ঢাকা: পরিশোধিত-অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমেনি।
বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুরের ১১ নম্বর বাজার, মিরপুর কালশী বাজার ও পল্লবী এলাকার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সয়াবিন তেলের ৫ লিটারের বোতলের দাম নামমাত্র কমানো হয়েছে। কিন্তু এক লিটারের বোতলের দাম কমেনি।
মিরপুর ১১ নম্বর বাজারে তেল কিনতে এসেছেন ব্যবসায়ী মো. ইমরান। তিনি বলেন, এক লিটার তেলের বোতলের দাম কমেনি। এখনও বাজারে তা ১৬৮ টাকাতেই বিক্রি হচ্ছে। তবে পাঁচ লিটারের বোতলের দাম কমেছে পাঁচ থেকে ১০ টাকা। আগে পাঁচ লিটারের বোতল বিক্রি হতো ৮৩৫ টাকা। এ মূল্য কমে বিক্রি হচ্ছিল পাঁচ লিটার ৮০০ টাকা। সরকার ভোজ্যতেলে আমদানি শুল্ক কমানোর পরে বর্তমানে বাজারে ভোজ্যতেলের পাঁচ লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৭৯০ থেকে ৭৯৫ টাকায়।
ইমরান বলেন, শুধু শুল্ক কমালেই হবে না। বাজার মনিটরিং করতে হবে। না হলে আবারও বেড়ে যাবে ভোজ্যতেলের দাম।
মিরপুর ১১ নম্বর বাজারের তেল বিক্রেতা মো. জাবেদ বলেন, সরকার ভোজ্যতেলের ওপর থেকে আমদানি শুল্ক কমালেও আহামরি দাম কমেনি। এক লিটার তেলের বোতল এখনও বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। শুধু পাঁচ লিটার তেলের বোতলে পাঁচ থেকে ১০ টাকা দাম কমেছে।
তিনি আরও বলেন, আমি বেশি দামে তেল কিনেছি। এ কারণেই আগের দামেই তেলগুলো বিক্রি করতে হচ্ছে। নতুন দামে তেল কেনার পরে আমি কম দামে তেল বিক্রি করতে পারবো। আমি তো ক্ষতি করে কম দামে তেল বিক্রি করতে পারবো না।
কালশী বাজারের ক্রেতা গৃহিণী মঞ্জু মাহবুব বলেন, শুনেছি সরকার তেলের দাম কমানোর জন্য চেষ্টা করছে। কিন্তু আজকে বাজারে এসে দেখলাম এক লিটারের তেলের বোতলের দাম এখনও কমেনি। এক লিটারের বোতল কিনেছি ১৬৮ টাকায়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবার বাজারে সব পণ্যের দাম ঊর্ধ্বগতি চলতে থাকলে না খেয়ে থাকতে হবে। মধ্যবিত্তদের যদি এ রকম অবস্থা হয় তাহলে বোঝেন নিম্নবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষের কী অবস্থায় দিন যাচ্ছে?
কালশী বাজারের তেল বিক্রেতা কমল হোসেন বলেন, এখনও এক লিটারের তেলের বোতলের দাম কমেনি, আগের দামেই বিক্রি করছি। শুধুমাত্র পাঁচ লিটারের বোতল একটু দাম কমেছে। বিভিন্ন কোম্পানি ভেদে পাঁচ লিটারের বোতল বিক্রি করছি ৭৯০ থেকে ৭৯৫ টাকায়। পুরোপুরি দাম কমতে শুরু করলে তখন আবার কম দামে তেল বিক্রি করতে করবো।
দিনমজুর শহিদুল ইসলাম। প্রতিদিন রোজগার করেন ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। এ টাকা দিয়ে চলতে হয় তার পরিবারের। তিন সন্তান ও স্বামী-স্ত্রীর পরিবার। থাকেন পল্লবী এলাকার বাউনিয়াবাধ বস্তিতে। কোনোদিন কাজ না করতে পারলে বা না পেলে ধারদেনা করে চলতে হয়। কখনো না খেয়ে থাকতে হয়।
শহিদুল বলেন, বন্ধুর কাছ থেকে টাকা ধার করে এসেছি বাজার করতে। বাজারে এলে অন্তত দুদিনের বাজার একসঙ্গে করে থাকি। বাজারে এসে দেখি তেলের দাম অনেক বেশি। এখনও দাম কমেনি। তেল কিনতে গেলে অন্য পণ্য কিনতে পারবো না। তাই দাম কম দিয়ে টিসিবির গাড়ি থেকেই তেল কিনতে হবে।
এর আগে পরিশোধিত-অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পাম অয়েল আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশ নির্ধারণ করেছে সরকার। গত বুধবার (১৬ মার্চ) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক) থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এ প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে।
এছাড়া উৎপাদন পর্যায়ের ১৫ শতাংশ ও ভোক্তা পর্যায়ের ৫ শতাংশ ভ্যাটও প্রত্যাহার করা হয়েছে।