চট্টগ্রামে স্থিতিশীল ভোগ্যপণ্যের বাজার

অর্থ ও বাণিজ্য


আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে ভোগ্যপণ্যের বাজারে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়তে শুরু করেছে ক্রেতাদের মাঝে। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জসহ পাইকারি ও খুচরা বাজারে বেশ কিছু ভোগ্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। কিছুদিন ধরেই বাজার উত্তপ্ত বা টানা দাম বৃদ্ধির পর এবার কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে ভোগ্যপণ্যের বাজারের দাম।

বাজার পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে আসায় ধীরে ধীরে আবারও ক্রেতাদের আনাগোনা শুরু হচ্ছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে আমদানি শুল্ক হ্রাস ও বাজারে সরবরাহ বাড়ার কারণে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, চাল, ছোলা, ডালসহ কিছু ভোগ্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্টিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম এক বিবৃতিতে বলেছেন, সরকার নির্ধারিত দামে কারখানা থেকে ভোজ্যতেলসহ নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে এসেছে। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশিতে বিক্রি করবেন না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বর্তমানে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, চাউলসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের দাম অনেক কমেছে। কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে এসেছে তেলের দামও। রমজানকে সামনে রেখে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলে বা সহনীয় পর্যায়ে থাকলে ক্রেতাদের ক্রয়-ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাত দিয়ে কিছু অসাধু আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী বাজার অস্থির করার চেষ্টা করেছিল। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। ভোজ্য তেল থেকে শুরু করে সব ভোগ্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। তাছাড়া সরকারে দায়িত্বশীল প্রশাসনের কর্মকর্তারা মনিটরিং এ রাখলে সব কিছু স্বাভাবিক হবে বলে জানান তিনি।

খাতুনগঞ্জের এক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ভোগ্যপণ্যের দাম কিছুটা সহনীয় রয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ছোলার দাম মণপ্রতি একশ টাকা কমেছে। অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা ভালো মানের ছোলা বিক্রি হচ্ছে প্রতিমণ ২৪শ টাকা। এক সপ্তাহ আগে তা ২৫শ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। আর মধ্যমানের ছোলা বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ২২৩০ টাকা। তবে ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। আমদানির পাইপলাইনে রয়েছে সব ধরণের পণ্য। এর ফলে পণের দাম কমতির দিকে রয়েছে। তাছাড়া ডাল জাতীয় পণ্যের দাম রয়েছে সহনীয় অবস্থায়।

খাতুনগঞ্জের আড়তদার মোহাম্মদ ইদ্রিস বলছেন, এবার মনে হয় ব্যতিক্রম। পেঁয়াজের দাম না বেড়ে উল্টো কমছে। ব্যবসায়ীরা লোকসান দিচ্ছেন। এত দিন ভারত থেকে আসছিল পেঁয়াজ। ১০ দিন আগেও আমরা আড়তে ৫০-৫৫ টাকার ওপরে পেঁয়াজ বিক্রি করেছিলাম। এখন সেই পেঁয়াজ ২৯ টাকায় নিচ্ছেন না খুচরা দোকানিরা। আরও দাম কমবে, এই শঙ্কায় ক্রেতা নেই পেঁয়াজের।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর জামাল হোসেন বলেন, চলতি বছর ব্যবসায়ীরা পর্যাপ্ত পরিমাণ নিত্যপণ্য আমদানি করেছেন। এখনও অনেক পণ্য আসার পথে। প্রচুর পণ্য ইতোমধ্যে গুদামজাত হয়েছে। সরবরাহও প্রচুর। বর্তমানে নিত্যপণ্যের বাজার নিম্নমুখী। এ অবস্থা চলতে থাকলে বাজার সহনীয় পর্যায়ে থাকবে বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রামের পাইকারির বড় বাজার খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, পেঁয়াজের দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ভারতীয় আমদানি করা ভালো মানের পেঁয়াজ এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৪৫ টাকা থেকে কমে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২৭-২৮ টাকা। ছোট আকারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৪-২৫ টাকা। মিয়ানমারের পেঁয়াজও ৪৫ টাকা থেকে কমে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২৭-২৮ টাকা। কোলকাতার হাঁসখালীর পেঁয়াজ ৩৫ টাকা থেকে কমে ২৫ টাকা, মেহেরপুরের পেঁয়াজ ৩২ টাকা থেকে কমে ২০-২২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে পাইকারি বাজারে।

চায়না থেকে আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৯০-৯৫ টাকা দরে। সপ্তাহখানেক আগে তা ১১৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। দেশি রসুন (নতুন) বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা ও পুরনো রসুন ২০-২২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে আদা বিক্রয় হচ্ছে মানভেদে ১৫০-১৬০ টাকা। এর আগে দাম ছিল ১৮০-২০০ টাকার বেশী। বর্তমানে খাতুনগঞ্জে ছোলা মানভেদে কেজিপ্রতি ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও যা কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা বেশি ছিল।

গত সপ্তাহে প্রতি কেজি মটর ৪৭ টাকা থাকলেও বর্তমানে ৪২-৪৪ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে মসুর ডাল আগে ৮৯-৯০ টাকা ছিল, এখন ৮৬-৮৭ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের অবিক্রীত ছোলার মজুতও ছিল এবার। সব মিলিয়ে শুধু রমজানের চাহিদার দ্বিগুণ ছোলা মজুত রয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নানা পদক্ষেপের কারণে ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে ছোলাসহ সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *