দেশে দু’দিন আগে আবারো স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে। বাজারে এখন সবচেয়ে ভালো মানের এক ভরি বাইশ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ৭৮ হাজার ২৬৫ টাকা। এই দফায় স্বর্ণের দাম বাড়ল ৩ হাজার ২৬৫ টাকা।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি বাজুস মার্চের তিন তারিখ এই মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। গত মাসেই ১ হাজার ৮৬৭ টাকা দাম বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু মাত্র তিন মাস আগে সোনার দাম কমেছিল।
স্বর্ণের দাম প্রায়ই ওঠানামা করতে দেখা যায়। কিভাবে নির্ধারণ করা হয় স্বর্ণের দাম?
সংকট ও ডলারে আস্থাহীনতা
এই দফায় স্বর্ণের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। যেকোনো ধরনের বৈশ্বিক সঙ্কট স্বর্ণের দামে প্রভাব ফেলে, যা হতে পারে যুদ্ধ বা মহামারী, বলছিলেন বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলিপ আগারওয়াল।
কিভাবে সঙ্কটের প্রভাব স্বর্ণের দামের উপরে পড়ে সেটি ব্যাখ্যা করে তিনি বলছেন, যখনই মানুষ ডলারের উপরে আস্থা হারায় তখন স্বর্ণের দিকে ঝুঁকে পড়ে। কাছাকাছি সময়ে যতগুলো যুদ্ধ হয়েছে, ইরান, ইরাক, লিবিয়া এমনকি চীন ও আমেরিকার যে অর্থনৈতিক যুদ্ধ হয়েছে, তখনও আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের রেট বেড়েছে। এখন কিন্তু পুরো ইউরোপ স্বর্ণের দিকে ঝুঁকছে। এই কারণে সঙ্কট এলে স্বর্ণের দাম বাড়ে।
তিনি বলছেন, মোদ্দা কথা হলো আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম কমে যাওয়ার প্রভাব পড়ে স্বর্ণের বাজারে। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন সংকটের সময় স্বর্ন বেশি কেনে, তখন এর দাম বেড়ে যায়।
ক্রুড অয়েল এবং স্বর্ণ
আগারওয়াল ব্যাখ্যা করছেন, ক্রুড অয়েল বা অপরিশোধিত তেল এবং স্বর্ণ একে অপরের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। নানা দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলার যেমন থাকে, তেমনি স্বর্ণও গচ্ছিত থাকে।
স্বর্ণ একটি পণ্য কিন্তু মূল্য পরিশোধেও এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। তেলের দাম বাড়লেও স্বর্ণের দাম বাড়ে। আবার উল্টোটাও হয়। মুদ্রায় অস্থিরতা থাকলে প্রায়শই অপরিশোধিত তেলের মূল্য স্বর্ণে পরিশোধ করা হয়।
ক্রুড অয়েল উৎপাদনকারী দেশগুলো এটা চায় যখন তারা সামনে ডলারের মূল্য পড়ে যাবে কি না সেনিয়ে শঙ্কিত বোধ করে। তেলের দাম বাড়লে দ্রব্য মূল্য বাড়ে। যার ফলে শঙ্কিত হয়ে স্বর্ণ মজুদ রাখার প্রবণতা বাড়ে, তখন দামও বাড়ে।
বাংলাদেশের বাজারে স্বর্ণের দাম
যখনই সঙ্কট, ডলারের মূল্য, তেলের দাম, মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যস্ফীতি, আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের মূল্য বাড়িয়ে দেয় তখন বাংলাদেশেও এর দাম বাড়ে।
দিলিপ আগারওয়াল বলছেন, একজন জুয়েলারের পণ্য হলো গয়না, যার কাঁচামাল বুলিয়ন-বিক্রেতাদের কাছ থেকে কেনা হয়। তারা আন্তর্জাতিক বাজারের রেট অনুসরণ করেন।
কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে যে স্বর্ণ বিক্রি হয় তার বেশিরভাগই চোরাচালান হয়ে আসা বলে অভিযোগ করা হয়। এসব স্বর্ণ থেকে সরকার কোনো অর্থ পায় না।
সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের বাজারে স্বর্ণের দাম আসলে কিভাবে নির্ধারণ হয় তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন।
সূত্র : বিবিসি