশা ছিল অন্য সব হাওরগুলো থাকলে কিছু উপার্জন করতে পারতাম।

এই সময়ে বাঁধের উপর সঠিক ভরসা করা যাচ্ছে না। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। মেঘ বৃষ্টি হলে বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। তাই আধা পাকা ধান ভয়ে কেটছে অনেক কৃষক ।
একই কথা বললেন সুলতানপুর গ্রামের কৃষক লাল মিয়া, মো. আলী মিয়া, নজরুল ইসলাম, হবিব মিয়া। সবাই জমির ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *