রোহিঙ্গারা যাতে না যায়, সে জন্য মিয়ানমারের এই তালিকা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

Slider সারাবিশ্ব

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য মিয়ানমারের পাঠানো ৭০০ লোকের তালিকা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, `তালিকাটা এমনভাবে তৈরি করেছে, যাতে মনে হয় তাদের সদিচ্ছার অভাব আছে। অন্য দুরভিসন্ধি আছে। আমার সহকর্মীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, এতে একটা শুভংকরের ফাঁকি আছে। এরা যাতে না যায়, তার জন্য এই তালিকা দেওয়া হয়েছে।’

মঙ্গলবার বিকেলে মিয়ানমারের পাঠানো ৭০০ লোকের তালিকা নিয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশকে ৭০০ লোকের তালিকা দেয়া হয়েছে বলে সম্প্রতি মিয়ানমারের গণমাধ্যমে বলা হয়েছে। রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ ফিরে না এলেও হঠাৎ কেন মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায়, তা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন রয়েছে। অতীতের মতো হঠাৎ প্রত্যাবাসনের আগ্রহের কথা জানিয়ে সবাইকে বিভ্রান্ত করার জন্য মিয়ানমার তার পুরোনো কৌশল বেছে নিয়েছে বলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনেকের মত।

মিয়ানমারের দেয়া তালিকা অনুযায়ী ৭০০ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রথমে তারা (মিয়ানমার) বলেছিল ১১ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে। তারপর তারা কমিয়ে কমিয়ে ৭০০ লোকের একটি তালিকা দিয়েছে। কিন্তু তালিকাটা এতই ডিফেক্টিভ (সমস্যায় পরিপূর্ণ)! আমরা তো কাউকে জোর করে পাঠাব না। আমার সহকর্মীরা তালিকটা যাচাই–বাছাই করে দেখেছেন, এক পরিবারে বাবা রয়েছেন, অথচ তার স্ত্রী বা সন্তানেরা ওই তালিকায় নেই। ওরা সবগুলো পরিবারকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। বিচ্ছিন্ন করার ফলে ওই পরিবারগুলো যাবে বলে মনে হয় না।
স্বেচ্ছায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের নীতিতে বাংলাদেশের সমর্থনের উল্লেখ করে আব্দুল মোমেন বলেন, `মিয়ানমার তালিকাটা পাঠিয়েছে। তারাই বলেছে, এই লোকগুলোকে আমরা নিতে পারি। পরে আমার সহকর্মীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, এতে একটা শুভংকরের ফাঁকি আছে। এরা যাতে না যায়, তার জন্য এই তালিকা দেয়া হয়েছে। আমরা মিয়ানমারকে বলেছি, পরিবারকে বিচ্ছিন্ন করবেন না। গ্রামকে বিচ্ছিন্ন করবেন না। যাঁরা যে গ্রামে আছেন, সেই গ্রামে তাঁদের নিয়ে যান। পুরো পরিবারকে নিয়ে যান। পরিবার না গেলে তারা স্বেচ্ছায় যাবে না।’

তবে কি ওই ৭০০ রোহিঙ্গাকে পাঠানো হবে না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, `এই ৭০০ তো যাবেই না। আমরা তাদের কীভাবে অনুরোধ করি যাবে কি না! মিয়ানমারকে বলেছি, তোমরা এই ব্যাপারে আরও সংবেদনশীল হও।’ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য চীনের মধ্যস্থতার প্রক্রিয়া থেমে গেছে কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এরই মধ্যে চীনের উদ্যোগে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালকের কয়েকবার আলোচনা হয়েছে। এই প্রক্রিয়া এখনো চলছে।

গত সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টিন ব্লিঙ্কেন রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের নৃশংসতাকে গণহত্যার স্বীকৃতি দিয়ে বিবৃতি দেওয়ায় তাকে ধন্যবাদ জানান আব্দুল মোমেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, `আমাদের বন্ধুপ্রতীম শক্তিশালী দেশ এই ঘোষণা দেওয়ায় আমাদের অবস্থান শক্তিশালী হয়েছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গাম্বিয়ার দায়ের করা গণহত্যা মামলা আরও শক্তিশালী হতে পারে। যদি কেউ মানবাধিকার লঙ্ঘন করে এই ধরনের গণহত্যা করে, তারা শাস্তির আওতার বাইরে থাকবে না। আমরা গণহত্যা চাই না। দুর্ভাগ্যজনক হলেও গণহত্যা হচ্ছে। এগুলো বন্ধ করার একমাত্র পথ গণহত্যার স্বীকৃতি দিয়ে এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়া। এটা আমাদের জন্য সুসংবাদ।’

বড় শক্তিধর দেশ যদি চাপ দেয়, তবে এই সমস্যার একটা সমাধান হবে বলে মনে করেন আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, `আমার বিশ্বাস, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) আরও বেশি চাপ দেবে মিয়ানমারের সরকারের ওপর যাতে নিজের লোকদের ফিরিয়ে নিয়ে যায়। এটা ত্বরান্বিত হলে অনেক খুশি হব। মিয়ানমার তাদের লোকজনকে ফিরিয়ে নিলে অপরাধ কিছুটা কমতে পারে। মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক নির্বাচিত সরকার এই অপকর্ম করেছে। আশা করব, মিয়ানমারের সামরিক সরকার এটা অনুধাবন করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে।’

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন মিয়ানমারের নেতৃত্ব। ওই চিঠিগুলোতে মিয়ানমার প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে অত্যন্ত সুন্দর এবং উন্নত সম্পর্ক গড়ে তোলার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *