প্রায় এক ডজন ব্যাংক একাউন্ট। এসব একাউন্ট খুলেছেন পাকিস্তানে ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। এর মধ্যে আছেন জাতীয় পরিষদের স্পিকার আসাদ কায়সার, সিন্ধুর গভর্নর ইমরান ইসমাইল, খাইবার পখতুনখাওয়ার গভর্নর শাহ ফারহানের মতো গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। তারাই এসব একাউন্ট পরিচালনা করেছেন। পিটিআইয়ের সেন্ট্রাল একাউন্ট থেকে এসব একাউন্টে ২ কোটি ৩২ লাখ ২২ হাজার রুপি স্থানান্তরিত হয়েছে। কিন্তু এসব একাউন্টের অথরাইজ বা কর্তৃত্ব দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে পিটিআই। অর্থাৎ এসব একাউন্টের সঙ্গে পিটিআইয়ের কোনো সম্পর্ক নেই এটাই বলেছে দলটি।
এসব তথ্য এমন এক সময়ে সামনে এলো, যখন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলা চলে এক অগ্নিপরীক্ষার মুখে।
তার বিরুদ্ধে বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে। নিজের দল পিটিআইয়ের বেশ কয়েকজন এমপি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহ করেছেন। তারা বিরোধীদের সঙ্গে মিলে ইমরানের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন। আজ শুক্রবার অনাস্থা প্রস্তাব জাতীয় পরিষদে উত্থাপন হচ্ছে। তবে আজই পার্লামেন্ট এ নিয়ে বেশিদূর অগ্রসর হবে না বলে মনে হচ্ছে না। কারণ, একজন পার্লামেন্ট সদস্য মারা যাওয়ায় আজ শোক প্রস্তাব ও তার আত্মার শান্তি কামনা করে পার্লামেন্ট আগামী ৩০ শে মার্চ পর্যন্ত মূলতবি হতে পারে। ভয়াবহ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ইমরান খানের ভাগ্য যখন পেন্ডুলামের মতো দুলছে, তখন এসব একাউন্টের তথ্য সামনে এলো। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডন।
পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের স্ক্রুটিনি কমিটির এক রিপোর্টে প্রশ্ন তোলার পর ১৫ই মার্চ নির্বাচন কমিশনে একটি লিখিত রিপোর্ট জমা দিয়েছে পিটিআই। তাতেই এসব তথ্য উঠে এসেছে। এর ১১২ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ১১টি একাউন্টে স্থানীয় উৎস থেকে জমা হয়েছিল ৫ কোটি ৭০ লাখ রুপি। এসব অর্থের হিসাব সেন্ট্রাল কমিটির একাউন্টের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। অর্থাৎ এসব অর্থ কখনো কেন্দ্রীয় একাউন্টে জমা হয়নি। পিটিআই বলেছে, তারা এ বিষয়টি জানার পরই বিষয়টি নিশ্চিত হতে যথাযথ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। কারা এসব একাউন্ট খুলেছেন এবং এ সম্পর্কিত বিস্তারিত, কি ধরনের আর্থিক লেনদেন হয়েছে এসব একাউন্টে সে বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছে।
সে অনুযায়ী পিটিআইয়ের অর্থ বিভাগ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এসব একাউন্টের বিবরণী, ব্যাংক সিগনেটরি এবং অন্যান্য তথ্য চেয়েছে। সে অনুযায়ী ব্যাংক তথ্য দিয়েছে। তা নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেছে দল। পর্যালোচনা করেছে এসব তথ্য ও ব্যাংক বিবরণী নিয়ে। শনাক্ত করেছে, কারা এসব একাউন্ট খুলেছিলেন।
পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের কাছে পিটিআই রিপোর্ট জমা দিয়ে বলেছে, ১১টি একাউন্ট পরিচালনা করতেন বিভিন্ন ব্যক্তি। তাদেরকে দলীয় কোনো অনুমোদন দেয়া হয়নি। তাই এসব একাউন্ট দলীয় অর্থ বিভাগের অগোচরে পরিচালনা করা হয়েছে।
এসব ব্যক্তির মধ্যে আরও যাদের নাম উঠে এসেছে তার মধ্যে আছেন পাঞ্জাবের সিনিয়র মন্ত্রী মিয়া মাহমুদুর রশিদ, পাঞ্জাবে পিটিআইয়ের সাবেক সভাপতি প্রয়াত আহসান রশিদ, সিন্ধু প্রদেশের সাবেক সদস্য এবং সুপরিচিত ভাষ্কর সমর আলি খান, সিন্ধু প্রদেশের সাবেক প্রাদেশিক সদস্য সীমা জিয়া, সিন্ধুর প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নাজিব হারুন, সিন্ধু প্রদেশে পিটিআইয়ের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর রেহমান, খাইবার পখতুনখাওয়ায় পিটিআইয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খালিদ মাসুদ এবং প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও উপদেষ্টা প্রয়াত নাঈমুল হক।
এর বাইরে আরো আছে এম. আহসান নাভিদ, সৈয়দ এম. জাভেদ, শেখ আওয়াইস, জাফরুল্লাহ খান খাত্তাক, হামিদুল হক, সালমান বশির আওয়া, শেখ মুহাম্মদ হুসেইন, মিয়া মুহাম্মাদ ফারুক, বশির আহমেদ, মুহাম্মদ আনওয়ার, রুশনা শোয়েব, ফারাহ নাজ এবং মুহাম্মাদ সালিম খানের নাম।
অন্যদিকে ১১ একাউন্টে যাদের নাম এসেছে, তারা একই উত্তর দিয়েছেন। তারা দাবি করেছেন এসব একাউন্ট পিটিআইয়ের সজ্ঞাতে এবং তাদেরকে অবহিত করে পরিচালনা করা হয়েছে। এ কথা জানিয়ে দিয়েছে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান। তারা পাকিস্তানে নির্বাচন কমিশনের স্ক্রুটিনি কমিটিকে এসব একাউন্টের তালিকা শেয়ার করেছে। কিন্তু পিটিআই তার জমা দেয়া রিপোর্টের ১১৩, ১১৮, ১২০, ১৩২, ১৪৪, ১৫৭, ১৫৯, ১৬৯, ১৭৮, ১৯৭ ও ১৯৯ নম্বর পৃষ্ঠায় এসব একাউন্টের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেছে। পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের স্ক্রুটিনি কমিটির রিপোর্ট পিটিআইকে জানানো হয় ৪ঠা জানুয়ারি। তারপর বার বার তাদেরকে রিমাইন্ডার দেয়ার পর শেষ পর্যন্ত ১৫ই মার্চ পিটিআই প্রায় আড়াই মাস পরে ওই রিপোর্ট জমা দিয়েছে।