শেষ হয়েও শেষ হয়নি, বরং তৈরি হয়েছে বিবাদ। যা গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। এমন চিত্রই এখন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির। গত ২৮ জানুয়ারি এ সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুই বছরের জন্য এই সমিতির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। নির্বাচনে সব কিছু ঠিক থাকলেও ‘সাধারণ সম্পাদক’ পদ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এই পদে দুই প্যানেল থেকে লড়েছেন চিত্রনায়িকা নিপুণ ও দুবার একই পদে নির্বাচিত জায়েদ খান।
নির্বাচনে এই পদে জয়ী হন জায়েদ খান। যার ঘোষণা আসে পর দিন ভোরে। আর সেদিনই আপত্তি জানান চিত্রনায়িকা নিপুণ। নানা নাটকীয়তার পর গেল রোববার আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সমিতির নতুন কমিটি শপথগ্রহণ করে। সভাপতির পদে ইলিয়াস কাঞ্চন আর সাধারণ সম্পাদকের পদে বসেন নিপুণ। কিন্তু এতে নাখোশ জায়েদ। আর তাই তিনি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। জায়েদের পক্ষে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছেন তার বিরুদ্ধে নিপুণও আপিল করেছেন। তার আবেদনে আপিল বিভাগ সাধারণ সম্পাদক পদের ওপর স্থিতাবস্থা দিয়েছে।
আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই চেয়ারে কেউ বসতে পারবে না। এখন অনেকের মনেই একটা প্রশ্ন, কী মধু আছে ওই (সাধারণ সম্পাদক পদ) চেয়ারে? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এলো নানা তথ্য। আর সেজন্যই ‘মধুর চেয়ার’ নিয়ে এত হট্টগোল। যা ধরে রাখতে যেতে হয়েছে আদালতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুণী এক নির্মাতা বলেন, ‘সমিতির গুরুত্বপূর্ণ দুটি চেয়ার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। বিগত দুই-তিন বছরের হিসাব কষলে দেখবেন, সাধারণ সম্পাদক স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে সবখানে অংশগ্রহণ করছেন- এটা খুব ভালো একটি দিক। করোনাকালে শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানো, শিল্পীদের জন্য বিভিন্ন স্থানে ছুটে যাওয়া ইত্যাদি। কিন্তু বিতর্ক তৈরি হয়েছে অন্যখানে। এই পদটি ব্যবহার করে সে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করেছে! ‘আমি শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অমুক’ এই পরিচয়টি ব্যবহার করে যে কোনো স্থানে খুব সহজেই যাওয়া যায় ও সবার সঙ্গে ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি করা যায়। তাই পদটির গুরুত্ব অনেক। আর এখানে টাকারও বড় একটা খেলা আছ! সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিল্পী সমিতি। এই মন্ত্রণালয় থেকেও অর্থ বরাদ্দ আসে, যা সমিতির মাধ্যমে শিল্পীদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিগতভাবে (যেমন- ডিপজল, পরী, নিপুণসহ অনেকেই) শিল্পীদের আর্থিক সহযোগিতা করে থাকে। এও সমিতির মাধ্যমে করতে হয়। এখন কত টাকা এলো আর কত টাকা শিল্পীদের জন্য ব্যয় করা হলো, এটা তো অন্য শিল্পীরা জানতেও পারবে না। তা হলে এটা নিশ্চিত এখানে টাকার বড় একটা খেলা আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আসলে আরও অনেক বিষয় আছে, যা খোলাসা করলে আমাদের ওপর সাধারণ জনগণের ঘৃণা জন্মাবে। অনেক নতুন নায়িকা, সহ-অভিনেত্রীকে সমিতির কথা অনুযায়ী চলতে হয়। আর তা না হলে তাদের ওপর নানা রকম অন্যায় করা হয়। কাজ করতে দেওয়া হয় না, বিভিন্নভাবে হেস্তনেস্ত হতে হয়। এসব শিল্পীকে ব্যবহার করে তারা নিজেদের অনেক ফায়দা লুটে নেয়। কদিন আগেই কিন্তু জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী পপি লাইভে এসে অনেক অভিযোগ করেছেন। সোজা কথায় বলতে গেলে, যেহেতু দুই বছরের জন্য এই সমিতির নেতা নির্বাচন করা হয় তাই শিল্পীদের নির্বাচিত নেতাদের কথামতোই চলতে হয়! তা না হলে নানা বিপত্তি ঘটে তার জীবনে।’
চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির এক নেতাও গুণী এই নির্মাতার কথায় একমত পোষণ করেন। নাম গোপন রেখে তিনি বলেন, ‘এ চেয়ারে বসে অনেক কিছুই করা সম্ভব! আপনি চাইলে এই চেয়ারে বসে শিল্পীদের এবং চলচ্চিত্রের উন্নয়নমূলক নানা কাজ করতে পারবেন। আবার নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থেও ব্যবহার করতে পারবেন। যাদের উদ্দেশ্য ভালো কাজ করে দেখিয়ে দেয় আর পরবর্তী নির্বাচনে শিল্পীরাই আবার তাকে ভোটে নির্বাচিত করে। আর যে এই ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করে, শিল্পীরা না চাইলেও সে এই চেয়ারটি ধরে রাখতে চায়। এবার বুঝে নেন, এই চেয়ারের মূল্য।’