ঢাকা: বিএনপি অংশ নিলে ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) নির্বাচনে কৌশল বদলাতে চায় আওয়ামী লীগ। সে ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির সঙ্গে গোপন জোটে হতে পারে বলে দেলের একজন সিনিয়র নেতা জানিয়েছেন।
এই নেতা দলের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠদের একজন।
তিনি জানিয়েছেন, এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিষয়টি আলোচনায় আনা হয়েছে। খোদ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের কাছেও কথা পাড়া হয়েছে।
‘এরশাদ হ্যাঁ কিংবা না কোনটাই বলেন নি। তফসিল ঘোষণার পর বিষয়টি ফয়সালার পক্ষে মত দিয়েছেন তিনি, জানালেন ওই নেতা।
তবে কথা উঠেছে, এমন সঝোতার প্রশ্ন এলে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে ভাগাভাগির প্রস্তাব দেওয়া হবে। যে কোন একটি মেয়র পদে জাতীয় পার্টি চাইবে। বিনিময়ে অপর সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে সমর্থন দেবে দলটি। এ ছাড়া কমিশনার পদেও ভাগ চাইবে বিরোধীদলে থাকা জাতীয় পার্টি।
এই যখন ভেতরের খবর, বাইরে জাতীয় পার্টির নেতাদের কেউই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ খুলতে রাজি হননি। প্রকাশ্যে তাদের অবস্থান এখনও নির্বাচনে একক অংশগ্রহণ।
একক ভাবে নির্বাচনেরই প্রস্তুতি চলছে।
জাপা নেতারা মনে করছেন বর্তমান রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে আওয়ামী লীগ-বিএনপির উপর মানুষ ক্ষিপ্ত। তারা বিকল্প খুজছে। সে কারণে এককভাবে নির্বাচন করলে জাপার প্রার্থীকেই মানুষ ভোট ভোট দেবে।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক সৈয়দ আবু হোসন বাবলা বলেন, আমরা একক ভাবে নির্বাচনের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছি। দলে নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী এমন নেতাদের তালিকা করা হচ্ছে। ওয়ার্ড কমিশনার পদেও একক প্রার্থী দেওয়া চেষ্টা চলছে।
উভয় সিটি করপোরেশনে জাতীয় পার্টির একাধিক প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দিতার জন্য প্রচার অভিযানও শুরু করেছেন। ঢাকা দক্ষিণে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান ও হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলনকে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে। আর উত্তর সিটি করপোরেশনে মহানগর (উত্তর) জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন বাবুল ও সৈয়দ তৈয়ব আলীর নাম শোনা যাচ্ছে।
জাতীয় পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেই একক প্রার্থী দিতে পারছে না। একজন করে নাম ঘোষণা করলেও উভয় সিটি করপোরেশনেই একাধিক প্রার্থী মাঠে নেমেছে। তারা নিজের ঘরেই সামাল দিতে পারছে না। আমাদের সঙ্গে কিভাবে সমঝোতা করবে।
সমঝোতার বিষয়ে কোন আলোচনা হচ্ছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে জাপার এই নেতা বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি অবগত নই। পার্টির চেয়ারম্যান ভালো বলতে পারবেন।’
এদিকে, নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি রওশন এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যে বৈঠক করেন তাতে সিটি করপোরেশন নির্বাচন ইস্যুতে আলোচনা হয়। এর আগের সপ্তাহে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আলোচনা শুরু হলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেন।
কোন পক্ষই মুখ না খুললেও এসব বৈঠক সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দু’দলের একজোট থাকার বিষয়টিই জোরালো হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন কর্মীরা। তাদের হিসেবে নির্বাচন জোটগতভাবেই মোকাবেলা করবে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি।
২০০৬ সালে নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটে জাতীয় পার্টি যোগ দিলে তা মহাজোট নাম পায়। এক এগারো পরবর্তী ২০০৮ সালে ২৯ ডিসেম্বরে নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় মহাজোট। সরকার গঠিত হলে জাতীয় পার্টি থেকে প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদের মন্ত্রী সভার সদস্য করা হয়।
ওই নির্বাচনের আসন ভাগাভাগি এবং সরকার গঠন নিয়ে নানা টানাপোড়েন থাকলে ৫ বছর কেটে যায়। ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক ভাবে মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে একই দিনে পরবর্তী নির্বাচনে যাওয়া ঘোষণা দেন এরশাদ।
এরশাদের ওই মহাজোট ছাড়ার ঘোষণাকে সমঝোতার ফসল বলে অভিহিত করে আসছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলেন বিএনপি যেহেতু নির্বাচনে যাচ্ছে না, তাই নির্বাচনে দল বাড়ানো হয়েছে মহাজোট ভেঙ্গে। পরবর্তীতে অনেক ঘটনা প্রবাহের মাধ্যমে নির্বাচন হয়। জাতীয় পার্টি একইসঙ্গে মন্ত্রীসভা যোগদান করে ও বিরোধীদল হিসেবে অবির্ভূত হয়।
জাতীয় পার্টি বিরোধীদলে থাকলেও সরকারি দলের সঙ্গে দহরম মহরমের বিষয়টি ওপের সিক্রেট। অনেক বিষয়ে এক সুরে গাইছেন তারা। অনেকে মনে করেন আওয়ামী লীগ-জাপার মধ্যে গোপন ঐক্য রয়েছে। ঐক্য প্রশ্নে এরশাদ নিম রাজি থাকলেও তার স্ত্রী রওশন এরশাদ পুরোই গাটছড়া বেঁধে আছেন।
আর বিএনপির পরিণতি দেখে এরশাদও এখনই সরকারকে ক্ষেপাতে চান না বলেও মনে করছেন দলের অনেকেই।