স্মার্টফোনের বিশ্বখ্যাত ওপেন সোর্স অপারেটর সায়ানোজেনের প্রধান নির্বাহী ক্রিট ম্যাকমাস্টার তার সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বাজারে অ্যাপল আর স্যামসাংয়ের যে দ্বৈতাধিপত্য চলছে আগামী পাঁচ বছরেই তার ইতি ঘটবে। ছোট ছোট নির্মাতাদের (অরিজিনাল ইক্যুপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারারস-ওইএম) হাতেই জবাই হয়ে যাবে এই দৈত্যাকায় কম্পানি দুটির বাজার।
সায়ানোজেন সম্প্রতি কোয়লকমের সঙ্গে অংশিদ্বারীত্ব ঘোষণা করেছে। কোয়ালকম এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় চিপস-নির্মাতা। আর নতুন অংশিদারীত্বে তারা বাজারে ছাড়ছে সায়নোজেনমোড সফটওয়্যার।
অ্যান্ড্রয়েডের কাস্টম ভার্সন হিসেবে এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই সফটওয়্যার। অ্যান্ড্রয়েডভিত্তিক স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট কম্পিউটারের ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম হিসেবেই পরিচালিত এই সায়ানোজেনমোড।
নতুন এই চুক্তির ফলে কোয়লকম যে কোনও নির্মাতাকে চিপস ব্যবহারে সরাসরি অনুমতি দিতে পারবে আর সফটওয়্যারও সরবরাহ করতে পারবে।
ম্যাকমাস্টার মনে করেন, এই চুক্তির মধ্য দিয়ে নতুন বাজার সৃষ্টিতে অনেক এগিয়ে যাবে সায়ানোজেন। বিশেষ করে অ্যান্ড্রয়েড প্ল্যাটফর্ম যেসব স্থানে জনপ্রিয় সেখানেই সৃষ্টি হবে তাদের বড় বাজার।
আগামী ৩-৫ বছরের মধ্যে এই প্রক্রিয়া বিশ্বের সকল বাজারেই প্রভাব ফেলতে শুরু করবে। খদ্দেরের চাহিদামতো সেবা এই মডেলের কারণে ক্রমেই সে বাজার বড় হতে থাকবে। আর এতে স্থানীয় ওইএমগুলো অনায়াসেই বড় হতে থাকবে।
বিশ্ববাজারে আমরা এরই মধ্যে ওইএমগুলোর মধ্যে তিন নম্বরে উঠে আসতে দেখছি। আর মাইক্রোম্যাক্স ১০ নম্বরে অবস্থান করছে। এই কোম্পানিগুলো সত্যিকার অর্থেই সস্তা হ্যান্ডসেট বাজারে ছাড়ছে যার পারফরম্যান্সও সত্যিকার অর্থেই অসাধারণ। কোয়ালকম চাহিদামতো সমাধান দিচ্ছে বলেই কোম্পানিগুলো এই পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রথম সারির ওইএম স্যামসাংয়ের কথাই ধরুন, আসছে পাঁচ বছরে এই ব্র্যান্ডকে নকিয়ার ভাগ্যবরণই করতে হবে। অ্যাপেল একটু বেশি সময় টিকে থাকলেও তাকেও যেতে হবে একই সমস্যার মধ্য দিয়ে। আর এর অন্যতম কারণ হচ্ছে বাজারের নিচের দিকে এই ব্র্র্যান্ডগুলো প্রতিযোগিতাতেই নেই।
ম্যাকমাস্টার মনে করেন, এই কম্পানিগুলো এত বড় হয়ে যায়নি যে পড়ে যাবে না। অন্যদিকে উদীয়মান কোম্পানিগুলো অল্পসময়ের মধ্যেই বড় বাজার দখল করে নিচ্ছে। জিয়াওমি, ওয়ানপ্লাস’র মতো কোম্পানিগুলো স্থানীয়ভাবে বড় সহায়তাও পাচ্ছে। আর বাজার বুঝে বুঝেই তারা পণ্য ছাড়ছে।
ম্যাকমাস্টার এও মনে করেন, এই এগিয়ে চলা আরও ছোট ছোট কোম্পানিকে বাজারে আসতে উৎসাহিত করবে। যা স্যামসাং, মাইক্রোসফট’র মতো বড়দের জন্য খারাপ খবর বৈকি।
স্যামসাংয়ের জন্য খবরটি সবচেয়ে খারাপ বলেই মনে করেন সায়ানোজেনের সিইও। তিনি বলেন, নকিয়ার যে দশা হয়েছে তা থেকেই এটা অনুমান করা যায়।
গত গ্রীস্মে ভারতের বাজারে স্যামসাংকে ছাপিয়ে গেছে মাইক্রোম্যাক্স, সেই তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, মাত্র আট মাসে আমরা ঘটনাটি ঘটে যেতে দেখেছি।
আর এতো গেলো মাত্র একটি মার্কেটের খবর। গোটা বিশ্বেই এখন বাজারের চেহারাটি একই রকম। স্থানীয় পণ্যগুলো নিজ নিজ বাজারে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে এমনটাই নজরে পড়ছে এমন মন্তব্য করে ম্যাকমাস্টার ল্যাটিন আমেরিকার ব্লু প্রোডাক্টস, ফিলিপিন্সের চেরি মোবাইলের উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এগুলোও সামনে এগিয়ে আসছে। আর তাতে বাজারের অংকটাই পাল্টে যাচ্ছে।