শীতের ঘোমটা সরিয়ে এসেছে রৌদ্রোজ্জ্বল দিন। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে উচ্ছলতার কণা। পাতাঝরার দিনে ভালোবাসার ডাক শুনে ঘুমন্ত মনপ্রাণ যেন জেগে উঠেছে। প্রকৃতির এই জাগরণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সরব হয়েছে মানবকুলও। কবি শামসুর রাহমানের ভাষায়, ‘গাছের শাখায় ফুল হাওয়ার সংশ্রবে/যখন নীরবে দিব্যি সানন্দে দুলতে থাকে, পথচারী/অথবা জানালা-ধরে-থাকা যুবতীর চোখ পড়ে/কে জানে কী ছবি সব দোলে কিছুক্ষণ!/ বসন্তের মায়া রয়ে যায় বাস্তবিক নানাভাবে।’ অন্য দিকে প্রেমের কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন, ‘তোমার হাতের মৃদু কড়া-নাড়ার শব্দ শুনবার জন্য/দরোজার সঙ্গে চুম্বকখণ্ডের মতো আমার কর্ণযুগলকে/গেঁথে রেখেছিলাম। কোনো নির্জন মধ্যরাতে তুমি এসে/ডেকে বলবে : এই যে ওঠো, আমি এসেছি, আ-মি।’ কবিতার পঙ্ক্তির মতোই বসন্ত ভালোবাসায় একাকার হয়ে যাওয়ার দিন এসেছে। আজ বসন্ত। আজ ভালোবাসার দিন। উত্তরের শীতল বাতাস এখন বইলেও রোদের ঝলকানি শুরু হয়ে গেছে। আর তাতে ভর করেই বাংলার বিস্তীর্ণ প্রান্তরে আজ পহেলা ফাগুনের দিনে হবে ভালোবাসার জয়গান। হৃদয়ে হৃদয় আর হাতে হাত রেখে আজ যুগলরা একে অপরকে ভালোবাসার উষ্ণ আলিঙ্গন জানিয়ে বলবে ‘হ্যাপি ভ্যালেনটাইনস ডে’।
রোববার থেকেই রাজধানীসহ দেশের নানা জায়গায় শুরু হয়েছে বসন্তের আবহ। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরী আর তরুণ-তরুণীরা বসন্তের সাজে রাঙাতে শুরু করেছে রাজপথ। তবে আজ হবে প্রকৃত অর্থেই পহেলা ফাল্গুন ও ভ্যালেন্টাইনস ডের উদযাপন। রাজধানীসহ সারা দেশ আজ মেতে উঠবে ফাল্গুনী আমেজে। তরুণীরা বাসন্তী রঙের শাড়িতে খোঁপায় হলুদ গাঁদা আর মাথায় ফুলের টায়রার সুষমার সাজাবে নিজেদের। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তরুণরাও ধরা দেবে হলুদ পাঞ্জাবিসমেত একরাশ ফাল্গুনী সাজে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রবীন্দ্র সরোবর, হাতিরঝিল, রমনা পার্ক, চন্দ্রিমা উদ্যান-সর্বত্রই তারুণ্যের জোয়ারে ভাসবে। ঢাকার বাইরে জেলা শহর ও নানা জায়গায় বিশেষ করে ক্যাম্পাস ও বিনোদনকেন্দ্রগুলো থাকবে তরুণদের দখলে। বসন্ত আর ভালোবাসার দিনটিকে বরণ করে নিতে ফুলের দোকান আর মার্কেটের শাড়ি-পাঞ্জাবির দোকানগুলোতে গত কয়েক দিন ধরেই বেশ ভিড়।
দিনটিতে প্রেমিক-প্রেমিকারা পরস্পরের শুভেচ্ছায় সিক্ত হবে। ফুল, কার্ড, চকলেট বিনিময়ের পাশাপাশি কবিতা ও ছন্দমিশ্রিত ক্ষুদে বার্তায় ভরে যাবে মুঠোফোনের ইনবক্স। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে যাবে পরানের গহিনের উষ্ণতা।
আর বসন্ত ও ভালোবাসার দিনের একদিন পরেই শুরু হতে যাচ্ছে অমর একুশে বইমেলা-২০২২। তাই বসন্ত ও ভালোবাসাকে ঘিরে তারুণ্যের এই জোয়ার প্রকৃতপক্ষে চলবে বইমেলার পুরো সময়।
প্রতি বছরের মতো এবারও জাতীয় বসন্ত উৎসব উদ্যাপন পরিদের উদ্যোগে পহেলা বসন্ত উদযাপিত হবে। আজ সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে বাসন্তিরাগ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে উৎসবের শুভ সূচনা হবে। কোভিড-১৯ এর কারণে এবারের উৎসব খুবই সীমিত পরিসরে আয়োজন করা হচ্ছে। সকাল ৭টা ১৫ মিনিট থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত অনুষ্ঠানটি হবে বাংলা একাডেমির উলটো দিকে সোহরাওয়ার্দী পার্কের ভিতর শিল্পকলার উন্মুক্ত মঞ্চে। এবারও উত্তরা, ধানমন্ডি, রবীন্দ্র সরোবর ও পুরান ঢাকার বাহাদুরশাহ পার্কে অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে একক আবৃত্তি করবেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, আহকামউল্লাহ ও নায়লা তারাননুম চৌধুরী কাকলি। একক সঙ্গীত পরিবেশন করবেন শামা রহমান, মহাদেব ঘোষ, অনিমা মুক্তি গমেজ, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি, মাহমুদুল হাসান, ফেরদৌসি কাকলি, নুসরাত বিনতে নূর, নবনী তাজাইদ চৌধুরী, সঞ্জয় কবিরাজ ও এসএম মেজবা। দলীয় সংগীত পরিবেশন করবেন সুরসপ্তক, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, সুরবিহার (শিশু-কিশোর)। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করবে স্বপ্ন বিকাশ কলা কেন্দ্র, সাধনা সংস্কৃতি মন্ডল, নৃত্যম, ধ্রুপদ কলা কেন্দ্র, ভাবনা, ধৃতি নর্তনালয়, স্পন্দন, নৃত্যাক্ষ, কত্থক, ঢাকনৃত্য, নৃক্কন পারফরমিং আর্ট, নবচেতনা, মুদ্রা ক্ল্যাসিক্যাল ডান্স, পুষ্পাঞ্জলি কলা কেন্দ্র। এ ছাড়াও বসন্ত কথন পর্বে অংশগ্রহণ করবেন সংগঠনের সভাপতি স্থপতি সফিউদ্দিন আহমেদ, সভাপতি কাজল দেবনাথ ও সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট।