বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিচ্ছে তৃতীয় প্রজন্মের টেলিকম সেবা থ্রিজি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় বলছে, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বিবেচনায় থ্রিজির কোনো প্রয়োজন নেই। ইতোমধ্যে সেবা গুটিয়ে নিচ্ছে রবি, যা শেষ হবে ২০২৩ সালেই। ওই বছর থেকে থ্রিজি সেবা সরিয়ে নেওয়া শুরু করবে গ্রামীণফোনও। আনুষ্ঠানিক দিনক্ষণ না জানালেও বৃহৎ দুই অপারেটরের পথে হাঁটছে বাংলালিংক ও টেলিটকও।
মোবাইল ফোনে দ্রুতগতির ইন্টারনেটের সঙ্গে সাধারণ মানুষকে পরিচয় করিয়ে দিতে ২০১৩ সালের দেশে চালু হয় তৃতীয় প্রজন্মের টেলিকম সেবা থ্রিজি। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো মোবাইল ফোনে টিভি দেখা, ভিডিও কলে কথা বলা, স্বল্পসময়ে মুভি ট্রান্সফারের অভিজ্ঞতার স্বাদ পান গ্রাহকরা। অথচ ফাইভজির আগমন ও ফোরজির দাপটে মাত্র ৮ বছরের মাথায় অস্তিত্ব হারাচ্ছে তৃতীয় প্রজন্মের টেলিকম সেবা।
একজন গ্রাহক থ্রিজি সেবায় সেকেন্ডে দুই এমবিপিএস গতি পান। সেখানে ফোরজিতে সর্বনিম্ন গতি সাত এমবিপিএস। ইতোমধ্যে দেশের সব টাওয়ারকে রূপান্তর করা হয়েছে ফোরজিতে। আবার বাজারে থ্রিজি ও ফোরজি হ্যান্ডসেটের দামও প্রায় কাছাকাছি।
বাজারে ফোরজি মোবাইল ফোন কিনতে আসা একজন ক্রেতা বলেন, সারাদেশের মানুষের হাতে হাতে ফোরজি ফোন। থ্রিজি আর চলছে না। তাই আমিও একটি ফোরজি ফোন কিনলাম।
এদিকে গ্রাহক চাহিদা বিবেচনায় থ্রিজি হ্যান্ডসেট উৎপাদন বন্ধ রেখেছেন ৯০ শতাংশ বাজার দখলকারী দেশীয় ১৪টি প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে বাজারে মোবাইল ফোন বিক্রেতারা বলেন, এখন ক্রেতা এসে ফাইভজি ফোন চায়। থ্রিজি এখন আর কেউ চায় না। আগের থ্রিজি ফোনগুলো এখন থাকলে আর বিক্রি করতে পারতাম না।
ইতোমধ্যে গ্রাহককে থ্রিজি হ্যান্ডসেট পরিবর্তনের অনুরোধ জানিয়ে প্রথম অপারেটর হিসাবে থ্রিজি সেবা বন্ধ করছে রবি। রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার সাহেদ আলম বলেন, আমরা আশা করছি, ২০২৩ সালের মধ্যে আমরা থ্রিজি সেবা বন্ধ করতে পারব।
তবে কিছুটা সময় নিয়ে থ্রিজি অপসারণের কাজ শুরু করতে চায় অন্য তিন অপারেটর। থ্রিজি সেবা বন্ধ করার বিষয়ে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান বলেন, একসময় আমাদের থ্রিজি সেবা বন্ধ করতে হবে। আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে আমরা এটি বন্ধ করে দেব।
এদিকে ঠিক কবে নাগাদ থ্রিজি সেবা বন্ধ করা হবে, তার কোনো আনুষ্ঠানিক দিনক্ষণ না জানালেও সেবাটি বন্ধ করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানায় বাংলালিংক ও টেলিটক। এবিষয়ে বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, যত তাড়াতাড়ি ফোরজি মোবাইল ফোন বাড়বে, আমরা মনে করি, তখনই আমাদের এ পদক্ষেপটি নেওয়া উচিত।
সম্প্রতি নিলাম থেকে কেনা তরঙ্গ দিয়ে মুঠোফোন অপারেটরদের ফোরজি নেটওয়ার্ক শক্তিশালী ও ফাইভজি সেবা চালুর প্রস্তুতি নিতে বলেছে সরকার।
সবাই যত দিন স্মার্টফোন ব্যবহার শুরু না করবে, তত দিন আমাদের টুজি রাখতে হবে মন্তব্য করে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমার থ্রিজির কোনো বালাই নেই। ফোরজিকে আমাদের এখন মূলধারাই নিয়ে আসতে হবে।
উল্লেখ্য, মোবাইল অপারেটরদের তথ্য মতে, বর্তমানে বিশ্বের ৭৮টি দেশ ইতোমধ্যে থ্রিজি সেবা বন্ধ করে দিয়েছে।