র্যাবের ওপর থেকে সাময়িক বা আংশিকভাবে হলেও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। বিপরীতে দেশে সর্বজনীন মানবাধিকার, আইনের শাসন এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
বৃহস্পতিবার মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শ্যারমেনের সঙ্গে ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে র্যাব এবং প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ও বর্তমান ৭ কর্মকর্তার ওপর বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা হয়। বৈঠকের বিষয়ে উভয় পক্ষ পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছে।
ঢাকার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শ্যারমেনের সঙ্গে বৈঠকে সচিব মাসুদ বিন মোমেন নিজে থেকে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি উত্থাপন করেন। বলেন, নিষেধাজ্ঞার ফলে সন্ত্রাসবাদ, সহিংস উগ্রবাদ ও আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনে বাংলাদেশের উদ্যোগ ভেস্তে যায় কি না- তা নিয়ে ঢাকা বেজায় উদ্বিগ্ন। নিষেধাজ্ঞার তালিকা থেকে র্যাব ও সংস্থাটির কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাকে বাদ দেয়ার আইনি প্রক্রিয়া স্থগিত থাকা এবং সংস্থার কর্মপ্রণালী সংশোধনের বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়ে আরোপিত নিষেধাজ্ঞার আংশিক বা সাময়িক ছাড় দেয়ার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র বিবেচনায় নিতে পারে।
এদিকে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইস প্রচারিত সংক্ষিপ্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডেপুটি সেক্রেটারি অফ স্টেট ওয়েন্ডি শ্যারমেন আজ (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত ওই সাক্ষাৎ-বৈঠকে দ্বিপক্ষীয়, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে তারা মতবিনিময় করেন। সেখানে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির নানামুখি পদক্ষেপ বিষয়ে তারা কথা বলেন। ডেপুটি সেক্রেটারি শ্যারমেন মানবাধিকার, আইনের শাসন এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ঢাকার বিজ্ঞপ্তির বিস্তারিত…
এদিকে মোমেন-শ্যারমেন বৈঠকের বিষয়ে শুক্রবার প্রচারিত বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের শ্রম অধিকার পরিস্থিতি (বিশেষত বেসরকারি কলকারখানায় ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করা), ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে আলোচনা করেন ওয়েন্ডি শ্যারমেন।
শ্রম অধিকার ও নির্বাচন প্রসঙ্গ
ওদিকে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কোন প্রেক্ষাপটে প্রণয়ন করা হয়েছে, ওয়েন্ডি শ্যারমেনের কাছে তা ব্যাখ্যা করেন মাসুদ বিন মোমেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারা পুনর্মূল্যায়নের পাশাপাশি এতে কোন বিচ্যুতি আছে কি না তা নির্ধারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গেও একযোগে কাজ করছে বাংলাদেশ। এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রসচিব মোমেন জানান, বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে। এজন্য আইএলও এবং ইইউর সঙ্গে গৃহীত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে এ প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। বৈঠকে মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, সবকিছু রাতারাতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। ধাপে ধাপে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শ্যারমেন শ্রম
পরিস্থিতির উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের সদিচ্ছার প্রশংসা করেন। তিনি বেসরকারি কারখানাগুলোয় ট্রেড ইউনিয়ন চালুসহ শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতের বিষয়ে চলমান সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন। মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা করেন। এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উদ্যোগে আয়োজিত পরবর্তী গণতান্ত্রিক শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের সম্ভাব্যতা নিয়ে কথা বলেন।
সচিবের কর্মসূচী ভিন্ন, আলোচনা অভিন্ন
ঢাকা এবং ওয়াশিংটনের একাধিক কূটনীতিক জানিয়েছেন, একই দিন (বৃহস্পতিবার) হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের জ্যেষ্ঠ পরিচালক সুমনা গুহ রায়ের সঙ্গে মধ্যহ্নভোজে অংশ নেন পররাষ্ট্রসচিব। এ সময় তিনি র্যাবের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা আংশিক প্রত্যাহার করা যায় কী না, তা বিবেচনার জন্য আহ্বান জানান। অন্যদিকে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজের আগ্রহ প্রকাশ করায় বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান সুমনা গুহ রায়।