কে হচ্ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), জানা যাবে আজ শনিবার। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সিইসিসহ ৫ জন কমিশনারের নামের প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে আজ। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের লক্ষ্যে গঠিত সার্চ কমিটি গত ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রতি পদের বিপরীতে দুজন করে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করে।
সেই তালিকার অগ্রভাগে সাবেক দুজন আমলার নাম রয়েছে বলে আমাদের সময় জানতে পেরেছে। ওই তালিকা থেকে রাষ্ট্রপতি একজন আমলাকে সিইসি হিসেবে নিয়োগ দিতে পারেন বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্ভাব্য সিইসি খুব বেশি আলোচিত মুখ নন। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আসতে পারেন একজন অর্থনীতিবিদ। যিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। এ ছাড়া নারী নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আসতে পারেন সাবেক একজন জেলা ও দায়রা জজ। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজন নতুন কমিশনের সদস্য হতে যাচ্ছেন। যিনি সাবেক আমলা। বরাবরের মতো সাবেক একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলও নির্বাচন কমিশনার হতে পারেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, প্রস্তাবিত তালিকার অগ্রভাগে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ ও ইসি সচিব রয়েছেন। তবে অগ্রভাগে থাকা কাউকেই যে সিইসি হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে এমন কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। রাষ্ট্রপতি চাইলে তালিকার মধ্য থেকে যে কাউকে সিইসি ও কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিতে পারেন।
সূত্র জানায়, সে ক্ষেত্রে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সিইসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এ পদে আসতে পারেন এমন একজন সাবেক আমলা, যিনি খুব বেশি পরিচিত নন। সার্চ কমিটির আমন্ত্রণে অংশ নেওয়া বিশিষ্ট নাগরিকদের অনেকেই সিইসি হিসেবে সাবেক কোনো আমলাকে নিয়োগের প্রস্তাব করেছেন। কর্মদক্ষতা ও সব স্তরের মানুষের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রশাসনের সাবেক কোনো শীর্ষ কর্মকর্তাকেই ইসির প্রধান হিসেবে দেখতে চান তারা।
সূত্র জানায়, সার্চ কমিটির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়া নাগরিক প্রতিনিধিদের কয়েকজন প্রস্তাবিত নাম বিস্তারিত (কে কার নাম প্রস্তাব করেছেন) প্রকাশের দাবি জানান। তবে বেশিরভাগই কোনো দল কার নাম প্রস্তাব করেছে তা বিস্তারিত প্রকাশ না করার পক্ষে মত দেন।
থাকা না থাকার তদবির
ইসি পুনর্গঠন নিয়ে যখন সর্বত্র আলোচনা, তখন ইসিতে আসা- না আসা নিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে আরেক গল্প। কারও কারও কাছে নির্বাচন কমিশন বহুল প্রত্যাশিত স্থান। সেখানে একটি পদ পেতে তারা সার্চ কমিটির সঙ্গে সম্পৃক্তদের থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের শীর্ষ পর্যায়েও ব্যাপক তদবির চালিয়েছেন। অন্যদিকে ইসির কোনো পদে যেন দায়িত্ব দেওয়া না হয় এ জন্য তদবির করেছেন কেউ কেউ।
জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুল পরিচিত একজন শিক্ষকের নাম ছিল সার্চ কমিটির বৃহত্তর তালিকায়। সংক্ষিপ্ত তালিকায়ও তার নাম ওঠে। চূড়ান্ত তালিকায়ও নাম থেকে যেতে পারে এমন খবরে তিনি আগেভাগেই সংশ্লিষ্টদের কাছে ফোনে বার্তা পাঠিয়ে তাকে না রাখার অনুরোধ জানান।
অন্যদিকে, ট্যুরিজম সংক্রান্ত কাজে জড়িত একজনের নাম আসে সার্চ কমিটির প্রথম তালিকায়। চূড়ান্ত পর্যায়েও যেন তার নাম রাখা হয় সে জন্য তিনি সার্চ কমিটির সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক জায়গায় জোর তদবির চালান। একইভাবে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের কাছে গিয়ে অনুরোধ জানাতে দেখা গেছে অনেককে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো তদবির কাজে আসেনি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সার্চ কমিটির একজন সদস্য জানান, মূল তালিকা থেকে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি পর্যন্ত অত্যন্ত স্বচ্ছতা ও দক্ষতা অবলম্বন করেছেন তারা। তদবির আমলে নেওয়া নয় বরং সঠিক ব্যক্তিকে খুঁজে বের করাই ছিল তাদের মূল কাজ। তারা সেই কাজটিই করেছেন। তাদের বিশ্বাস প্রজ্ঞাপন হলে জনগণ তাদের কাজকে সাধুবাদ জানাবে।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন করেন। বিশিষ্টজনদের সঙ্গে চার দফা আলোচনা এবং কমিটির সদস্যরা নিজেরা সাতটি বৈঠক করে ১০ জনের নামের তালিকা চূড়ান্ত করে। তবে কাদের নাম প্রস্তাব করেছে, তা প্রকাশ করেনি সার্চ কমিটি।
তারা বলছে, এটা প্রকাশের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। তবে সার্চ কমিটি রাজনৈতিক দলসহ সবার কাছে চাওয়ার পর যে ৩২২টি নাম এসেছিল, তা প্রকাশ করেছে। যদিও এর পরও আরও ১২ জনের নাম আসে কমিটির কাছে, সেগুলো প্রকাশ করা হয়নি। গত মঙ্গলবার ১০ জনের তালিকা চূড়ান্ত করার পর গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন করে সার্চ কমিটি।
এবারই প্রথম আইনের অধীনে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা হচ্ছে। এর আগে দুবার সার্চ কমিটি গঠন করে ইসিতে নিয়োগ হলেও তখন আইন ছিল না। ২০১৭ সালে তখনকার সার্চ কমিটি যেদিন রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ তুলে দিয়েছিল, সেদিনই নিয়োগের আদেশ হয়েছিল।