ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্বাত্মক আগ্রাসনে বৈশ্বিক অর্থনীতি মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলে সতর্ক করেছে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থা দুটির প্রধানরা ইউক্রেনকে সাহায্য করতে প্রস্তুত বলে বৃহস্পতিবার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
তবে পাশাপাশি তারা সতর্ক করে বলেছেন, রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রভাবগুলো পর্যবেক্ষণ করার জন্য সমন্বয় করছে বলে সংস্থা দুটি জানিয়েছে।
আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেছেন, তিনি ইউক্রেনের জনগণের ওপর যুদ্ধের প্রভাব সম্পর্কে ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’। এক টুইট বার্তায় তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এই যুদ্ধ ‘অঞ্চল ও বিশ্বের জন্য উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ঝুঁকি যোগ করবে।’
আইএমএফ যুদ্ধের অর্থনৈতিক প্রভাবের মূল্যায়ন অব্যাহত রেখেছে, কিন্তু ‘প্রয়োজনে আমরা সদস্যদের সমর্থন দিতে প্রস্তুত থাকব।’ ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি আগামী জুনে শেষ হতে যাওয়া একটি ঋণ কর্মসূচির অধীনে ইউক্রেনকে ২২০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দেবে জানিয়েছে।
অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘মর্মান্তিক সহিংসতা ও প্রাণহানির কারণে আতঙ্কিত।’ এ আগ্রাসন ‘ইউক্রেনের উন্নয়নে ধ্বংসাত্মক, সুদূরপ্রসারী অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব ফেলবে’ বলে তিনি সতর্ক করেছেন। ম্যালপাস বলেন, ‘আমরা ইউক্রেনকে অবিলম্বে সহায়তা প্রদানের জন্য প্রস্তুত রয়েছি এবং দ্রুত অর্থ ছাড়সহ নানা ধরনের সহায়তার জন্য বিকল্পগুলো প্রস্তুত করছি’।
ইউক্রেনে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে অর্থায়নের পরিকল্পনা রয়েছে বিশ্বব্যাংকের। এর অংশ হিসেবে দেশটিকে ৩৫ কোটি মার্কিন ডলার দেবে বলে ঘোষণা করেছে সংস্থাটি। আগামী মার্চের মধ্যেই এ অর্থ ছাড়ের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৃহস্পতিবার ইউরোপের সঙ্গে সমন্বয় করে মস্কোর শীর্ষ ব্যাংকের সম্পদ জব্দ ও দেশটিতে উচ্চ প্রযুক্তির রপ্তানি বন্ধ করাসহ গুরুতর নতুন নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা করেছে।
রাশিয়ার আগ্রাসনে ইতোমধ্যেই অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ২০১৪ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে, যা বিশ্ব মুদ্রাস্ফীতিতে উদ্বেগজনক চাপ যোগ করেছে। প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বাড়ছে হু-হু করে। বিশ্বব্যাপী শেয়ার ও সূচকের দরপতন অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে সোনা ও অ্যালুমিনিয়ামের দামও বাড়তে শুরু করেছে। রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে বিশ্ববাজারে গম থেকে শুরু করে জ্বালানির দামে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে অর্থনীতির অন্যান্য খাতেও।
ইউক্রেনে হামলায় বাধার মুখে পড়েছে কৃষ্ণ সাগর দিয়ে বাণিজ্যিক জাহাজের চলাচল। এ পথ দিয়ে আমদানি-রপ্তানি করা খাদ্যশস্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। করোনা মহামারির কারণে ইতোমধ্যেই বিশ্বের অনেক অঞ্চলের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। ফলে নতুন করে খাদ্যের দাম বাড়লে তা সংকট বাড়াবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ইউরোপের ৩৫ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা মেটে রাশিয়া থেকে। যুদ্ধের দামামায় গ্যাসের দাম বাড়তে শুরু করেছে।
যুদ্ধের ফলে সংকটে পড়তে শুরু করেছে পশ্চিমা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো। কারণ রাশিয়ার সঙ্গে নানাভাবে জড়িয়ে রয়েছে তারা। দেশটির সবচেয়ে বড় জ্বালানি তেল উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান রসনেফটে ১৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ মালিকানা রয়েছে যুক্তরাজ্যের বহুজাতিক জ্বালানি প্রতিষ্ঠান বিপির। প্রতিষ্ঠানটির মোট উৎপাদনের তিন ভাগের এক ভাগ আসে রসনেফট থেকে।
এছাড়া যৌথভাবে দুই প্রতিষ্ঠানের একাধিক ব্যবসা রয়েছে।