পঞ্চগড়: উত্তরাঞ্চলের সমতল ভূমির চা বাগান ও ক্ষুদ্র চা চাষিদের হাতে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন হয়েছে। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ২০২১ সালে উত্তরাঞ্চলের সমতল ভূমিতে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন হয়েছিল। পঞ্চগড় অঞ্চলে উৎপাদন হয়েছে ১৪ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন কেজি চা। এর আগের বছর ১০ দশমিক ৩০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। পঞ্চগড় অঞ্চলের চা চাষিদের ক্যামমেলিয়া খোলা আকাশ স্কুলের মাধ্যমে চা চাষ হাতেকলমে প্রশিক্ষণ প্রদান, আধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহ এবং সঠিক ব্যবস্থপনার কারণে গত বছরের তুলনায় এ বছর ৪ দশমিক ২৪ মিলিয়ন কেজি (৪১ শতাংশ) বেশি চা উৎপাদন হয়েছে বলে জানা যায়। পঞ্চগড়ে তৃতীয় চা নিলাম বাজার স্থাপনে চা বাগান মালিক, চা চাষি ও শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্টদের মাঝে উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো: আশরাফুল ইসলাম বলেন, ২০২১ সালে সারা দেশে ১৬৭টি চা বাগান এবং ক্ষুদ্র চা বাগান থেকে রেকর্ড পরিমাণ ৯৬৫০৬ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। যা ২০২০ সালের চেয়ে ১০ দশমিক ১১১ মিলিয়ন কেজি বেশি। তবে ২০২১ সালের চা উৎপাদন অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। পঞ্চগড়ে প্রাথমিকভাবে চা চাষ শুরু হয় ২০০০ সালে। দীর্ঘ ২২ বছরেও নিলাম বাজার স্থাপন না হওয়ায় চা-বাগান মালিকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিল। পঞ্চগড় চা বাগান মালিকরা এ জেলায় দীর্ঘদিনেও চা নিলাম বাজার না থাকায় বিপাকে ছিল। বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো: আশরাফুল ইসলাম গত বছরের ১৭ অক্টোবর পঞ্চগড়ে চা নিলাম বাজার স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানান। উচ্চমহলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক চা বাগান মালিক, কারখানা মালিকদের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। এখন চা নিলাম বাজারে কারখানা মালিকদের আর অপেক্ষা করতে হবে না। সরকারকে ভ্যাট, ট্যাক্স দিতে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না। রাজস্ব ফাঁকি দেয়া, খোলা ও কালোবাজারে চা বিক্রি, চায়ের দাম ওঠানামাসহ অনেক সমস্যার সমাধান হবে। জেলায় হাজারো মানুষের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। নতুন করে ব্যবসা বাণিজ্যের দ্বার উন্মোচিত হবে।
পঞ্চগড় কারখানা মালিকরা জানান, পঞ্চগড়ে দীর্ঘদিন ধরে নিলাম বাজারের দাবি ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিলাম বাজারের অনুমোদন দিয়েছেন। যার কারণে ওয়্যার হাউজ ভাড়া, চট্টগ্রামে চা পৌঁছানোসহ বিভিন্ন ব্যয় কমে যাবে। চা বাগান মালিকরা উপকৃত হবে। পঞ্চগড় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত স¤্রাট বলেন, চায়ের তৃতীয় নিলাম বাজার হলে চা পাতার মূল্য বৃদ্ধি পাবে। ব্যবসা বাণিজ্যের নতুন দ্বার উন্মোচন হবে। পরিবহন খরচ কমবে। ইতোমধ্যে পঞ্চগড়ে নিলাম বাজারের জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। টি টেস্টিংসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা হবে। অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের কার্যক্রম চলছে।
পঞ্চগড় টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক আমিরুল ইসলাম খোকন বলেন, চট্টগ্রামে ৯ জন এবং শ্রীমঙ্গলে ১৫ জন সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে নিলাম কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। সেখানে গিয়ে টি টেস্টিং, চায়ের গ্রেডিং, ব্রোকার হাউজসহ চা-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো দেখেছি। টি বোর্ডের পরিচালনায় টি ট্র্রেডাস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এসব কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। বতমানে লাইসেন্স করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। চলতি বছরের মে মাস থেকে এখানে নিলাম বাজার অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও নর্দান বাংলাদেশ প্রকল্পের পরিচালক ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, উত্তরবঙ্গের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী এবং লালমনিরহাটসহ পাঁচটি জেলায় ১০টি নিবন্ধিত ও ১৭টি অনিবন্ধিত বড় চা বাগান (২৫ একরের উপরে) এবং সাত হাজার ৩১০টি ক্ষুদ্র চা বাগান (২৫ একরের নীচে) রয়েছে। গত দুই দশক থেকে এ অঞ্চলে মোট ১০ হাজার ১৭০ দশমিক ৫৭ একর জমিতে চা চাষ হয়েছে। পঞ্চগড় জেলায় আরো প্রায় ৪০ হাজার একর জমিতে চা চাষের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এসব চা বাগান থেকে ২০২০ সালে পাঁচ কোটি ১২ লাখ ৮৩ হাজার ৩৮৬ কেজি সবুজ চা পাতা সংগ্রহ করা হয়েছে। আর এক কোটি তিন লাখ অর্থাৎ ১০.৩০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। যা জাতীয় চা উৎপাদনের মোট ১২ শতাংশ। ২০২০ সালের পর থেকে দেশের অন্যান্য এলাকায় চায়ের উৎপাদন কিছুটা কমলেও উত্তরাঞ্চলে চা উৎপাদন বেড়েছে। পঞ্চগড়ে ১৭টি ও ঠাকুরগাঁও জেলাতে ১টি চা কারখানা থেকে চা উৎপন্ন হচ্ছে।
ড. শামীম আল মামুন আরো বলেন, পঞ্চগড়ের সমতল ভূমিতে চা চাষের জন্য সম্ভাবনাময় জমি। প্রতি বছর পঞ্চগড় অঞ্চলে চা চাষের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।