রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দামামায় দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম আরেক দফা বাড়ল। মাত্র চার দিনের ব্যবধানে সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৫০ টাকা বেড়ে ৭৯ হাজার ৩১৫ টাকায় উঠেছে।
বুধবার থেকে নতুন দর কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি-বাজুস।
এর আগে গত ৪ মার্চ সবচেয়ে ভালো মানের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম তিন হাজার ২৬৫ টাকা বাড়িয়ে ৭৮ হাজার ২৬৫ টাকায় নির্ধারণ করে দিয়েছিল বাজুস। যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় স্থানীয় বাজারে দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগারওয়ালা।
তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের ডামাডোলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে গোল্ডের দাম। মঙ্গলবার এক দিনেই প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৬০ ডলার বেড়েছে। এমন অস্থির বাজার আমি আমার জীবনে দেখিনি। গোল্ডের দাম শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, আমি নিজেও বুঝতে পারছি না। যেভাবে বাড়ছে, এটা অব্যাহত থাকলে আমাদের আরও বাড়ানো ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।’
মঙ্গলবার বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এম এ হান্নান আজাদের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বুধবার থেকে সারা দেশে নতুন দাম অনুযায়ী স্বর্ণ কেনাবেচা হবে।
সবচেয়ে ভালো মানের ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ কিনতে লাগবে ৭৯ হাজার ৩১৫ টাকা। মঙ্গলবার পর্যন্ত এই মানের স্বর্ণ ৭৮ হাজার ২৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে; বেড়েছে ১ হাজার ৫০ টাকা।
২১ ক্যারেটের সোনার দাম ৯৩৩ টাকা বাড়িয়ে ৭৫ হাজার ৬৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৮ ক্যারেটের সোনার দাম ৮১৫ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ৯৬৮ টাকায়। সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরির দাম ৬৪২ টাকা বাড়িয়ে ৫৪ হাজার ৬৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে রুপার দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ক্যাটাগরি অনুযায়ী ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি রুপার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৫১৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের রুপার দাম ১ হাজার ৪৩৫ টাকা। ১৮ ক্যারেটের রুপার দাম ১ হাজার ২২৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রুপার দাম ৯৩৩ টাকায় অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার পর্যন্ত ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ বিক্রি হয়েছে ৭৮ হাজার ২৬৫ টাকা। ২১ ক্যারেটের দাম ছিল ৭৪ হাজার ৭৬৬ টাকা। আর ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ছিল ৬৪ হাজার ১৫২ টাকায় এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরির দাম ছিল ৫৩ হাজার ৪২১ টাকা টাকা।
দিলীপ কুমার আগারওয়ালা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় স্থানীয় বাজারে বাড়ানো হয়েছে। রাশিয়া ইউক্রেনে হামলার পর থেকেই বিশ্ববাজারে গোল্ডের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তার সঙ্গে আমাদের বাজারের দাম সমন্বয় করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে স্বর্ণের দাম বাড়া বা কমা নির্ভর করে বিশ্ববাজারের ওপর। বিশ্ববাজারে বাড়লে দেশের বাজারেও দাম বাড়ানো হয়। ঠিক তেমনি বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশেও কমে স্বর্ণের দাম।’
বিশ্ববাজারে মঙ্গলবার রাত ১০টায় প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম, ২.৬৫ ভরি) স্বর্ণের দাম ছিল ছিল ২ হাজার ৬০ ডলার।
গত ৩ মার্চ রাতে বাজুস যখন স্বর্ণের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় তখন বিশ্ববাজারে প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ছিল ১ হাজার ৯৩১ ডলার।
এর আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের বাজারে মূল্যবান এ ধাতুটির দাম ভরিতে ১ হাজার ৯৬৬ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ১ হাজার ৮২৬ ডলার ৬১ সেন্ট।
মাস দু’য়েক আগে এর দর ১ হাজার ৮০০ ডলারের নিচে নেমে এসেছিল।