ইসলামে হিজাব অপরিহার্য নয় বলে কর্নাটক হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছে তার বিরোধিতা করেছেন জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের সভাপতি ও প্রখ্যাত ইসলামী বিদ্যাপীঠ ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিসীন আল্লামা সাইয়েদ আরশাদ মাদানি। হিজাব ইস্যুতে আদালতের এই রায় ইসলামী শিক্ষা ও শরিয়াতের হুকুম পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার আদালতের বিতর্কিত রায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে এক বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ইসলামে যেসব বিধান ফরজ ও ওয়াজিব তা পালন করা আবশ্যক, তার বিরোধিতা করা গোনাহ। এরই ভিত্তিতে হিজাবও একটি অবশ্য পালনীয় বিষয়।
আল্লামা মাদানি বলেন, এরপরও যদি কেউ হিজাব পালন না করে, তাহলে সে ইসলাম থেকে বের হবে না ঠিকই কিন্তু মারাত্মক গোনাহগার হবে এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে আজাব ও জাহান্নামের শাস্তি পাবে। অনেক মুসলিম হিজাব পরেন না-এর ভিত্তিতে হিজাব ইসলামে জরুরি নয়-এটি অসঠিক কথা।
তিনি বলেন, অনেক মুসলিম নিজের দুর্বলতা ও গাফলতির কারণে নামাজ-রোজা করেন না-এর মানে এই নয় যে, ইসলামে রোজা-নামাজ আবশ্যক নয়। (হিজাবও অনুরূপ)।
আল্লামা আরশাদ মাদানির মতে, হিজাব ইস্যুটি আদালতে নিয়ে যাওয়াই আইন পরিপন্থী। তিনি বলেন, সীমানার মধ্যে ইউনিফর্ম নির্ধারণের অধিকার আছে স্কুলের, কিন্তু আইনত কলেজের তা নেই। আর যেই ইস্যুটি আদালতে বিচারাধীন ছিল, তা স্কুলের বিষয় নয়; বরং কলেজের।
আল্লামা মাদানি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী ভারতের প্রতিটি নাগরিক নিজ ধর্মের প্রতি বিশ্বাস রাখা, ধর্মীয় আচার-বিধি মেনে চলা এবং ইবাদতের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা পাবে। ভারতের কোনো রাষ্ট্রধর্ম নেই; বরং রাষ্ট্র তার প্রতিটি নাগরিককে নিজ বিশ্বাস পরিপালনে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়।
স্যেকুলারিজমের ব্যাখ্যা দিয়ে বর্ষীয়ান এ আলেম বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ তো এই নয় যে, কোনো ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী তার ধর্মপরিচয় প্রকাশ করতে পারবে না। ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ হলো- রাষ্ট্র কোনো একটি ধর্মের পরিচয় সব নাগরিকের ওপর চাপিয়ে দেবে না। হিজাব পরিধান মুসলিমদের ধর্মীয় আবশ্যক বিষয়, যা পবিত্র কুরআন ও সুন্নত দ্বারা সুপ্রমাণিত। একইসাথে তা মুসলিম নারীদের প্রকৃতি ও মানসিকতার জন্য জরুরিও বটে।
প্রসঙ্গত, জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দ ভারতীয় মুসলমানদের সর্ববৃহৎ পুরোনো প্লাটফর্ম। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে এ সংগঠনটির জন্ম। উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে এ দলটির ব্যাপক অবদান রয়েছে।
আল্লামা সাইয়েদ আরশাদ মাদানি ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের প্রাণপুরুষ সাইয়েদ হুসাইন আহমদ মাদানির ছেলে। বর্তমানে তাকে ভারতের অন্যতম প্রভাবশালী আলেম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশে তার অসংখ্য ছাত্র ও ভক্ত রয়েছে।