(নিউজিল্যান্ড) থেকে: বিশ্বকাপ কেবল অর্ধেক পথ পাড়ি দিয়েছে। ৪৯ ম্যাচের শেষ হয়েছে কেবল ২৫টি। এতে অবশ্য বিশ্বকাপ অংক না মেলানো-ই ভালো। কারণ, বিশ্বকাপ জিততে হলে যে কোনো দলকেই শেষ তিনটি ম্যাচ জিততে হবে। ১৮ মার্চ থেকে ২৯ মার্চ এর মধ্যে যে দল তিনটি ম্যাচ জিতবে বিশ্বকাপ তাদের হয়ে যাবে। এটাই হচ্ছে বিশ্বকাপের সবচেয়ে সহজ সমীকরণ।
কিন্তু তার আগে একসঙ্গে অনেকগুলো দল যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে বলা কঠিন মার্চের তৃতীয় থেকে চতুর্থ সপ্তাহের মধ্যে তিন ম্যাচ জয়ী দলটার নাম কি হতে পারে।
কিন্তু সেই দলটার নাম ইংল্যান্ড হলে সবচেয়ে বেশি লজ্জা পাবে মেলবোর্ন এজের এডিডর। কারণ, তার পত্রিকা এরই মধ্যে এবারের বিশ্বকাপের ‘সেরা হেডলাইন’র খেতাব পেয়ে গেছে! যদিও তাতে দারুণভাবে ক্ষুব্ধ ইংলিশ মিডিয়ার বড় একটি অংশ। তাদের ক্ষোভ আত্মমর্যাদায় খোঁচা দেয়ায়!
ক্রাইস্টচার্চে ইংল্যান্ড যখন স্কটল্যান্ডকে হারিয়েছিল, ‘মেলবোর্ন এজ’ তখন শিরোনাম করেছিল, ‘ইংল্যান্ড বিট স্কটল্যান্ড!’ এবং এটাকে বলা হয়েছে ওয়ার্ল্ড কাপ শক’! এতে অবশ্য ইংলিশরা শোকাহত নন। বরং ক্ষুব্ধ। তারা ফুঁসছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই হেডলাইনের জবাব দেয়ার ক্ষমতা কি ইংল্যান্ডের আছে? হেডলাইনকে পাল্টে দিতে হলে ক্রিকেট বিশ্বকে কি সত্যিই তড়িতাহত করতে পারবে ইংল্যান্ড! করার রাস্তাতো একটাই খোলা আছে ইংলিশদের সামনে। ২৯ মার্চ রাতে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বিশ্বকাপটা উঁচিয়ে ধরা। কিন্তু আপাতত সেই সম্ভাবনার দরোজা দূরে থাক, কোনো জানালাও খোলা দেখছেন না বিশেষজ্ঞদের বড় একটি অংশ। ক্রিকেট মহলে দু’একজন খোদ ইংরেজও স্বীকার করেছেন, এই ইংল্যান্ড যদি বিশ্বকাপ জেতে সেটা সত্যিই ‘ওয়ার্ল্ড কাপ শক’ হবে!
তবে ইংল্যান্ডকে নিয়ে যতো রসিকতাই হোক কেন, ইংল্যান্ড কিন্তু তিন তিনবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে। যদিও কাপ জেতা হয়নি তাদের। আর এবারের বিশ্বকাপে ইংলিশরা এমন ক্রিকেট খেলছে যে তাদের নিয়ে আশাবাদী হওয়ার কিছু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হবেন কীভাবে? পুল ‘এ’-তে তলানির দিকে ঠিক স্কটল্যান্ডের উপরে তাদের অবস্থান! তাও স্কটল্যান্ডের চেয়ে এক ম্যাচ বেশি খেলে! আর ওই স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটা জিতে তলানি থেকে একটু উপরে উঠে এসেছে তারা। ‘মেলবোর্ন এজ’ তাই ওরকম একটা ব্যাঙ্গাত্মক শিরোনাম করে ইংরেজদের ক্রিকেট আভিজাত্যের ঘটিটাকে ফুটো করে দিতে চাইলো!
ইংলিশ আর স্কটিশরা বিশ্বকাপে বাংলাদেশের গ্রুপেই আছে। এই দুটো দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের এখনো ম্যাচ বাকি। নেলসনে বুধবার স্কটল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ওই ম্যাচের আগে গ্রুপে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া-স্কটল্যান্ড-আফগানিস্তানের উপরে। কিন্তু ইংল্যান্ডের মতো অবস্থা যদি বাংলাদেশের হতো, তাহলে জিওফ বয়কট থেকে নাসের হুসেইন বাংলাদেশকে বিদ্রূপ করতে ছাড় দিতেন না কেউ-ই। হয়তো কেউ কেউ বিশেষজ্ঞের কলামে লিখে ফেলতেন, আইসিসি’র উচিত হবে বিশ্বকাপের মর্যাদা ঠিক রাখতে দলের সংখ্যা কমিয়ে ফেলা। বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের মতো দলকে কোয়ালিফাইং রাউন্ডে খেলিয়ে আনা! কতো কিছু! বিশ্বকাপের আগেই বা কম কি লেখা হলো।
মেলবোর্নের বাসিন্দা অস্ট্রেলিয়ার এক সাবেক তারকা ব্যাটসম্যান ডিন জোন্স তো বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক কথাই লিখেছেন। কিন্তু ভদ্রলোক ইংরেজদের এই দুরাবস্থায় কিছু লিখছেন না কেন সেটা জানতে খুব ইচ্ছে করে। ডিনোকে একটা ইমেইলও করেছি। উত্তরের অপেক্ষায় আছি। কিন্তু তার চেয়ে বেশি আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি স্কটল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ দুটোর ফলাফলের জন্য।
বাংলাদেশের একটা দৈনিকের ক্রীড়া সম্পাদক বন্ধু ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছেন। খুব আশাবাদী হয়ে উঠছি তার সেই স্ট্যাটাস দেখে! সত্যিইতো! ‘ল্যান্ড ফ্যাক্টর’ বাংলাদেশকে কোয়ার্টার ফাইনালে নিয়ে যেতে পারে! বাংলাদেশ তাদের বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথম জয় পেয়েছিল ’৯৯ এ এডিনবরাতে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। নেলসনে সেই স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ কি প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের নক আউট পর্যায়ে পৌঁছে যাবে!
না, আরো একটা ‘ল্যান্ড’ জয়ের ব্যাপার তখনো থেকে যেতে পারে। ব্র্যাডম্যানের শহর অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডকে হারাতে পারলে অবশ্য আর কোনো ফ্যাক্টরের দরকার পড়বে না। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ বাকি থাকতেই কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা নিশ্চিত হয়ে যাবে বাংলাদেশের। তেমনটি হলে অন্য কারো কোনো হেডলাইন করারও প্রয়োজন পড়বে না। বাংলাদেশ মিডিয়ার প্রধান শিরোনাম-ই হবে: ‘বাংলাদেশও পারে।’