রাশিয়ার পার্লামেন্ট দুমার স্পিকার ভিয়াশলাভ ভলোদিন দাবি করেছেন, রাশিয়ার আক্রমণের মুখে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ ছেড়ে পালিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদেমির জেলেনস্কি।
শনিবার যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে নিজের চ্যানেলে এক বার্তায় এই দাবি করেন তিনি।
ভোলোদিন বলেন, ‘জেলেনস্কি তাড়াহুড়া করেই কিয়েভ ছেড়েছেন। গতকাল রাতে তিনি ইউক্রেনের রাজধানীতে ছিলেন না। সঙ্গীসাথীসহ তিনি লিভোভ শহরে পালিছেনে, যেখানে তিনি ও তার সহযোগীরা বসবাসের বন্দোবস্ত করেছেন।’
ভোলোদিন আরো দাবি করেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিয়েভ থেকে জেলেনস্কির ভিডিওগুলো আগেই রেকর্ড করে রাখা হয়েছিলো।
তিনি জানান, ইউক্রেনের আইনসভার সদস্যদের থেকেই এই তথ্য পেয়েছেন তিনি।
এর আগে শুক্রবার রাতে ও শনিবার সকালে দুই দফা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দফতরের সামনে দাঁড়িয়ে ভিডিও বার্তা দেন ভলোদেমির জেলেনস্কি।
এই ভিডিও বার্তাতে কিয়েভেই তিনি অবস্থান করছে জানিয়ে বলেন, ‘ভুয়া খবরে কান দেবেন না। আমি এখানেই আছি। আমরা কখনো অস্ত্র ছাড়বো না। আমরা আমাদের রাষ্ট্রকে রক্ষা করবো।’
এর আগে বৃহস্পতিবার পূর্ব ইউক্রেনে রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সহায়তায় রুশ স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীকে পূর্ণমাত্রায় অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে পূর্ব ইউক্রেনের রুশপন্থী বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এর জেরে সোমবার বিদ্রোহীদের দুই রাষ্ট্র ‘দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক’ ও ‘লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক’কে স্বীকৃতি দিয়ে শান্তি রক্ষায় রুশ সৈন্য পাঠানোর নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
২০১৪ সালে ইউক্রেনে রুশপন্থী সরকারের পতনের পর রাশিয়া দেশটিতে আগ্রাসন চালিয়ে ক্রিমিয়া অঞ্চলটি দখল করে নেয়। পাশাপাশি মস্কোর পৃষ্ঠপোষকতায় পূর্ব ইউক্রেনে বিপুল অঞ্চল দখল করে নেয় বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহী গোষ্ঠী।
পূর্ব ইউক্রেনে রুশপন্থী বিদ্রোহীরা দুই রাষ্ট্র ‘দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক’ ও ‘লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠা করে।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে এই সংঘর্ষ বন্ধে ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যস্থতায় ২০১৪ সালে বেলারুশের মিনস্কে ইউক্রেন ও রাশিয়া এক চুক্তি করে।
মিনস্ক চুক্তি অনুযায়ী এই অঞ্চলে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি, বন্দি বিনিময় ও দোনবাস অঞ্চল থেকে রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সরে যাওয়ার বিষয় যুক্ত ছিলো। দোনবাস অঞ্চল থেকে রুশপন্থী বিদ্রোহীরা সরে গেলে ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গণভোটের ব্যবস্থা করবে।
কিন্তু পরস্পরের প্রতি সহিংসতার অভিযোগের জেরে এই চুক্তি আর বাস্তবায়িত হয়নি।
এরই মধ্যে ২০২০ সালে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের ন্যাটো সামরিক জোটের ‘ইনহ্যান্সড অপারচুনিটি পার্টনার’ পদ পেলে রাশিয়া ক্ষুব্ধ হয়। নিজ দেশের সীমান্তে ন্যাটোর সম্প্রসারণের শঙ্কায় রাশিয়া ইউক্রেনের যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক জোটে যোগ দেয়ার বিরোধিতা করছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সৈন্য সমাবেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনের পর উত্তেজনা নতুন করে বাড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় এক লাখ সৈন্য ইউক্রেন সীমান্তে মোতায়েন করেছে মস্কো।
যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে, ইউক্রেনে হামলার জন্যই রাশিয়া ওই সৈন্য সমাবেশ করেছে। কিন্তু রাশিয়া এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, সামরিক বাহিনীর মহড়ার অংশ হিসেবে ওই সৈন্য সমাবেশ করা হয়েছে।
পরে কিছু সৈন্য সরিয়ে নেয়ারও ঘোষণা দেয় রাশিয়া।
পরে ১৭ ফেব্রুয়ারি রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সাথে শুরু হওয়া ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর সংঘর্ষের জেরে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। রাশিয়ার এই পদক্ষেপের জেরে দেশটির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা বিভিন্ন প্রকার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
সূত্র : স্পুৎনিক ও আলজাজিরা