প্রতিদিন পঠিতব্য ফজিলতপূর্ণ সুরা ও আয়াতের মধ্যে ‘আয়াতুল কুরসি’ ও ‘তিন কুল’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন। নিম্নে এগুলো পাঠের গুরুত্ব বর্ণনা করা হলো-
আয়াতুল কুরসি
আয়াতুল কুরসি পবিত্র কোরআনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আয়াত। উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ একদিন আবুল মুনজিরকে লক্ষ্য করে বলেন, হে আবুল মুনজির! আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াত তোমার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
আবুল মুনজির বলেন, এ বিষয়ে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল সর্বাধিক অবগত। রাসুল (সা.) আবার বলেন, হে আবুল মুনজির! আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াত তোমার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ? তখন আমি বললাম, আয়াতুল কুরসি (আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ)।
এ কথা শুনে তিনি আমার বুকের ওপর হাত রেখে বলেন, হে আবুল মুনজির! তোমার জ্ঞানকে স্বাগতম। (মুসলিম, হাদিস : ১৭৭০; আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৬০)
আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা লাভ হয়। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি বিছানায় যাওয়ার সময় আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার জন্য একজন প্রহরী থাকবে। আর সকাল পর্যন্ত কোনো শয়তান আপনার কাছে আসবে না। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৩১১)
নিয়মিত সালাতের পর আয়াতুল কুরসি পাঠকারীর জন্য মৃত্যুর পর জান্নাত। আবু উমামা আল-বাহিলি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না। ’ (সহিহ আত-তারগিব, হাদিস : ১৫৯৫; সহিহ আল-জামে, হাদিস : ৬৪৬৪)
ফজর ও মাগরিবের পর তিন কুল
‘তিন কুল’ হলো সুরার শুরুতে ‘কুল’ শব্দ থাকা তিনটি সুরা। যেমন- সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস।
প্রতিদিন ফজর ও মাগরিবের পর ‘তিন কুল’ পাঠ করলে যাবতীয় অনিষ্ট হতে রক্ষা পাওয়া যায়। মুআজ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে খুবাইব (রা.) বলেন, এক বর্ষণমুখর খুবই অন্ধকার কালো রাতে নামাজ পড়ার জন্য আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে খুঁজছিলাম। আমরা তাঁকে পেয়ে গেলাম। তিনি বলেন, বলো। আমি কিছুই বললাম না। পুনরায় তিনি বলেন, বলো। আমি কিছুই বললাম না। তিনি আবার বলেন, বলো। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! কী বলব? তিনি বলেন, তুমি সন্ধ্যায় ও সকালে উপনীত হয়ে তিনবার সুরা ইখলাস, সুরা নাস ও ফালাক পড়বে। এতে তুমি যাবতীয় অনিষ্ট হতে রক্ষা পাবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৮২)
‘তিন কুল’ সব ব্যাপারে যথেষ্ট। আবদুল্লাহ ইবনে খুবাইব (রা.) বলেন, এক ঘুটঘুটে অন্ধকার ও বৃষ্টিমুখর রাতে আমাদের নামাজ আদায় করানোর জন্য আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সন্ধানে বের হলাম। আমি তাঁর দেখা পেলে তিনি বলেন, বলো। কিন্তু আমি কিছুই বললাম না। তিনি পুনরায় বলেন, বলো। এবারও আমি কিছুই বললাম না। তিনি আবার বলেন, বলো। এবার আমি প্রশ্ন করলাম, আমি কী বলব? তিনি বলেন, তুমি প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে সুরা ইখলাস ও আল-মুআউবিজাতাইন (সুরা ফালাক ও সুরা নাস) পাঠ করবে, আর তা সব ব্যাপারে তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৭৫)
ঘুমের সময় ‘তিন কুল’
ঘুমের সময় ‘তিন কুল’ পড়ে শরীর মুছে নেবে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রতি রাতে নবী (সা.) বিছানায় যাওয়ার প্রাক্কালে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পাঠ করে দুহাত একত্র করে হাতে ফুঁ দিয়ে যত দূর সম্ভব সমস্ত শরীরে হাত বোলাতেন। মাথা ও মুখ থেকে শুরু করে তাঁর দেহের সম্মুখভাগের ওপর হাত বোলাতেন এবং তিনবার এরূপ করতেন। (বুখারি, হাদিস : ৫০১৭)
সুরা ইখলাসের ফজিলত
সুরা ইখলাস কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি অন্য এক ব্যক্তিকে সুরা ইখলাস বারবার পাঠ করতে শোনেন। সকাল হলে তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে হাজির হন এবং ব্যাপারটি তাঁর কাছে উল্লেখ করেন। আর ওই ব্যক্তি যেন উক্ত সুরার পাঠকে কম গুরুত্ব দিচ্ছিলেন। তখন নবী (সা.) বলেন, ‘যাঁর হাতে আমার প্রাণ ওই সত্তার কসম! নিশ্চয়ই এ সুরা কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৬৪৩)
সুরা ইখলাস পাঠকারীকে আল্লাহ ভালোবাসেন। আয়েশা (রা.) বলেন, নবী (সা.) এক সাহাবিকে একটি মুজাহিদ দলের প্রধান করে অভিযানে পাঠালেন। সালাতে তিনি যখন তাঁর সাথিদের নিয়ে ইমামতি করতেন, তখন সুরা ইখলাস দিয়ে সালাত শেষ করতেন। তাঁরা যখন অভিযান থেকে ফিরে এলো, তখন নবী (সা.)-এর খেদমতে ব্যাপারটি আলোচনা করলেন। নবী (সা.) বলেন, তাকেই জিজ্ঞেস করো-কেন সে এ কাজটি করেছে? এরপর তারা তাঁকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জবাব দেন-এ সুরায় আল্লাহর গুণাবলি আছে। এ জন্য সুরাটি পড়তে আমি ভালোবাসি। তখন নবী (সা.) বলেন, তাকে জানিয়ে দাও, আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন। (বুখারি, হাদিস : ৭৩৭৫)