সাংবাদিক নির্যাতন ডিসি’র পর পার পেয়ে গেলেন আরডিসি নাজিমও

Slider বাংলার মুখোমুখি


কুড়িগ্রামে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় দণ্ডপ্রাপ্ত সহকারী সচিব নাজিম উদ্দিনের দণ্ড বাতিল করা হয়েছে। গত সোমবার তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর আগে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সাংবাদিক নির্যাতনের মূল হোতা নাজিম উদ্দিনকে ‘গুরুদণ্ড’ এক ধাপ পদাবনতি দিয়েছিল মন্ত্রণালয়। তাকে সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে পদাবনমন করে সহকারী সচিব করা হয়। দুই বছরের জন্য তাকে এই দণ্ড দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে নাজিম উদ্দিন প্রেসিডেন্টের কাছে দণ্ড মওকুফের আবেদন করলে প্রেসিডেন্ট তা মঞ্জুর করেন। এর প্রেক্ষিতে দণ্ড বাতিল করে নাজিম উদ্দিনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর আগে একই প্রক্রিয়ায় অভিযুক্ত উপ-সচিব সুলতানা পারভীনকে অব্যাহতি দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

২০২০ সালের ১৩ই মার্চ অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলাট্রিবিউন-এর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামের বাড়িতে ঢুকে তাকে ধরে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। পরে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে এক বছরের কারাদণ্ড দেয়। তার বাড়িতে আধা বোতল মদ এবং গাঁজা পাওয়ার অভিযোগ আনা হয়। এভাবে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে একজন সাংবাদিককে ধরে এনে সাজা দেয়ার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীন, আরডিসি বা রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর নাজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা এবং এনডিসি বা নেজারত ডেপুটি কালেক্টর এস এম রাহাতুল ইসলাম। ঘটনার বিভাগীয় তদন্তপূর্বক অভিযোগের প্রমাণ পায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সুলতানা পারভীনের দুই বছরের বেতন স্থগিত করা হয়। আরডিসি নাজিমকে এক ধাপ পদাবনতি দেয়া হয়। এনডিসি রাহাতুলের তিন বছর বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা হয় এবং রিন্টু বিকাশ চাকমাকে চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে প্রেসিডেন্টের কাছে শাস্তি মওকুফের আবেদন করেন সুলতানা পারভীন। প্রেসিডেন্টের সুপারিশক্রমে সুলতানা পারভীনের দণ্ড মওকুফ করে তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। সুলতানা পারভীন বর্তমানে ওএসডি অবস্থায় আছেন। নাজিম উদ্দিন বর্তমানে সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে রয়েছেন। তবে সাংবাদিক পেটানোর ঘটনায় অপেক্ষাকৃত কঠিন দণ্ড পেয়েছিলেন রিন্টু বিকাশ চাকমা। তাকে চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে, রিন্টু বিকাশ চাকমাও ওএসডি অবস্থায় রয়েছেন। তৎকালীন এনডিসি রাহাতুল ইসলাম সহকারী কমিশনার হিসেবে কর্মরত আছেন বরিশাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, ঘরের দরজা ভেঙে পরিবারের সদস্যদের গালিগালাজ করে সেই রাতে আমাকে তুলে নিয়ে যান আরডিসি নাজিম। ডিসি অফিসে মোবাইল কোর্ট বসানো, মারধর করা, ক্রসফায়ারের ভয় দেখানো এবং সবশেষে আমাকে কারাগারে নিয়ে যান তিনি। এই ঘটনার নির্দেশদাতা ছিলেন ডিসি সুলতানা পারভীন। অর্থাৎ মূল হোতা হলেন দুইজন। আমি পরবর্তীতে রিন্টু বিকাশ চাকমা ও রাহাতুলের নাম জানতে পারি। অথচ মূলহোতাদেরই অব্যাহতি দেয়া হলো। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে আরিফুল বলেন, ঘটনার পর সরকারের ঊচ্চ পর্যায় থেকে আশ্বাস দেয়া হয়েছিল যে, দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে এবং ন্যায়বিচার পাবো। একটা প্রমাণিত অপরাধ প্রমাণিত হলো, বিভাগীয় তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেল। কিন্তু অপরাধীরা ক্ষমা পেয়ে গেল। এই ঘটনা সরকারি কর্মকর্তাদের অপরাধ প্রবণতা বাড়িয়ে দেবে। এধরনের কর্মকর্তার কাছে রাষ্ট্র জিম্মি হয়ে আছে- এমন বার্তা পাবে জনগণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *