নিজ বাসভবনের বাইরে সাধারণ মানুষের তীব্র ক্ষোভের মুখে পড়ে কারফিউ জারির একদিন পরই শুক্রবার (১ এপ্রিল) শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে।
জরুরি অবস্থার খবর জানিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এর মধ্য দিয়ে মূলত ‘সন্দেহভাজনদের’ আটক করার অবাধ ক্ষমতা পেতে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তা বাহিনী। এর আগেও বিনা বিচারে দীর্ঘ সময়ের জন্য সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার ও আটক রাখার জন্য কঠোর আইন করার কথা জানিয়েছিলেন রাজাপাকসে।
শুক্রবার (১ এপ্রিল) এক ঘোষণায় তিনি বলেন, ‘জনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং প্রয়োজনীয় সরবরাহ ও পরিষেবা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।’
ঋণ শোধ করতে গিয়ে তলানিতে ঠেকেছে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। রিজার্ভ না থাকায় জ্বালানি তেল, গুঁড়া দুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি ব্যয় মেটাতে পারছে না শ্রীলঙ্কা সরকার। পরিস্থিতি এমন যে, পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের হাতে কাগজ দিতে না পারায় পরীক্ষা স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে দেশটির শিক্ষা বিভাগ।
সাধারণ মানুষ মনে করছেন, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজপাকসে সরকারের ভুল অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তের মাশুল দিতে হচ্ছে তাদের। প্রায় প্রতিদিনই রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছে দেশটির বিরোধী দলগুলো। প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ চান তারা। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা অর্থনৈতিক দুর্দশার জন্য বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারকে দায়ী করছেন শ্রীলঙ্কার প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা।
শ্রীলঙ্কার মূল সমস্যা বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ। কথিত উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য গত কয়েক বছরে চীনসহ বিভিন্ন দেশের কাছে প্রচুর ঋণ নিয়েছে দেশটির সরকার। এতে বন্দর যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অবকাঠামো খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও ঋণের ফাঁদে পড়ে যায় কলম্বো। বছর বছর ঋণের সুদ দিতে গিয়ে তলানিতে ঠেকেছে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।
শ্রীলঙ্কার সরকারের বড় ভরসা ছিল পর্যটন শিল্পের ওপর। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার উল্লেখযোগ্য অংশের যোগান দেয় পর্যটন খাত। তবে করোনা মহামারির কারণে সেখানেও মন্দা দেখা দেয়। ফলে পর্যটন খাত থেকে কাঙ্ক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রার যোগান পায়নি দেশটি। তার ওপর ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত কয়েক মাস ধরে বেড়ে যাওয়া তেলের দামের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার বেশির ভাগ চলে যাচ্ছে তেল আমদানি করতেই।