বাংলাদেশের নিরাপত্তা খাতে বৃটিশ সরকারের ৫ কোটি ২০ লাখ পাউন্ড সহায়তার অপব্যবহার করা হচ্ছে। নিরাপত্তা সেবা শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এ কার্যক্রম গৃহীত হয়। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল এ অর্থ তাদের প্রতিপক্ষকে টার্গেট করতে ব্যবহার করে থাকতে পারে। বৃটিশ সরকারের সহায়তা বিষয়ক পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান ইন্ডিপেন্ডেন্ট কমিশন অন এইড ইমপ্যাক্ট (আইসিএআই) এক রিপোর্টে এ উদ্বেগ জানিয়েছে। কিন্তু বৃটিশ সরকারের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে, তহবিল অপব্যবহারের কোন তথ্যপ্রমাণ নেই। বৃটেনের ডেইলি মেইল ও টেলিগ্রাফে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। এতে বলা হয়, বৃটিশ সরকার বাংলাদেশী গোয়েন্দাদের মোবাইল ফোনের অবস্থান শনাক্ত করা, ফোনকল তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নজরদারির প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এ প্রশিক্ষণ ব্যবহার করে বিরোধী নেতাদের খুঁজে বের করে কারান্তরীণ করা হয়ে থাকতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইসিএআই। সংস্থাটির এ উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে বৃটিশ সরকারের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক দপ্তর (ডিএফআইডি) প্রাথমিকভাবে বলেছিল, কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট অফিসারেরা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নয়। কিন্তু আইসিএআই তাদের উদ্বেগ জনসমক্ষে প্রকাশ করার হুমকি দিলে প্রকল্পটি বাতিল করা হয়। ৪ঠা মার্চ ডিএফআইডি দাবি করেছে তাদের সহায়তা অপব্যবহার হচ্ছে বলে কোন তথ্যপ্রমাণ নেই। কমিশনের রিপোর্টে এ-ও উঠে এসেছে যে ডিএফআইডি বাংলাদেশ পুলিশকে ফিঙ্গার প্রিন্ট নেয়ার প্রশিক্ষণও দিয়েছে। এর মধ্যে ছিল ৪০ হাজার দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদির ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহ করা। কিন্তু গবেষকরা বাংলাদেশে এমন একটি কার্যক্রমের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যেখানে ফিঙ্গার প্রিন্ট তথ্যপ্রমাণ আদালতে দাখিলযোগ্য নয়। আইসিএআই-এর গবেষণায় তথাকথিত দুর্বল রাষ্ট্রগুলোর পুলিশ ও নিরাপত্তা সেবা উন্নয়নে বৃটিশ সরকারের সহায়তার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ উঠেছে। ২০১৩ সালে সুদানের স্থানীয় পুলিশকে শক্তিশালী করার উদ্দেশে গৃহীত একটি কার্যক্রম বাতিল করা হয়। সেখানে পথশিশুদের ওপর পুলিশের নৃশংসতা নিয়ে উদ্বেগ উঠেছিল। গত বছর ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতেও জাতিসংঘের উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে একই রকম একটি কার্যক্রম বাতিল করা হয়। আইসিএআই এর পর্যবেক্ষকরা বাংলাদেশে ডিএফআইডি এবং জাতিসংঘ পরিচালিত কার্যক্রম সম্পর্কে জেনে বিস্মিত হয়েছেন। এ কার্যক্রমে বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা কর্মপদ্ধতি উন্নয়নে সহায়তা করার লক্ষ্যে সহায়তা করা হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে নানা সফটওয়্যার এবং গোয়েন্দা বিভাগে নানা প্রশিক্ষণ প্রদান। সফটওয়ার ও প্রশিক্ষণগুলোতে মোবাইল ফোনের অবস্থান শনাক্ত করা, কল ডাটা বিশ্লেষণ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরদারি শেখানো হয়েছে। পুলিশের দাবি, এ প্রশিক্ষণ মানবপাচারকারী এবং পতিতাবৃত্তির গ্যাংগুলো ছত্রভঙ্গ করতে সহায়ক হয়েছে। তবে আইসিএআই তাদের রিপোর্টে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, ‘আমাদের উদ্বেগ হলো এ সহায়তা হয়তো অপব্যবহারও হয়ে থাকতে পারে। আমাদেরকে ডিএফআইডি এবং ইউএনডিপি উভয়ই জানিয়েছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ পুলিশের রাজনীতিকরণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা প্রমাণ দেখেছি যে বিরোধী তৎপরতার সময়গুলোতে কারাগারের লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। অবনতিশীল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বৃটিশ সহায়তায় গঠিত গোয়েন্দা দক্ষতা বিরোধী দলগুলোকে পর্যবেক্ষণ এবং দমনপীড়নে ব্যবহার করা হতে পারে।’ কমিশনের এ রিপোর্টের জবাবে ডিএফআইডি বলেছে, এসব অভিযোগ নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে এবং তারা জানতে পেরেছে যে ইউকে সহায়তা ব্যয় এবং রাজনৈতিক দমনপীড়নে যোগসূত্রের কোন প্রকার তথ্যপ্রমাণ নেই। বৃটেনের বিরোধী লেবার দল মন্তব্য করেছে যে, কমিশনের এ রিপোর্টে দেখা যায় এসব ইস্যু মোকাবিলা করার কোন কৌশল ছিল না মন্ত্রীদের।
সূএ: মানবজমিন