পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ কমিটি খালেদার নির্দেশ বাস্তবায়ন হয়নি চট্টগ্রামে

চট্টগ্রাম

khaleda_zia_327871979

চট্টগ্রাম: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দেশের সকল পাড়া-মহল্লায় ২০ দলীয় জোটের নেতৃত্বে প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটি’ গঠনের নির্দেশ দিলেও চট্টগ্রামে তা বাস্তবায়ন হয়নি।

এমনকি ওই নির্দেশ আসার পর এখন পর্যন্ত জোট নেতারা বৈঠকও করতে পারেননি। তবে তৃণমূল পর্যায়ে দলের চেয়ারপারসনের নির্দেশ পৌঁছে দিয়েছেন বলে দাবি করছেন তারা।

স্থানীয় বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার শীর্ষ নেতারা আত্মগোপনে থাকায় ‘পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাস প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটি’ গঠনে চেয়ারপারসনের নির্দেশ পালন করতে পারেননি তারা। তবে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও কয়েকটি জায়গায় ‘প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটি’ গঠনের চেষ্টা হয়েছে।

তা ছাড়া চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি এবং জাতীয়তাবাদী যুব, ছাত্র ও স্বেচ্ছাসেবক দলের অধিকাংশ শীর্ষ নেতা বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। ফলে কমিটি গঠনের কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি বিএনপির পক্ষে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী  বলেন, খালেদা জিয়ার নির্দেশ অনুযায়ী ‘প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটি’ গঠনের চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের মামলা-হামলার কারণে নেতা-কর্মীরা এলাকায় থাকতে পারছেন না। তারপরও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। প্রতিরোধ চলছে। পাড়া মহল্লায় কমিটি গঠন না হলেও নেতা-কর্মীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

নগর বিএনপির সহসভাপতি আবু সুফিয়ান  বলেন, দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা দিয়েছে পুলিশ। বিভিন্ন অযুহাতে নিয়মিত মামলার আসামী করা হচ্ছে তাদের। ফলে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে পারছি না।

তিনি বলেন, বিএনপি নেতা-কর্মীরা রাজনীতি করে অপরাধ করেনি। কিন্তু বর্তমান সরকার তাদের সাংগঠনিক, সামাজিক, পারিবারিকসহ সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে। কোথাও বসে কথা বলার সুযোগটা পর্যন্ত দিচ্ছে না।

সূত্র জানায়, শুধু প্রতিকুল পরিস্থিতির কারণেই প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটি গঠনের কাজ আটকে আছে-এমনটি নয়। বরং এসব কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে অনেক সময় দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল সৃষ্টি হয়। দলের প্রভাবশালী নেতারা অনেক সময় নিজেদের পছন্দ মতো লোক দিয়ে কমিটি করে থাকেন। ফলে কমিটিতে ঠাঁই না পাওয়া নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বাধাগ্রস্ত হয় আন্দোলন সংগ্রাম।

অবশ্য এ ব্যাপারে নগর বিএনপির সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, অস্থিত্ব রক্ষার আন্দোলনের সময় অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়ে ভাবার অবকাশ নেই।

জানা গেছে, শুধু প্রতিরোধ কমিটি গঠনে খালেদা জিয়ার নির্দেশ উপেক্ষা নয়, জোটের শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় নেই বিএনপির। ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াত বিচ্ছিন্নভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। কোথাও বিএনপির সহযোগিতা চায়নি। অন্যদিকে জামায়াতের সহযোগিতা চায় না বিএনপিও।

২০ দলের সমন্বয় নেই উত্তর জেলায়
চট্টগ্রাম মহানগরের মতো উত্তর জেলাতেও হয়নি পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটি। এখানেও ২০ দলীয় জোটে সমন্বয় নেই। যে যার মতো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সোলায়মান মঞ্জু বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের অঙ্গসংগঠন শক্তিশালী। তাই কমিটি গঠন জরুরি মনে করছি না।

তবে উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল হাসান বললেন ভিন্ন কথা। তার দাবি, এরই মধ্যে চট্টগ্রাম উত্তর জেলায় প্রতিরোধ কমিটি গঠনে ৫০ শতাংশ কাজ শেষ করা হয়েছে। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের রাখা হয়েছে কমিটিতে। তবে তাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা থাকায় প্রকাশ্যে চলাফেরা করতে পারছেন না।

বৈঠকই করতে পারেনি দক্ষিণ জেলা
দক্ষিণ জেলার অবস্থাও মহানগর ও উত্তর জেলার মতো। এখানেও বাস্তবায়ন হয়নি খালেদা জিয়ার ‘প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটি গঠনের নির্দেশ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দক্ষিণ জেলা বিএনপি সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী অসুস্থ হয়ে বাসাতেই অবস্থান করছেন। দলের চরম দূরবস্থার মধ্যে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন সাধারণ সম্পাদক গাজী শাহজাহান জুয়েল। ফলে হতাশ দক্ষিণ জেলা বিএনপির তৃণমূল কর্মীরা।

নেতা-কর্মীদের হতাশার কথা স্বীকার করে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহসভাপতি শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ২ মার্চের পর থেকে এখনো পর্যন্ত আমরা বৈঠক করতে পারিনি। তবে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ হচ্ছে।

চলমান আন্দোলনের মধ্যে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দেশের সকল পাড়া-মহল্লায় ২০ দলীয় জোটের নেতৃত্বে প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন খালেদা জিয়া। গত ২ মার্চ সোমবার জোটের পক্ষে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ এক বিবৃতিতে খালেদা জিয়ার এ নির্দেশের কথা জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *