ভরা মৌসুম হলেও রমজানকে সামনে রেখে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতির সময় এক মাস বাড়াতে কৃষি মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চায়, আগামী ঈদুল ফিতর পর্যন্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্য আমদানির অনুমতি বা আইপি দেওয়া হোক। যদিও কৃষি মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানা গেছে।
পেঁয়াজ আংশিক আমদানিনির্ভর পণ্য। দেশে এর আমদানি নিয়ন্ত্রিত। পেঁয়াজ আমদানি করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংঘনিরোধ উইং থেকে অনুমতি নিতে হয়। অনুমতি নেওয়ার পর পেঁয়াজ আমদানি করতে পারেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে পেঁয়াজ আমদানির আইপি ইস্যুর সময়সীমা আগামী ২৯ মার্চ পর্যন্ত নির্ধারিত রয়েছে।
এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পেঁয়াজ আমদানির আইপি ইস্যুর সময়সীমা বাড়ানো নিয়ে উভয় সংকট তৈরি হয়েছে। একদিকে রয়েছে কৃষকদের স্বার্থ, অন্যদিকে ভোক্তাদের স্বার্থ দেখতে হবে। কৃষকরা কঠোর পরিশ্রম করে সরকারের অনুরোধে বেশি বেশি চাষ করছেন। ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা না গেলে পরবর্তী সময়ে চাষে নিরুৎসাহিত হবেন। অন্যদিকে রমজানে ভোক্তাদের সাশ্রয়ীমূল্যে পণ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করাও সরকারের কর্তব্য। সরকারের সর্বোচ্চ মহল এ বিষয়ে অবহিত। উভয় পক্ষের স্বার্থরক্ষা করেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ঈদুল ফিতর পর্যন্ত যাতে পেঁয়াজে আইপি ইস্যু করা হয়, সে জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। ২৭ মার্চ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলামকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দেশে বছরে ২৫ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে রমজান মাসে চাহিদা গড়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। পবিত্র এ মাসে পেঁয়াজের চাহিদা চার থেকে সাড়ে চার লাখ টনে পৌঁছায়। দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়লেও প্রতিবছর সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে কিছু পেঁয়াজ নষ্ট হয়। বছরে ছয় থেকে সাত লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়। দেশে পেঁয়াজের বাজার মাঝেমধ্যেই অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। আমদানি চলমান থাকায় সম্প্রতি বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। রমজানে পেঁয়াজের চাহিদা বেড়ে যায়। এ সময় আমদানি অব্যাহত না থাকলে বাজার আকস্মিক অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য রমজানকে সামনে রেখে পেঁয়াজের সরবরাহ ঠিক রাখতে পবিত্র ঈদুল ফিতর পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া অব্যাহত রাখতে হবে।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান সমকালকে বলেন, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি হওয়ায় আমদানির অনুমতি দেওয়ার সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বেনজির আলম বলেন, পেঁয়াজের দাম বেশ কমে এসেছে। ফলে আমদানির অনুমতির সময়সীমা বাড়ানোর তেমন প্রয়োজনীয়তা দেখা যাচ্ছে না।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৪০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ২৫ থেকে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাসখানেক আগেও এর দাম ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা।