ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া এক লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন করার পশ্চিমা নেতাদের ভাষায় ‘যে কোন সময়’ সামরিক অভিযানের আশংকা। পশ্চিমা নেতাদের এ আশংকার মধ্যেই বেলারুশ জানিয়েছে-রুশ সৈন্যদের সাথে তাদের যে যৌথ সামরিক মহড়া চলছিল, ইউক্রেনে উত্তেজনার কারণে তার মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।
ওই মহড়া শেষ করে প্রায় ৩০,০০০ রুশ সেনা রবিবার দেশে ফিরে যাবার কথা ছিল। কিন্তু রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং তার মিত্র বেলারুশের নেতা আলেক্সান্ডার লুকাশেংকো এ মহড়ার মেয়াদ বাড়িয়ে এই সৈন্যদের আপাতত বেলারুশেই রাখার পদক্ষেপ নিলেন।
বেলারুশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধি এবং পূর্ব ইউক্রেনের পরিস্থিতির অবনতি” এ মহড়ার মেয়াদ বাড়ানোর একটি কারণ।
পশ্চিমা নেতারা আশংকা করেন যে এই সৈন্যদের ইউক্রেনে অভিযানের জন্য ব্যবহার করা হতে পারে, তবে রাশিয়া তা অস্বীকার করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, রাশিয়া-বেলারুশ সামরিক মহড়ার মেয়াদ বৃদ্ধি এটাই দেখাচ্ছে যে “বিশ্ব এখন যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তিনি নিশ্চিত যে রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান চালাবে। পশ্চিমা নেতারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন যে তারা ইউক্রেনে অভিযান চালানোর অজুহাত হিসেবে একটি ভুয়া কারণ খাড়া করার চেষ্টা করছে। তবে রাশিয়া বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
এদিকে, ইউক্রেনের রুশ-সমর্থিত বিদ্রোহী পূর্বাঞ্চলে গত কয়েকদিনে উত্তেজনা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
পূর্ব ইউক্রেনে রবিবার সকালেও বিদ্রোহীদের দখলে-থাকা ডনিয়েৎস্ক শহর থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। আর লুহানস্কে রুশ-সমর্থিত বিদ্রোহীরা অভিযোগ করে যে সরকারি সৈন্যরা ফ্রন্টলাইন পার হয়ে এসে একটি আক্রমণ চালিয়েছে এবং তাতে দু’জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। অবশ্য এর পর পক্ষে তারা কোন প্রমাণ দেয়নি। রুশ তদন্তকারীরা ঘটনাটি অনুসন্ধান করছে।
সরকারি বাহিনী ও রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষের তৃতীয় দিনে দু’জন ইউক্রেনীয় সৈন্য নিহত হয়েছে। দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে গত রাতে একাধিকবার গোলাবর্ষণের অভিযোগ এনেছে।
বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে হাজার হাজার বেসামরিক লোককে রাশিয়ার ভেতরে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলছে, তারা ডনবাস এলাকায় যাবার একটি চেকপয়েন্ট ব্যবহার স্থগিত করেছে। কারণ বেসামরিক মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বলছে, তারা ইউক্রেনীয়দের গোলাবর্ষণের জবাব দিচ্ছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তারা কোনো উস্কানিতে সাড়া দেবেন না। তবে তিনি বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, রাশিয়া কোনো অভিযান চালালে তারা আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ নেয়া হবে।
পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে রাশিয়া এই নিশ্চয়তা চাইছে যে ইউক্রেনকে যে কখনো ন্যাটো সদস্য করা হবে না এবং পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সামরিক উপস্থিতি কমাতে হবে-যদিও মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো এমন কোনো নিশ্চয়তা দিতে রাজি নয়।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন যদি ন্যাটোতে যোগ দেয় এবং আট বছর আগে রাশিয়ার দখল করে নেয়া ক্রাইমিয়া পুনর্দখল করার চেষ্টা করে-তাহলে পুরো ইউরোপ একটা বড় আকারের সংঘাতে জড়িয়ে যাবে।