কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার রেকর্ড তিন কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার ২৭৫ টাকা পাওয়া গেছে। যা ওই মসজিদের দানবাক্স থেকে পাওয়ার হিসাবে সর্বোচ্চ পরিমান।
শনিবার সকাল ৯টায় দানবাক্স খোলার পর সারাদিন গণনা শেষে রাত পৌনে ৯টায় এই হিসাব পাওয়া যায়।
বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা ছাড়াও বিভিন্ন বিদেশী মুদ্রা ও দান হিসেবে প্রায় চার কেজির মতো সোনা ও রুপার গয়না পাওয়া গেছে। বিদেশী মুদ্রার মধ্যে সৌদি রিয়াল ও ভারতীয় রুপি সবচেয়ে বেশি। তবে বিদেশী মুদ্রার সঠিক পরিমাণ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি।
সংশ্লিষ্টরা ধারণা দেন, সোনা রুপা ও বিদেশী মুদ্রা মিলে বাজার দর অনুযায়ী এগুলোর মূল্য অর্ধ কোটি টাকার বেশি হবে।
এর আগে সর্বশেষ গত ৬ নভেম্বর দানবাক্স খোলা হয়েছিল। তখন সর্বোচ্চ ১২ বস্তায় রেকর্ড তিন কোটি সাত লাখ ১৭ হাজার ৫৮৫ টাকা পাওয়া গিয়েছিল।
তিন মাস পর পর পাগলা মসজিদের দানবাক্স খোলার নিয়ম ছিল। কিন্তু মহামারী করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর থেকে বিলম্বে দানবাক্স খোলা হচ্ছে। এবার ৪ মাস ৬ দিন পর মসজিদের দানবাক্সগুলো খোলা হলো।
জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আটটি দানবাক্স খোলা হয়। বাক্সগুলো থেকে টাকা বের করে প্রথমে বস্তায় ভরা হয়। এবার ১৫ বস্তা টাকা হয়।
রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক ও কিশোরগঞ্জ করপোরেট শাখার প্রধান মো: রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ওই ব্যাংকের ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী টাকা গণনায় অংশ নেন। তাদেরকে টাকা ভাঁজ করে সহযোগিতা করেন পাগলা মসজিদ অধীন এতিমখানার শতাধিক ছাত্র ও শিক্ষক। পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক) নাজমুল ইসলাম সরকার টাকা গণনার কাজ পরিদর্শন করেন।
মসজিদের পরিচালনা পর্ষদ সদস্যরা বলছেন, সকাল ৯টার দিকে প্রায় ২০০ মানুষ ১৫টি বস্তা থেকে মসজিদের দ্বিতীয় তলার মেঝেতে নামিয়ে এসব মুদ্রা গুনতে শুরু করেন। রাত পৌনে নয়টায় গণনা শেষে এই টাকা পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ এসে পাগলা মসজিদে নগদ টাকাপয়সা ছাড়াও সোনা রুপার গয়না দান করেন। এছাড়া গবাদিপশু, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্রও মসজিদটিতে দান করা হয়। অন্য ধর্মের মানুষও এখানে দান করেন।
মানুষের ধারণা এ মসজিদে দান করলে মনের আশা পুরন হয়।
কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম প্রতিষ্ঠান।
শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছিল। আজ এ মসজিদের পরিধির সাথে সাথে বেড়েছে এর খ্যাতি ও ঐতিহাসিক মূল্যও। বর্তমানে মসজিদকে কেন্দ্র করে একটি অত্যাধুনিক ধর্মীয় কমপ্লেক্স এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রসারিত হয়েছে মূল মসজিদ ভবনও। তবুও মুসল্লীর জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। হাজার হাজার মানুষ এখানে আসেন নামাজ পড়তে এবং দান অনুদান দিতে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম নয়া দিগন্তকে বলেন, এটি সারা বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত মসজিদ। এখানে সারা বাংলাদেশ থেকে প্রচুর লোকজন দান করতে আসেন, নামাজ পড়েন। এমনকি বিদেশী লোকজনও আসেন। তাই মুসল্লিদের স্থান সংকুলান হচ্ছে না।
আমরা মসজিদ কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখানে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মসজিদ ও ইসলামিক কমপ্লেক্স গড়ে তুলব। যেখানে একসাথে ৩০ হাজার মুসল্লী নামাজ পড়তে পারবেন। এতে প্রাথমিকভাবে ১১৫ কোটি টাকা ব্যায়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
১৯৯৭ সাল থেকে এই মসজিদটি ওয়াকফর আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। এখানে একটি এতিমখানা রয়েছে, সেই এতিমখানার খরচ এই টাকা থেকে চালানো হয়।